ঢাকা,রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আমন চাষে অনিশ্চয়তা ২ হাজার একর জমিতে

আ.লীগ–বিএনপি নেতার হাতে স্লুইস গেটের নিয়ন্ত্রণ পেকুয়ায়

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
পেকুয়ায় পানি নিষ্কাশনের স্লুইস গেটে জাল ফেলে মাছ ধরার জন্য নদী থেকে পানি ঢুকিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে এলাকার দুই হাজার একর জমিতে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা এলাকায় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৫ নং স্লুইস গেট দিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে মাতামুহুরী নদী থেকে পানি ঢোকানো হচ্ছে। ওই ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার বিএনপি নেতা আবু ছালেকসহ চার-পাঁচজন প্রভাবশালী এ ঘটনায় জড়িত।

স্থানীয় কৃষক মোজাফ্ফর আহমদ, মোহাম্মদ আলমগীর ও আতিক উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে জানান, পাউবোর বেড়িবাঁধে স্লুইস গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশনের কথা থাকলেও প্রভাবশালীরা ক্ষমতা খাটিয়ে উল্টো পানি ঢুকিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। এতে মেহেরনামা, নন্দীর পাড়া, বিলাছুরা, চৈরভাঙা, মোরার পাড়া, গোয়াখালী টেক পাড়া, সরকারি ঘেনা, হরিনা ফাঁড়িসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় দুই হাজার একর জমিতে আমন আবাদ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে। প্রভাবশালীরা পাউবোর কাছ থেকে স্লুইস গেটের দেখভাল করার অনুমতি নিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি করে অন্যের জমিতে মাছ চাষ করছে!

তাঁরা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে পানিতে ডুবে থাকায় আমনের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। গত শুক্রবার পেকুয়ার ইউএনও সরেজমিনে স্লুইস গেট দিয়ে নদী থেকে পানি ঢুকানোর দৃশ্য ধারণ করে নেন। এর আগে বিষয়টি গত ১৫ জুলাই উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়। সভায় চকরিয়া ও পেকুয়ার সংসদ সদস্য জাফর আলম এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এমপি বলেন, কোনো অবস্থাতেই স্লুইস গেট দিয়ে নদী থেকে পানি ঢোকানো যাবে না এবং ভেতরের পানি বের হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কেউ কৃষকের ক্ষতি করে পানি ঢোকালে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, প্রতি বর্ষায় একটি প্রভাবশালী মহল যোগসাজশ করে স্লুইস গেটগুলো রক্ষণাবেক্ষণের নামে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত কৃষকদের প্রায় ২ হাজার একর ধানি জমিতে পানি ঢুকিয়ে মাছ চাষ করে। এ অবস্থা প্রায় ৩০ বছর ধরে চলে আসছে।

এ বছর স্থানীয় এমপি জাফর আলমের সহযোগিতায় পেকুয়া সদরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি ১৪টি স্লুইস গেটের নতুন জলকপাট নির্মাণের ব্যবস্থা করেছেন। এতে কৃষকের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে ৩৫ নং স্লুইস গেটটির জলকপাট তুলে দিয়ে নদী থেকে পানি ঢুকানোর কারণে কৃষকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

তবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার স্লুইস গেট দিয়ে পানি ঢুকিয়ে মাছ চাষের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এখনো চাষাবাদ শুরু হয়নি। আমি এ বছরই স্লুইসটি নিয়েছি। আগে স্লুইস গেট যাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল তাঁরা আমার সঙ্গে শত্রুতা করছেন।

স্লুইস গেট রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির সভাপতি ও ইউপি মেম্বার আবু ছালেক বলেন, ‘আমি পদাধিকার বলে কমিটিতে আছি। বিএনপি করি বলে তাঁদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকি। স্লুইস গেট থেকে এ পর্যন্ত এক পোয়া মাছও আমি খাইনি।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পেকুয়া শাখা কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। কেউ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে চাষাবাদ ব্যাহত করলে কমিটি বাতিল করার সুপারিশ করা হবে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাছেম বিল্লাহ চকরিয়া নিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে স্লুইস গেট রক্ষণাবেক্ষণ কমিটিকে পানি বের করে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ এ রকম ঘটনায় জড়িত থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: