কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
বন বিভাগের মালিকানাধীন সংরক্ষিত বনে একাধিক মিনি পিকআপ (ডাম্পার) লাগিয়ে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। ইতিমধ্যেই সংরক্ষিত বনের কয়েক একরেরও বেশি পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। এভাবে সংঘবদ্ধ চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু জনবলের অভাব এবং প্রভাবশালীরা এসব মাটি বিক্রিতে জড়িত থাকার দোহাই দিয়ে এক প্রকার নীরব ভূমিকায় রয়েছেন বন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। যার কারণে সংরক্ষিত বনের পাহাড় কাটা থামছে না।
চকরিয়ার খুটাখালীর পূর্ব নতুন পাড়া এলাকায় এ ধরণের ভয়াবহ পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটছে। বন বিভাগের সংরক্ষিত বনে এভাবে পাহাড় কাটার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, ‘প্রকাশ্যে কয়েক বছর ধরে খুটাখালীতে পাহাড় কাটা চলতে থাকলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর।
সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অপরাধ বন্ধ না করে শুধুমাত্র দায়সারা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। যার কারণে বন–পাহাড় কিছুই থাকছে না।’ দ্রুত এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকা– বন্ধ করা না হলে এবং জড়িত বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জে’র ফুলছড়ি বন বিটের আওতায় থাকা পূর্ব নতুন পাড়া এলাকায় সংরক্ষিত বনে পাহাড় কাটা চলছে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। স্থানীয় প্রভাবশালী জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে একাধিক ডাম্পার দিয়ে পাহাড়ের মাটি বিক্রি করা হয়। স্থানীয়ভাবে কিছু অসাধু বন কর্মকর্তা নেপথ্যে পাহাড় কাটায় সহায়তা করেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। যার কারণে বছরের পর বছর ধরে পাহাড় কাটা হলেও এসব বন্ধ হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, স্থানীয় বন কর্মকর্তারা দায় এড়াতে একটি বন মামলা এবং বিভিন্ন দপ্তরে কয়েকটি চিঠি চালাচালি করেই চুপ থাকেন। এর মধ্যেই চলে সমানতালে পাহাড় কাটা। আর এসব বিষয়ে কথা উঠলেই বলা হয়, জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে, জনবল না থাকায় পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না, জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কিছু করা যাচ্ছে নাসহ বিভিন্ন অজুহাত। এসব কথা বলেই পাহাড় কাটা ও বনভূমি দখলের মতো ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছেন খোদ বন কর্মকর্তারা। কিন্তু স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, সরকারি লোকজন আন্তরিকভাবে চাইলে পারে না এমন কোন কাজ নেই।
স্থানীয় বন কর্মকর্তারা যদি পাহাড় কাটা বন্ধ করতে না পারেন তাহলে তারা খবর দিলেই তো বিশেষ টহল দলের লোকজন গিয়ে মাটিসহ গাড়ি জব্দ করতে পারে। পুলিশসহ বিভিন্ন আইন–শৃংখলা বাহিনীকেও তারা বিষয়টি জানাতে পারেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা চুপ থাকছেন। যার কারণে পাহাড় ও বনভূমি রক্ষা করা যাচ্ছে না। যোগাযোগ করা হলে ঠিক একইভাবে খুটাখালীর পূর্ব নতুন পাড়ায় পাহাড় কাটার বিষয়েও স্থানীয় বন বিট কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেছেন, পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। তারা খুবই প্রভাবশালী। যার কারণে পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে ফুলছড়ি রেঞ্জে’র রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘যারা পাহাড় কাটছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমি এখানে যোগ দিয়েছি মার্চ মাসে। এ বিষয়ে স্থানীয় বিট কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন।’ কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘পাহাড় কাটার ঘটনাটি দেখতে রেঞ্জ কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, পাহাড়টি অনেক আগে কাটা হয়েছে।’
যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক সাইফুল আশ্রাব এ বিষয়ে কিছুই জানেন না উল্লেখ করে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে টিম পাঠানো হয়েছে। যারা পাহাড় কাটার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পাঠকের মতামত: