নিউজ ডেস্ক :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় ছয়টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়ণ কেন্দ্রের সংস্কারে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সুষ্ঠু তদারকি না থাকায় নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে যেনতেনভাবে এ সংস্কারকাজ চালানো হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই এই সংস্কার কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন সমাজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব বাজেটের আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারাদেশের উপকূলীয় এলাকার ৮৪টি আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কারের জন্য ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৮৯ টাকা বরাদ্দ দেয়। এতে পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের বুধামাঝির ঘোনা আশ্রয়কেন্দ্র, উজানটিয়া ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া আশ্রয়কেন্দ্র, পূর্ব উজানটিয়া আশ্রয়কেন্দ্র ও মগনামা ইউনিয়নের শরৎঘোনা আশ্রয়কেন্দ্র, সিকদার পাড়া আশ্রয়কেন্দ্র এবং হারুন মাতবর পাড়া আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কারের কার্যাদেশ পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজল এন্ড ব্রাদার্স ও সীমা কনস্ট্রাকশন। এ ছয়টি আশ্রয়ণ কেন্দ্রের প্রতিটির সংস্কারের জন্য প্রায় ৫ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আমিনুল ইসলামের যোগসাজসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে সংস্কার কাজ চালাচ্ছে। এনিয়ে কেউ কথা বললে, তাদের হুমকি দিচ্ছে সংস্কারকাজে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা।
স্থানীয় বাসিন্দা কাইয়ুম রেজা বলেন, উপকূলীয় এই জনপদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সংস্কারকাজে অনিয়ম করাটা হবে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিপদ ঢেকে আনা। তাই কোনভাবেই অনিয়ম-দুর্নীতির সমন্বয়ে এই কার্যক্রম সম্পন্ন করতে দেওয়া হবেনা।
স্থানীয় রাজনীতিবিদ উজানটিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মহিউদ্দিন হৃদয় বলেন, দিনকয়েক আগে উজানটিয়া ইউনিয়নের ঠাণ্ডারপাড়া ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়ণকেন্দ্রের সংস্কারকাজ শুরু করে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে তাঁরা যেনতেনভাবে কাজ শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এবিষয়ে পিআইও অফিসকে জানানোর পরেও তাঁরা দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এটি সংস্কারে পাঁচ লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দ থাকলেও যথাযথভাবে কাজ করা হচ্ছে না। বেশিরভাগ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট হর্তাকর্তারা।
এবিষয়ে উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে সংস্কারকাজ করার অভিযোগ আমি শুনেছি। বিষয়টি দেখার জন্য আমি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছি।
এদিকে আরেক জনপ্রতিনিধি মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম চকরিয়া নিউজকে বলেন, মগনামার তিনটি আশ্রয়ণকেন্দ্রেই নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংস্কারকাজ না করায় আমি এ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছি।
যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও গুণগত মানসম্পন্ন উপকরণ দিয়ে সংস্কারকাজ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব বলে মনে করেন এই জনপ্রতিনিধি।
সংস্কারকাজে অনিয়মের সত্যতা নিশ্চিত করে পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আমিনুল ইসলাম বলেন, যেখান থেকে অনিয়মের অভিযোগ আসছে সেখানে আমরা পরিদর্শনে যাচ্ছি। গতকালও উজানটিয়ার সংস্কারকাজে আমার অফিসের থেকে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছি। আমি কোন অনিয়মকে ছাড় দেব না।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় অঞ্চল পেকুয়ায় প্রায় ১৫টির মতো আশ্রয়ণকেন্দ্র রয়েছে। তৎমধ্যে অধিকাংশ ব্যবহারের অনুপযোগী। অনেকক্ষেত্রে তীব্র ঝুঁকির শঙ্কা রয়েছে। ফলশ্রুতিতে আশ্রয়ণকেন্দ্র গুলোকে সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ প্রকল্প কার্যক্রমের অনুমোদন দেয়।
পাঠকের মতামত: