ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে যাচ্ছে রেলপথ, হাতির জন্য থাকছে আন্ডারপাস

বিশেষ প্রতিনিধি :: অনুমোদন হলেও ঋণচুক্তি ও ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার জটমুক্ত হতে কেটে গেছে ছয় বছর। তবে আশার কথা হলো, সব জটিলতা কাটিয়ে বর্ষাকালের প্রতিকূলতা ও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেও সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘কক্সবাজার-দোহাজারী-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের’ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পের অধীন পর্যটন নগরী কক্সবাজারে হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির ‘আইকনিক স্টেশন’।

• গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত অগ্রগতি ৫৯ শতাংশ
• হাতির চলাচলের জন্য থাকছে আন্ডারপাস
• কক্সবাজারে হবে আইকনিক স্টেশন
• ২০২২ সালে ঢাকা-কক্সবাজারে চলবে ট্রেন
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে শ্রমিকদের প্রকল্প এলাকায় রেখেই কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দোহাজারীতে তিন কিলোমিটার সিগন্যাল তার বসানো হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে রামুর পানির ছড়া বাজার হয়ে কক্সবাজারমুখী নকশা ধরে রেলপথ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে মাটির উন্নয়নের কাজ চলছে। কোথাও চলছে সেতু নির্মাণ। প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে, গত ৩১ মে পর্যন্ত কাজ এগিয়েছে ৫৯ শতাংশ। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পের দোহাজারী-কক্সবাজার অংশের শতভাগ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পর্যটন নগরীর সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ ২০২২ সালের মধ্যে স্থাপিত হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলবে পর্যটকবাহী ট্রেন।

২০২২ সালে ঢাকা-কক্সবাজারে চলবে ট্রেন, আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা
প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে, গত ৩১ মে পর্যন্ত কাজ এগিয়েছে ৫৯ শতাংশ। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পের দোহাজারী-কক্সবাজার অংশের শতভাগ কাজ শেষ করা সম্ভব
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এতে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক- এডিবি।

২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এ রেলপথ নির্মাণ হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডোরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। এছাড়া কক্সবাজার থেকে কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামালসহ বিভিন্ন বনজ ও কৃষিজাত পণ্য পরিবহন সহজ হবে।

পর্যটন নগরীর সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ ২০২২ সালের মধ্যে স্থাপিত হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলবে পর্যটকবাহী ট্রেন
প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান প্রকল্পের উন্নয়ন ছক- ডিপিপি ও অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে ১০০ দশমিক ৮৩১ কিলোমিটার রেলপথ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণ করা হবে রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭২৫ কিলোমিটার রেলপথ। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৩৯টি বড় সেতু, ২২৩টি ছোট সেতু ও কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। হাতি চলাচলের জন্য থাকবে আন্ডারপাস। নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজারে। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি) ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।করোনার কারণে কিছুটা থমকে গেলেও এখন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এ প্রকল্পের কাজ
২০১৮ সালের ১ জুলাই এ অংশের ভৌত কাজ শুরু হয়। বর্তমানে ১৯টি সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। ১১৯টি কালভার্টের মধ্যে ২৪টির কাজ শেষ হয়েছে। ৪৯ কিলোমিটারের মাটির কাজ চলছে। দোহাজারী, চকরিয়া ও হারবাংয়ে রেলস্টেশন ভবনের নির্মাণকাজ চলছে।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা প্রথম পর্যায়ের অন্য অংশ চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন লিমিটেড (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এ অংশে ভৌত কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ মার্চ। এ অংশে ২০টি সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। এছাড়া ১০৯টি কালভার্টের মধ্যে ৫৮টির কাজ শেষ হয়েছে। ৫০ কিলোমিটারের মাটির কাজ চলছে। এ অংশের জন্য মালয়েশিয়া থেকে ব্যালাস্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। চীন থেকে আনা হয়েছে রেল। ডুলহাজরা, ইসলামাবাদ ও কক্সবাজারে রেলস্টেশন ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে হবে আইকনিক স্টেশন।

প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৪৭৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ৯৯০ কোটি টাকা। এ পর্যায়ে ১৩৯১ একর ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে।

ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের অর্থ পুরোপুরি পরিশোধ না করাও কাজ বিলম্বের অন্যতম কারণ। ক্ষতিপূরণের অর্থ না পাওয়ায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কয়েকটি স্থানে ঠিকাদারদের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে
প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির গত ২ জুনের সভার জন্য তৈরি করা কার্যপত্র থেকে জানা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কিছু প্রতিকূলতা এখনও দূর করা যায়নি। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত তিনটি সরকারি সংস্থার পরিষেবা লাইন স্থানান্তর না হওয়া এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের অর্থ পুরোপুরি পরিশোধ না করা অন্যতম। ক্ষতিপূরণের অর্থ না পাওয়ায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কয়েকটি স্থানে ঠিকাদারদের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে কার্যপত্র থেকে জানা যায়।

এছাড়া করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ায় গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে কয়েক মাস ভৌত কাজ বন্ধ ছিল। পরে তা আবার শুরু হয়। কিছু স্থানে জমি হস্তান্তর বিলম্ব হয়। চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ৯২ শতাংশ মানুষ, সাতকানিয়ায় ৮৭ শতাংশ, লোহাগাড়ায় ৮৮ শতাংশ এবং কক্সবাজার জেলা সদরে ৭৮ শতাংশ, রামুতে ৭৭ শতাংশ ও চকরিয়ায় ৬৭ শতাংশ মানুষ ক্ষতিপূরণের অর্থ পেয়েছেন।

পাঠকের মতামত: