ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

বদলে যাবে দক্ষিণের মহাসড়ক ব্যবস্থা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বাইপাস সড়ক নির্মাণের মহাপরিকল্পনা

চকরিয়া নিউজ ডেস্ক:: বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। যানজটমুক্ত বাধাহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সড়কের পাঁচটি স্থানে বাইপাস সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এলাকাগুলো হলো, পটিয়া, চন্দনাইশের দোহাজারি, সাতকানিয়ার কেরানীহাট, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ও চকরিয়া। এরমধ্যে কেরানীহাট এলাকায় বাইপাসের পরিবর্তে ফ্লাইওভার নির্মাণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে বিস্তারিত জরিপের (ডিটেইল সার্ভে) কাজ চলছে।

দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ চকরিয়া নিউজকে জানান, পর্যটন এলাকা কক্সবাজার, মহেশখালীর মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করতে এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রতিটি বাইপাসের প্রশস্ত ৩’শ ফুট হবে। কেরানীহাট এলাকায় যদি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয় সেক্ষেত্রে সেখানে ফ্লাইওভারের প্রশস্ততা হবে ১৯৬ ফুট।
যেসব স্থানে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে তা হলো-পটিয়া বাইপাস সড়ক বর্ধিতকরণ, চন্দনাইশের দোহাজারী, সাতকানিয়ার কেরানীহাট, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ, ও চকরিয়া বাইপাস সড়ক।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
এরমধ্যে সাতকানিয়ার কেরানীহাট এলাকায় বাইপাস সড়ক নির্মাণ করতে জাইকা আগ্রহী হলেও সেখানে ফ্লাইওভার নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছে সড়ক বিভাগ। সেখানে ফ্লাইওভার নির্মাণের সম্ভাবনা রয়েছে।

সড়ক বিভাগ সুত্রে জানা যায়, পটিয়া ইন্দ্রপুল এলাকা থেকে কমলমুন্সির হাট পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার বাইপাস সড়ক ইতিমধ্যে ৩৮ দশমিক ২২ একর জমি নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর পটিয়া বাইপাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়কটিতে ইতিমধ্যে যানবাহন চলাচল করছে। নতুন করে আরো ১১৪ দশমিক জমি অধিগ্রহণ করে বাইপাসটি ৩’শ ফুট প্রশস্ত করা হবে।

চন্দনাইশের দেওয়ানহাট থেকে দোহাজারী রাজমহল কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশে ৪ দশমিক ৭০ কিলোমিটার দোহাজারি বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ সড়ক নির্মাণে ১০৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।

সাতকানিয়ার কেরানীহাট এলাকায় নতুন করে একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ করার কথা রয়েছে। জাইকা বাইপাস নির্মাণে আগ্রহী হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ সেখানে ফ্লাইওভার নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করছে।

বাইপাস কিংবা ফ্লাইওভার নির্মাণের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সেখানে দুটি বিষয় মাথায় রেখে কাজ চলছে। তবে ফ্লাইওভার নির্মাণের সম্ভাবনা বেশি।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের কেওচিয়া ইউনিয়নের নয়াখালের মুখ এলাকা থেকে ছদাহা আফজলনগর এলাকা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বাইপাস নির্মাণের পক্ষে দাতা সংস্থা জাইকা। তবে সড়ক বিভাগ নয়াখাল থেকে কেওচিয়ার নয়াপাড়া এলাকা পর্যন্ত ফ্লাইওভারের পক্ষে মতামত দিয়েছেন।

নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ আরো জানান, প্রস্থ ৩০০ ফুটের চার কিলোমিটার বাইপাসে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে প্রায় ৮০ একরের বেশি। নয়াখালের মুখ থেকে সাতকানিয়ার রাস্তার মাথার দক্ষিনে নয়াপাড়া পর্যন্ত ১৯৬ ফুট প্রশস্ত চার কিলোমিটার ফ্লাইওভারে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে মাত্র চার একর। এতে খরচ অনেক কমে আসবে। বিষয়টি এখনো বিবেচনাধীন রয়েছে।

লোহাগাড়ার উপজেলার রাজঘাটা রূপসী ক্লাব থেকে সড়কের পুর্বপাশ হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান কলেজ সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার লোহাগাড়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ সড়ক নির্মাণে ৮৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

একইভাবে চকরিয়া সরকারি কলেজ থেকে সড়কের পুর্বপাশে ৭ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হবে। এতে ১৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।

প্রকৌশলী সুমন সিংহ চকরিয়া নিউজকে জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের পাঁচটি যানজটযুক্ত এলাকা চিহ্নিত করে এসব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসবস্থানে অনেকসময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগেই থাকে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এসব বাইপাস নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে যানজটমুক্ত সড়কে নির্বিঘ্নে যান চলাচল করতে পারবে।

প্রকৌশলী সুমন বলেন, পাঁচটি স্থান ছাড়া পটিয়ার আমজুর হাটে প্রায় সময় যানজট লেগেই থাকে। সেখানে ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। প্রস্তাবটি জাইকার কাছে বিবেচনাধীন রয়েছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের আঞ্চলিক যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সেতু প্রতিস্থাপন, ইন্টারসেকশন, বাজার, লেভেল ক্রসিং, রিজিড পেভমেন্ট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কের চন্দনাইশ গাছবাড়িয়া বরগুনী খাল ব্রিজ, পটিয়া ইন্দ্রপুল ব্রিজ, দোহাজারী শঙ্খ নদীর ব্রিজ ও চকরিয়া মাতামুহুরী নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। চারটি ব্রিজ নির্মাণে খরচ পড়ছে ৭’শ কোটি টাকা।

জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ক্রস বর্ডার নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সিবিআরএনআইপি) প্যাকেজ সি-এর আওতায় ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে।

এছাড়া ঢাকা থেকে কুমিল্লা (ময়নামতি) ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উন্নয়ন ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে। শিকলবাহা ক্রসিং থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫৯ কি.মি. এবং কক্সবাজার লিঙ্ক রোড থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৭৬ কি.মি.সহ মোট ২৩৫ কি.মি.সড়ক চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এডিবির অর্থায়নে সুইডিশ কনসালট্যান্ট নামে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান উন্নীতকরণ কাজের জরিপ করেছে।

পাঠকের মতামত: