ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পুলিশ হেফাজতে দোকান কর্মচারীর মৃত্যু

পরিবারের দাবি পিটিয়ে হত্যা ।। পুলিশ বলছে হৃদরোগে ।। ৩ সদস্য প্রত্যাহার

নিউজ ডেস্ক ::  নগরীর টেরিবাজারে এক দোকান কর্মচারীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তারা বলছে, ওই ব্যক্তির আগে থেকেই হৃদরোগ ছিল। এজন্য তিনি ভারতে চিকিৎসাও নিচ্ছিলেন। গতকাল সন্ধ্যায় বক্সিরহাট পুলিশ বিটে এই ঘটনা ঘটে। পরে এই ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন এবং ৩ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যায় টেরিবাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কাপড় নিয়ে যাওয়ার সময় গিরিধারী চৌধুরী (৫৫) নামে ওই কর্মচারীর সাথে নিরাপত্তারক্ষীর বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ এসে তাকে বক্সিরহাট বিটে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ফাঁড়ির এএসআই কামরুল হাসান তাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ দোকানের অপর কর্মচারীর। তবে নিহতের স্ত্রী সুচরিতা চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমি মুখ খুলতে পারব না।
ঘটনার বিষয়ে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নিরাপত্তারক্ষী মো. মাসুদুল আলম বলেন, ইফতারের আগমুহূর্তে গিরিধারী চৌধুরী ও অপর একজন ব্যক্তি রিকশায় করে দুই বস্তা কাপড় নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে মার্কেট বন্ধ অবস্থায় কাপড় নেয়া যাবে না বলে জানানো হয়। এরমধ্যে আমি একটি বস্তা রিকশা থেকে নামিয়ে ফেলি। তার সাথে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে পুলিশ আসে। তখন পুলিশ এসে গিরিধারী চৌধুরীকে বঙিরহাট বিটে নিয়ে যায়। পুলিশ তাকে তার মালিকের কাছে ফোন করতে বলে। এক পর্যায়ে তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যান। এ সময় তিনি পানি খেতে চাইলে তাকে পানি দেয়া হয়। পরে তাকে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই।
প্রার্থনা বস্ত্রালয়ের প্রত্যক্ষদর্শী অপর কর্মচারী জানান, এপ্রিল মাসের বেতনের জন্য মালিকের নির্দেশে হিসাব তৈরি করতে তারা দোকান খুলেছিলেন। কিন্তু পুলিশ গিয়ে তাদের বিটে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পর টহল পুলিশের প্রধান এএসআই কামরুল হাসান গিরিধারীকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এসময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে বঙিরহাট পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই কামরুল হাসান বলেন, আন্দরকিল্লা থেকে বঙিরহাট পর্যন্ত লকডাউন করা কারণে আমরা আশপাশে টহল দিচ্ছিলাম। এরমধ্যে খেয়াল করলাম, একজন লোক দুই বস্তা কাপড়সহ টেরিবাজার সিকিউরিটি গার্ডের সাথে তর্কাতর্কি করছেন। এসময় আমি তাদের বিটে নিয়ে আসি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি একবার নিজেকে মালিক, একবার কর্মচারী পরিচয় দিচ্ছিলেন। এরপর তাকে তাঁর মালিককে ফোন করতে বলি। এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠিয়ে দিই। সেখানে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ফাঁড়িতে তার গায়ে হাত তোলা হয়নি।
এদিকে মারধরের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এএসআই কামরুল বলেন, এটি এক মাস আগের ঘটনা। সে সময়ের একটি সিসিটিভি ফুটেজ এখনকার বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে ব্যক্তিকে সেই সময় মারধর করেছিলাম, তাকে থানায় নিয়ে গিয়েছিলাম। পরে তাকে কোর্টেও চালান দিয়েছি।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান বলেন, অভিযোগ শোনার সাথে সাথে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। তার পরিবারের কয়েকজনের সাথে কথা বলেছি। তার আগেও হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এবং ব্লাড প্রেসারের সমস্যা ছিল। এ ঘটনায় আমি পুলিশের খুব একটা ভূমিকা পাইনি। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, তাই সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বঙিরহাট পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই কামরুল হাসান ও দুই কনস্টেবলসহ ৩ জনকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে যদি এর সত্যতা পাই তাহলে পুলিশ হোক আর যেই হোক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বর্তমানে লকডাউনের কারণে মার্কেট বন্ধ রয়েছে। তবে আজ (গতকাল) ইফতারের আগে মোহাদ্দিস মার্কেটের প্রার্থনা বস্ত্রালয়ের দু্‌ই কর্মচারীকে বস্তায় করে কাপড় নিয়ে যাওয়ার সময় সিকিউরিটি গার্ডরা তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করে। যেহেতু দোকান বন্ধ, তাই তারা চোরাই পণ্য মনে করেছিল। এক পর্যায়ে পুলিশ এসে তাদেরকে পুলিশ বিটে নিয়ে যায়। এরপর সেখানে গিরিধারী চৌধুরী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মারধরের যে অভিযোগটি উঠেছে সেটি সত্য নয়। পুলিশ কেবল বঙিরবিটে নিয়ে গিরিধারী চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তার মালিককে ফোন করতে বলেছিল। এরমধ্যেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা পরিবারের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, তাঁর আগেই হার্টের অসুখ ছিল। তিনি বেশ কয়েকবার ভারতে গিয়ে চিকিৎসাও নিয়েছেন।
এদিকে গিরিধারী চৌধুরীর মৃত্যুতে চমেক হাসপাতালে স্বজনদের আতর্নাদে আশাপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। হাসপাতালে সিএমপির কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দেখে মানুষের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। হাসপাতাল থেকেই নিহতের ছেলেকে পুলিশ ভ্যানে করে থানায় নিয়ে যেতে দেখা যায়। অপরদিকে এ ঘটনায় টেরিবাজারের কর্মচারীরা দোকানের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন এবং জড়িত পুলিশ কর্মকর্তার বিচার দাবি করেন। তথ্য সুত্র: দৈনিক আজাদী

পাঠকের মতামত: