ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

যুবদল নেতার কবরের ওপর লাঠিপেটা করে উল্লাস!

যুগান্তর :

আওয়ামী লীগের এক নেতার ইন্ধনে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার সাভার গ্রামে যুবদল নেতার কবরে তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাভার গ্রামের ৮০ বছরের এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, আগে শুনেছি কাবলিওয়ালারা বিক্রীত পণ্যের দাম না পেলে, মৃত ক্রেতার কবরে লাঠিপেটা করত। এখন সাভার গ্রামের ঘটনা কাবলিওয়ালাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে।
১৪ এপ্রিল সাভার গ্রামের একমাত্র কবরস্থান পরিষ্কার করার নামে সন্ত্রাসীরা ফরিদপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মরহুম সাইফুল ইসলাম লিটন, তার বাবা ফরিদপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মাস্টার, লিটনের ভাই অ্যাডভোকেট জার্জিস হোসেন, চাচাত ভাই জনতা ব্যাংকের রিজিওনাল ম্যানেজার নুরুজ্জামান খুরু, চাচি রাবেয়া খাতুনের কবর থেকে নেমপ্লেট ছুড়ে ফেলে দেয়ে।

এছাড়া কবরের বাঁশের ঘেরা ও সিমেন্টের খুঁটি উপড়ে ফেলে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়। আর যুবদলের সাবেক নেতা লিটনের কবরের ওপর লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বাড়ির নিজ বাড়ির কাছে মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী বৈশাখীর সামনে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে যুবদল নেতা লিটনকে হত্যা করে। আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে আসামিরা হত্যা মামলার সাক্ষী ও স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালায়। পাশাপাশি হত্যার হুমকি দিয়ে তাদের গ্রামছাড়া করে।

প্রায় দুই বছর ধরে সাভার গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার সন্ত্রাসীদের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। ভয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে নিহত লিটনের বৃদ্ধা মা, লিটনের বিধবা স্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে সঙ্গীতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত লিটনের শিশুকন্যা বৈশাখী, লিটনের ভাই সাইফুল আজম, ভাতিজা ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ বাবুলসহ অন্যান্য সাক্ষী ও স্বজনরা।

গোরস্থান কমিটির সভাপতি ও লিটনের ভাই সাইফুল আজম দুঃখ করে জানান, শুধুমাত্র যুবদল নেতা হওয়ার অপরাধে লিটন হত্যার আসামিরা গোরস্থান পরিষ্কার করার নামে আক্রোশবশত তার পরিবারের স্মৃতিচিহ্ন মুছে দিতে এ কাজ করেছে। ফরিদপুরের একজন জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার ইন্ধনে তারা এই জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজ করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

লিটনের চাচাতো ভাই ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানা রেহান বলেন, এই গোরস্থানে তার পরিবার দুই বিঘা জমি দান করেছে। গোরস্থান কমিটির অনুমতিক্রমে কবরগুলো সংরক্ষণের জন্য নেমপ্লেট লাগানো এবং বাঁশখুঁটি দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে লিটন হত্যার আসামিরা মৃত ব্যক্তিদের অপমান করেছে ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।

তিনি জানান, সন্ত্রাসীরা সম্মিলিতভাবে লিটনের কবরের ওপর বাঁশের লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করে সমস্বরে উল্লাস করে ও জোরে জোরে বলতে থাকে, হত্যা করার পরেও তুই অশান্তি সৃষ্টি করেছিস।

এই আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, এ ব্যাপারে ফরিদপুর থানা পুলিশ প্রশাসন বরাবরই হত্যাকারীদের পক্ষে কাজ করে আসছে বলেই তারা এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পুরো সাভার গ্রামজুড়ে এখন চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ত্রাসের রাজত্ব চললেও দেখার কেউ নেই।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর থানার ওসি শরিফুল ইসলাম এর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। বিয়ষটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: