ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫

ট্রাম্পের জয়ে একদিনে লোকসান ৩ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা

image_169266_0নিউজ ডেস্ক  :::

ওয়াশিংটন: রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন মুল্লুক জয়ে অনেক তাবড় ধনকুবের মাথায় হাত দিয়েছেন। এক দিনেই এসব ধনকুবের খুইয়েছেন ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ট্রাম্পের জয়ের খবর চাউর হবার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজার ও মুদ্রাবাজারে বড় ধরনের দরপতনের ঘটনা ঘটে। এই পতনেই চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন এসব তুখোড় ধনকুবেররা। টাকার হিসেবে এদিন তাদের লোকসান হয়েছে ৩ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা (১ ডলার =৮০ টাকা ধরে)।
শীর্ষ ধনীদের সম্পদ নিয়ে ব্লুমবার্গের ইনডেক্স বিশ্লেষণে এমন তথ্যই মিলেছে।

ট্রাম্পের বিজয়ের পর বুধবার সকাল ১০টায় (সে দেশের স্থানীয় সময়) নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের এস অ্যান্ড পি সূচকের পতন হয়েছে ১.১ শতাংশ। নিউ ইয়র্কের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ট্রাম্প আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন-এমন সংবাদে সারা বিশ্বের শেয়ার পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে উঠে।
কারণ দানের পাশাটা তো উল্টে গেছে। হিসেব কেন উল্টাবে না!
ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় লাভ করবেন এমন প্রত্যাশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। এ কারণে আগের সপ্তাহে শেয়ারবাজার ছিল চাঙ্গা। ফলে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সম্পদ বেড়েছিল ৫৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু নির্বাচনে হিলারির পরাজয়ে সে সম্পদ কমে গিয়ে উল্টো তাদের ৪১ বিলিয়ন ডলার লোকসান হয়েছে।

হিলারির পরাজয়ে সবচেয়ে বেশি সম্পদ হারিয়েছেন মেক্সিকোর শীর্ষ ধনী ব্যক্তি কার্লোস স্লিম। তার সম্পদ কমেছে ৫.১ বিলিয়ন ডলার। কার্লোস স্লিম বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। ট্রাম্পের জয়ের খবরে ডলারের বিপরীতে মেক্সিকো মুদ্রা পেসোর ১২ শতাংশ দরপতন ঘটে। এতে তার সম্পদের পরিমাণ ৯.২ শতাংশ কমে গেছে।
আর মেক্সিকোর শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তির সম্মিলিতভাবে সম্পদ কমেছে ৬.৫ বিলিয়ন ডলার। স্লিমের পর মেক্সিকোর সবচেয়ে বেশি সম্পদ হারিয়েছেন ইভা গোন্ডা রিভেরা। দেশটির চতুর্থ ধনী এ ব্যক্তি লোকসান গুনেছেন ৪৮৭ মিলিয়ন ডলার। দেশটির ৫ম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি লরেঞ্জো সার্ভিজি সেন্ড্রার লোকসানের পরিমাণ ৩৯৭ মিলিয়ন ডলার। বেশি ভোট পেয়েও হারলেন হিলারি

যুক্তরাষ্ট্রে যদি সবচেয়ে বেশি প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নিয়ম থাকতো, তাহলে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতেন হিলারি ক্লিনটন।
কারণ নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন তিনি। হিলারি দুই লাখের বেশি ভোট পেয়েছেন। তা সত্ত্বেও দেশটির নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণেই তিনি হেরে গেছেন।
নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন মোট ভোট পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৫ ভোট। ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০৬ভোট।

কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৭৯টি, আর হিলারির পক্ষে গেছে ২২৮টি। মূলত এসব ভোটের মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আর ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫৩৮জন ইলেক্টোরাল বা নির্বাচককে নিয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ হয়। একেকটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে সেখানে ইলেক্টোরাল সংখ্যা থাকে। ভোটাররা যখন ভোট দেন, তারা ডোনাল্ড ট্রাম্প বা হিলারি ক্লিনটন বা অন্য কাউকে ভোট দিলেও আসলে একেকজন ইলেক্টোরালকে বাছাই করেন।

নেব্রাস্কা আর মেইন অঙ্গরাজ্য ছাড়া বাকি সব রাজ্যে যে প্রার্থী বেশি ভোট পান, তাকে ওই রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল ভোট দিয়ে দেয়া হয়। তবে ওই দুইটি রাজ্যে প্রার্থীদের পাওয়া সংখ্যা অনুযায়ী বাকি ভোট ভাগ হয়।

এ কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভোট কিছুটা কম হলেও, তার ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা হয়েছে বেশি। কারণ তিনি এমন অনেকগুলো রাজ্যে ভালো করেছেন, যেখানকার সব ইলেক্টোরাল ভোট তার পক্ষেই যোগ হয়েছে।
তবে এবারই প্রথম নয়। এ নিয়ে পঞ্চম বার যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এরকম ঘটনা ঘটলো।

সর্বশেষ একই ঘটনা ঘটেছিল ২০০০ সালের নির্বাচনে। সেবার ডেমোক্রেট প্রার্থী আল গোর পেয়েছিলেন ৫ কোটি ১০ লাখ ৯ হাজার ৮১০ ভোট। কিন্তু তার চেয়ে প্রায় ছয় লাখ কম ভোট পেয়েও রিপাবলিকান জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার মোট ভোট ছিল ৫ কোটি ৪ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি।
ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির ভোটাভুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্ক আছে। কয়েক দফায় এটি বাতিলের জন্য কংগ্রেসে তোলাও হয়েছিল। কিন্তু সামান্য ব্যবধানে প্রতিবারই প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে গেছে।

পাঠকের মতামত: