ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে সাবেক ক্রিকেটারদের মিলনমেলা

কক্সবাজার প্রতিনিধি :
এক পাশে নীল সমুদ্র সৈকত, অন্য পাশে সবুজ পাহাড়, মাঝখানে স্টেডিয়াম। পুরো চিত্রটাই চিত্রকরদের সবচেযে আরাধ্য ক্যানভাস শিল্পীর তুলিতে রাঙানো এক সময়ের শিল্পকর্ম এখন ফুটে উঠেছে বাস্তবে।
নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজারে যেভাবে শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম গড়ে উঠেছে তা শুধু মুগ্ধতাই ছড়াবে না, ক্রিকেটের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসারও জন্ম দেবে। সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে ব্যাট-বলের মধুর ঠুকঠাক শব্দ। অন্য রকম এক রোমাঞ্চ। সেই রোমাঞ্চ ছড়াতে কক্সবাজারে হাজির বাংলাদেশের প্রাক্তন ক্রিকেটারররা, যাদের হাত ধরে আজকের ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট’।
আকরাম খান, নাঈমুর রহমান দূর্জয়, খালেদ মাহমুদ সুজন, হাবিবুল বাশার সুমন, খালেদ মাসুদ পাইলট দীর্ঘদিন জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলেছেন। জাতীয় দলের বাইরে ঘরোয়া ক্রিকেটে কখনো কখনো তাঁরা ছিলেন একে অপরের প্রতিদ্বন্দি¦, আবার কখনো সতীর্থ। বিভাগীয় দল আলাদা হওয়ায় মুখোমুখি লড়াই বেশি হয়ে তাঁদের। অনেক বছর পর আবারও ময়দানী যুদ্ধে নামছেন তাঁরা। ব্যাট-বল নিয়ে মাঠে নামার সেই সুযোগটা তৈরী করে দিয়েছে ‘ওয়ালটন মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভাল।’ জাতীয় দল ও ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রাক্তন ক্রিকেটারদের নিয়ে বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে যাচ্ছে এ প্রতিযোগিতা।
প্রতিযোগিতার পাশাপাশি তাঁদের জন্যে এটা এক উৎসবের মঞ্চ, এক মিলনমেলা। তবুও ৬ দলের এ টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দ¦ীতার আভাস দিয়েছেন ৫ দলের অধিনায়ক। গতকাল বুধবার বিকেলে কক্সবাজার শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে ৫ দলের অধিনায়ক প্রত্যেকেই লড়াকু মনোভাব দেখিয়েছেন।
জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ও টুর্নামেন্টে ইস্পাহানি চিটাগং মাস্টার্সের নেতৃত্বে থাকা আকরাম খান বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন পর আমরা অনেক খেলোয়াড় একসঙ্গে হয়েছি। এটা উপভোগ ও উৎসবের বড় একটা জায়গা। কিন্তু মাঠে নামলে সেই চিন্তাটা থাকবে না। প্রত্যেকেই চাইবে তার দলই যেন জিতে। সেভাবেই কিন্তু সবাই খেলবে। ব্যাটসম্যান রান পেতে চাইবে, বোলররা উইকেট চাইবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘উপভোগ করার অনেক জায়গা আছে। যেমন ১৬ ওভারের ম্যাচ। যদি ১৬ ওভার খেলা না হয়, তাহলে কমাতে কমাতে শেষপর্যন্ত ছয় ওভারের ম্যাচ খেলবো। তাও যদি না হয় প্রয়োজনে আমরা ফুটবল খেলবো।’
জাজ ভূঁইয়া ঢাকা ডিভিশন মাস্টার্সের নাইমুর রহমান দূর্জয় বলেছেন,‘আমরা আবার একসঙ্গে হচ্ছি। একসঙ্গে হওয়াটাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সবাই বাস্তব জীবনে ব্যস্ত। এই ধরণের উপলক্ষ্য ছাড়া দেখা হওয়ার সুযোগ কম থাকে। এটা হওয়াতে আবার আমাদের দেখা সাক্ষাৎ হবে। একত্রিত হওয়ার মূল উদ্দেশ্য খেলা। খেলাটা অবশ্যই ভালো হবে।’
জেমকন গ্রুপ খুলনা মাস্টার্সের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন বলেছেন,‘এ কার্নিভালের মাধ্যমে আমরা সবাই একসঙ্গে হতে পেরেছি। শুধু দেখা না সবার সঙ্গে সময় কাটানোর অনেক বড় সুযোগ এটি। আমরা ক্রিকেটার ছিলাম, আবার ক্রিকেটে ফিরছি। অবশ্যই ভালো কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।’
তাঁদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন খালেদ মাসুদ পাইলট। রেনেসা রাজশাহী মাস্টার্সের অধিনায়ক বললেন,‘এ উৎসবের মাধ্যমে সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এ উৎসবের বড় প্রাপ্তি এটাই।’
জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ও বর্তমান ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন,‘আমরা দীর্ঘদিন পর মিলিত হয়েছি ক্রিকেট খেলাটাইকেই কেন্দ্র করে। আমার বিশ্বাস আমাদের পর  বর্তমান যারা খেলছেন তাঁরাও পরবর্তীতে এই কার্নিভালের ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে।’
ক্রিকেট ও উৎসবের উপলক্ষ্য ‘ওয়ালটন ক্রিকেট কার্নিভাল।’ কিন্তু এর থেকেও বড় কিছু করতে যাচ্ছে আয়োজকরা। টুর্নামেন্ট থেকে প্রাপ্ত আয়ের অর্থ দিয়ে ফান্ড তৈরী করবে আয়োজকরা। ভবিষ্যতে কোনো ক্রিকেটারের যেকোনো দূর্ঘটনায় ফান্ড থেকে আর্থিক সাহায্য করবে তাঁরা।
টুর্নামেন্টের আরেক দল লংকা বাংলা অলস্টারস মাস্টার্সের অধিনায়ক সেলিম সাহেদ সংবাদ সম্মেলনে আসেননি। তাঁর পরিবর্তে দলের ক্রিকেটার এহসানুল হক সেজানও টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দ¦ীতার আভাস দিয়েছেন।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমূদ্র সৈকতের শহরেই প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটারদের নেতৃত্বে ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে বসছে এবারের আসর। ৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার পর্ব শেষে টুর্নামেন্টের ফাইনাল মিরপুর শের-ই-বাংলায় অনুষ্ঠিত হবে। ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় কৃত্রিম আলোয় শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার মূল স্টেডিয়ামে (এক নম্বর মাঠ) মুখোমুখি হবে খালেদ মাসুদ পাইলটের রেনেসা রাজশাহী মাস্টার্স ও খালেদ মাহমুদ সুজনের কনফিডেন্স গ্রুপ ঢাকা মেট্রো মাস্টার্স। আউটার স্টেডিয়ামে (দুই নম্বর মাঠ) খেলবে নাঈমুর রহমান দূর্জয়ের জাজ ভূঁইয়া ঢাকা ডিভিশন মাস্টার্স ও আকরাম খানের ইস্পাহানি চিটাগং মাস্টার্স (গ্রাউন্ড-২)। ১৮ ওভারের প্রতিটি ম্যাচ দুপুর ২টায় শুরু হবে। তবে বৃষ্টির বাগড়ায় ভোগান্তিতে পরলে ১২ ওভার কিংবা ৮ ওভার খেলা হবে। যদি ৮ ওভার না হয় তাহলে ৬ ওভার খেলা হবে। এটা না হলেও সুপার ওভারে ম্যাচের ফল নিষ্পত্তি হবে।
এক সময়ের মাঠ কাঁপানো ক্রিকেটাররা আবারও মাঠে নামছেন; এটা ভেবেই রোমাঞ্চিত ক্রিকেটপ্রেমিরা। কিন্তু তাঁদের জন্যে রয়েছে দুঃসংবাদ। স্টেডিয়ামের অবকাঠামো পূর্ণাঙ্গরূপ না পাওয়ায় শুধুমাত্র আমন্ত্রীত অতিথীরাই মাঠে প্রবেশের অনুমতি পাবেন।

পাঠকের মতামত: