শনিবার (১ মার্চ) সকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আদেশ দেন।
জেলা প্রশসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
হত্যা মামলা, নারী ও শিশু নির্যাতন নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত যৌন নিপীড়ন মামলা এবং চাঁদাবাজি-অপহরন-ডাকাতিসহ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারন আইনে দায়েরকৃত পৃথক তিনটি মামলার আসামী চকরিয়ার এই ওসির বিরুদ্ধে কয়েকদিন আগে চকরিয়ায় ঝাঁটা-জুতা মিছিলসহ মানববন্ধন করেন হাজারো নারী পূরুষ। কিন্তু এরপরেও বহাল তবিয়তে রয়ে গিয়েছেন চকরিয়া থানার ওসি।উপস্থিত সাংবাদিকরা এসব বিষয় তুলে ধরলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উপরোক্ত কথার সত্যতা জানতে চান কক্সবাজার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মোঃ শাকিল আহমেদ, (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) এর কাছে। পুলিশ সুপার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামের ডিআইজিকে ফোন করেন এবং ওসিকে আজকের দিনের মধ্যে (শনিবার) প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন।
ভূক্তভোগীরা জানান, ওসি মনজুরের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এসব মামলা সিআইডি ও পুলিশ তদন্ত করছে। অন্য একটি মামলা বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সূত্রে প্রকাশ, ওসি মনজুরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগপ্রীতি ও বিরোধী মত দমনের অভিযোগ অনেক পুরনো।
ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের বোয়ালখালী গ্রামের বাসিন্দা আকতার হোছাইন বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ছিলেন তৎকালীন ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মনজুর কাদের ভূঁইয়া। বিগত ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে মাওলানা দেলাওয়ার সাঈদীর বিরুদ্ধে সাজানো রায়ের প্রতিবাদে ঈদগাঁও বাজারে জনগন মিছিল বের করলে মিছিলে গুলিবর্ষন করেন মনজুর কাদের ভূইয়া। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তার ভাই রশিদ আহমদ। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার ২ নং আসামী মনজুর কাদের এখন চকরিয়া থানার ওসি।
হত্যা মামলার বাদী আকতার হোছাইন আরো বলেন, ওসির চেয়ারে বসে মামলা প্রত্যাহার করতে বহুমুখী চাপ দিচ্ছেন আসামী মনজুর।
ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভোমরিয়া ঘোনা নিবাসী হাফেজ মৌলানা শাহজাহান বলেন আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর তাকে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পায়ে গুলি করেন মনজুর কাদের ভূঁইয়া।
সেই ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন কোরআনের হাফেজ শাহজাহান।
ঈদগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ রিদুয়ান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে ঈদগাঁওতে ১০/১২ টি গায়েবী মামলা করেন মনজুর কাদের৷ এসব মামলায় আসামী করা না করা ও আটক ছাড় বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করেছেন তিনি।
ঈদগাঁওর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুছ ছালাম মৌলভী, কালা জাফর, থানার দালাল ফিরোজ ও রাইটার মিজানের মাধ্যমে এসব টাকা আদায় করতেন মনজুর কাদের।
জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের কক্সবাজারস্থ স্টাফ রিপোর্টার মনছুর আলম মুন্না বলেন, ওসি মনজুরের ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হন ওসি। এর জের ধরে গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে ৬০ কিলোমিটার দুরবর্তী চকরিয়া থেকে কক্সবাজার এসে তাকে অপহরন করে চকরিয়া থানায় নিয়ে যান ওসি মনজুর। সারারাত মারধর ও নির্যাতনশেষে পরদিন ওসি নিজেই মামলা করে তাকে আদালতে চালান দেন।
এসব ছাড়াও ওসি মনজুর কাদেরের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আরো বিভিন্ন অভিযোগ পুলিশ হেড কোয়ার্টার, পুলিশ মহা পরিদর্শক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের নিকট তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশের চট্রগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এডিশনাল ডিআইজি(ক্রাইম) ওয়াহিদুল হক চেীধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা স্যারের নির্দেশে চকরিয়া থানার ওসি মনজুর কাদের ভূঁইয়াকে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চলছে। আজকের মধ্যেই তাকে চকরিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।
পাঠকের মতামত: