নিজস্ব প্রতিবেদক ::
বিশ্বজুড়ে মানবিক বিপর্যয় রোধে মানবাধিকার নিশ্চিতের জোর দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ।
সেই সঙ্গে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সুশীল সমাজকে সংগঠিত হওয়ার উপর গুরুত্বারুপ করেন।
১০ ডিসেম্বর দুপুরে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে কোস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল।
তিনি বলেন, “একজন মানুষ তার জন্ম থেকে কিছু অধিকার পেয়ে থাকে, সেগুলোই মানবাধিকার। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ঘোষণা পত্রে ৩০টি ধারার কথা বলা হয়েছে এবং আমাদের সংবিধানে ১৮ টি মৌলিক অধিকারের কথা বলা আছে। বিশ্বের বিভিন্নদেশে বিভিন্নভাবে এই অধিকারগুলো লুণ্ঠিত হচ্ছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো পৃথিবীতে মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে থাকেন।”
তিনি বলেন, “আমাদের সকলেরই মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে যেতে হবে। কারো দ্বারা কারো মানবাধিকার যেন লঙ্ঘিত না হয়, অবশ্যই সেটি খেয়াল রাখতে হবে।”
“সবার জন্য মুক্তি, সমতা ও ন্যায় বিচার” প্রতিপাদ্যে শহরের কলাতলী লাইট হাউজের আবাসিক হোটেলের কনফারেন্স হলে সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক ও আঞ্চলিক টিম লিডার জাহাঙ্গীর আলম।
কক্সবাজার জেলা প্রসক্লাবের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, লেখক ও গবেষক মুহম্মদ নুরুল ইসলাম, কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ, ডেইলি স্টারের কক্সবাজার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাত, ‘অগ্রযাত্রা’র চেয়ারম্যান নীলিমা আকতার চৌধুরী, বাপা কক্সবাজার জেলা সভাপতি এইচ এম এরশাদ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এপিপি এডভোকেট সাকি এ কাউসার, অধ্যাপক ও বিশিষ্ট লেখক মকবুল আহমেদ, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক রুহুল কাদের বাবুল, এটিএন বাংলা কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি মোয়াজ্জেম হোসেন শাকিল, উখিয়া ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ জাফর আলম, এনজিও ওয়েট এন্ড সি’র প্রধান নির্বাহী জসিম উদ্দিন সিদ্দিকি, সিনিয়র সাংবাদিক এইচ এম ফরিদুল আলম শাহিন, মুক্তি কক্সবাজার এর প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট মো: আশরাফুল হক।
“সবার উপরে মানুষ সত্য” শীর্ষক এই সেমিনারে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ও এনজিও ফোরামের সদস্যবৃন্দসহ এতে মোট ৩৫ জন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট সাংবাদিক, আইনজীবিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, “মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় জরুরি হলো সব জায়গায় অধিকারের কথা বলতে পারা কিন্তু আমরা এমন একটি বিশ্বে বসবাস করছি যেখানে কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করে রাখা হয়। প্রতিহিংসা কমিয়ে সকলকে একসাথে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।”
মকবুল আহমেদ বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘন কি সেটা আমরা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের দেখলেই বুঝতে পারি। রাষ্ট্র হিসেবে মায়ানমারের উচিত ছিল তার নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করা। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, মায়ানমার সেখানে নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং তার নাগরিকদের মানবাধিকার চরমভাবে হরণ করেছে। রাষ্ট্রকে তার নাগরিকদের অধিকার রক্ষার প্রধান ভূমিকায় থাকতে হবে।”
সাংবাদিক মুহম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, “এমন সময়ে আমরা মানবাধিকারের কথা বলছি যেখানে বিশ্বজুড়ে কোন না কোনভাবে কারো না কারো মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। ফিলিস্তিনে নির্বিচারে শিশু হত্যা করা হচ্ছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা বর্তমান বিশ্বে একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জিং কাজ, সেই কাজ প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সম্মেলিত আওয়াজ তোলা।”
নীলিমা আকতার চৌধুরী বলেন, “পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের কোথাও মানবাধিকারের চর্চা হচ্ছে না। কেন র্চচা হচ্ছে না তার কারন আমরা কেউই খুঁজে বের করার চেষ্টা করি না। মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা খুব জরুরী, সেক্ষেত্রে আমাদের যুব সমাজকে প্রথম বিবেচনায় রাখতে হবে।”
মোহাম্মদ আলী জিন্নাত বলেন, “যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে সেখানেই সম্মিলিত প্রতিরোধ করতে হবে। সিভিল সোসাটির প্রতিনিধিদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে।”
মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, “বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। সম্প্রীতির এই বন্ধন টিকিয়ে রাখতে আমাদের নিজ নিজ জায়গা হতে মানবাধিকার চর্চা করতে হবে।”
পাঠকের মতামত: