চকরিয়া নিউজ ডেস্ক :: পর্যটন শহর কক্সবাজার সদর, রামু ও নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের কক্সবাজার-৩ আসন। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
ইতোমধ্যে অনেকে মাঠে-ঘাটে প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। দলের মনোনয়ন পেতে দলটির একাধিক নেতা মাঠে রয়েছেন। তবে সৎ, শিক্ষিত, যোগ্য ও জনবান্ধব নেতাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার সুযোগ চান সাধারণ মানুষ।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে টানা দুই বার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাইমুম সরওয়ার কমল। আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন নিয়ে তিনি জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চান।
তবে এ আসনে তার ছোট বোন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীও হাল ছাড়ছেন না। নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তিনিও পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বর্তমান এমপির বড় ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজলও মনোনয়ন পেতে দৌঁড়ঝাপে আছেন।
তারা সাবেক সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রদূত প্রয়াত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর সন্তান। দীর্ঘ দিন ধরে ভাই-বোনের মধ্যে অমিল লক্ষ্য করা যায়। এবং তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।
কক্সবাজারের এই আসনে প্রধান দুই দলে পারিবারিক রাজনীতির প্রভাব রয়েছে। দলীয় কোন্দলও রয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে জেলার আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরোধ অনেকটা প্রকাশ্যে। অন্যদিকে, বিএনপি থেকে ২০০৮ সালে সর্বশেষ নির্বাচিত সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজলের সঙ্গেও বিএনপি জেলা নেতাদের বিরোধ রয়েছে।
নানা কোন্দলের কারণে দলীয় মনোনয়নের জন্য আত্মীয়ে আত্মীয়ে বিরোধিতা চলছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভাই-বোনের এমন বিরোধে শঙ্কা দেখছেন জেলাবাসী।
এছাড়াও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেতে মাঠে তৎপর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফোরকান আহমদ, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, কক্সবাজার জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী ও সাবেক এমপি মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী।১৯৯১ সাল থেকে (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ছাড়া) এ আসনে তিনবার আওয়ামী লীগ ও তিনবার বিএনপির প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির খালেকুজ্জামান। ২০০১ সালে নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে খালেকুজ্জামান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর তার ভাই প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান এমপি নির্বাচিত হন মোস্তাক চৌধুরীকে হারিয়ে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলকে হারিয়ে বিএনপির লুৎফুর রহমান কাজল এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও ২০১৮ সালে বিএনপির কাজলকে হারিয়ে পরপর দুইবার এমপি নির্বাচিত হন সাইমুম সরওয়ার কমল। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তিনি হ্যাটট্রিক করতে চান।
বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে কক্সবাজারে অনেক গুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রেললাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে , বেতার, টেলিভিশন, মেডিক্যাল কলেজ, বাঁকখালী নদীর ওপরে বড় বড় চারটি সেতু নির্মাণসহ সব কিছু মিলিয়ে আমাদের গ্রামগুলো এখন শহরে পরিণত হয়েছে এবং শহর আধুনিক হয়েছে।
এইসব কিছু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ও আমার প্রচেষ্টায় হয়েছে। আমি মানুষের সেবা করেছি। বন্যা কবলিত মানুষের পাশে ছিলাম। এছাড়া কোভিড পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম। এ সমস্ত কারণে মনোনয়ন বাছাই কমিটির কাছে আমার নাম এগিয়ে থাকবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
তিনি আরও বলেন, দল থেকে আরও অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করতে পারেন। দল যোগ্য মনে করে যাকে মনোনয়ন দেবেন আমি তার পক্ষে কাজ করবো।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেন, আমি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে থাকাকালীন কক্সবাজারকে একটি আধুনিক নগরীতে পরিণত করতে চেষ্টা করেছিলাম। সফলও হয়েছি। আমার আমলে কক্সবাজারে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। আমি এই শহরের জন্যে অনেক কিছু করেছি। দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে নৌকা প্রতীক উপহার দেয়, আমি নির্বাচনে জয়লাভ করলে কক্সবাজারের জন্যে এবং এই অঞ্চলের মানুষের জন্যে অনেক কিছু করার স্বপ্ন রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, আমি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরপর দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছি। দুঃসময়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বুকে আগলে রেখেছি। তাদের দোয়া এবং ভালোবাসায় আমি নেত্রীর কাছে দলীয় মনোনয়ন চাইছি। সবকিছু বাদেও আমি পাঁচ বছর মেয়র পদে থাকাকালীন ধারাবাহিক উন্নয়ন করেছিলাম। সেই কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে বিপুল ভোটে জয় লাভ করব বলে আমি মনে করি।
সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা মোস্তাক বলেন, আমাদের কাজ হলো মানুষের সেবা করা। নিজেদের কথা আমরা কোনোদিনই ভাবি নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন তাহলে মনোনয়ন দেবেন। মনোনয়ন পেলেও মানুষের পাশে থাকব, না পেলেও থাকব, তবে মনে করি সদর-রামু আসনের জন্য আমার স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী যোগ্য।
কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদর-রামু আসনে মনোনয়ন আশা করছি৷ ইতোমধ্যে আমি পাড়া, মহল্লা ও গ্রামে ছুটে চলেছি। সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমি আওয়ামী লীগ মনোনয়নের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এই অঞ্চলের আমূল পরিবর্তন করবো।
কক্সবাজার জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ২০ বছর ধরে আমি কক্সবাজার জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমার স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতির কারণে আমার নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমি আশাবাদী।
ইতোমধ্যে নির্বাচনী হাওয়া বইছে পাড়া, মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রামের চায়ের দোকানেও। প্রতিদিন চায়ের দোকানে লোকজন চা পান করতে করতে আলোচনা করেন রাজনীতি, সংসদ সদস্য প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্যের কাজ নিয়ে।
রামুর অফিসেরচর গ্রামের বাসিন্দা সাদেক মাহমুদ বলেন, রামুর জন্যে বর্তমান এমপি কমল অনেক কিছু করেছেন৷ তিনি রামুর মানুষের কথা ভাবেন। এবং এই এলাকার উন্নয়নের দিক দিয়ে তিনি কখনো পিছপা হননি। আমি আশা করছি এইবার তিনি মনোনয়ন পাবেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন।
সদরের ঝিলংজার বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, প্রধানমন্ত্রী যাকে দলীয় মনোনয়ন দিবেন, আমি তাকেই ভোট দিব। আমি ব্যক্তি বুঝি না, নৌকা মার্কা বুঝি।
লালদিঘিরপাড় চায়ের টং দোকানে কথা হয় কক্সবাজার পৌরসভার বাসিন্দা ফয়েজ আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, বর্তমানে সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক মৌসুমী নেতা মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনে আমরা তো ভোট দিব, ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেনও। অনেক নেতা আছে ভোটের আগে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে, ভোটের পরে তাকে আর পাওয়াই যায় না। যে জনগণ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করল তাকে সে পাত্তাও দেই না। এমন কোনো নেতাকে আমরা ভোট দিতে চাই না। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সদর-রামু আসনের জন্যে অনেকে মাঠে নেমেছেন, তাদের জন্য শুভ কামনা। সৎ, শিক্ষিত, যোগ্য ও জনবান্ধব নেতাকে আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবো।
পাঠকের মতামত: