কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজার জেলার সাংবাদিকতার অন্যতম দিকপাল, কক্সবাজার প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, দেশ বরেণ্য সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন চৌধুরী (৬৭) আর আমাদের মাঝে নেই।
তিনি গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
তিনি অসুস্থবোধ করলে তাঁকে দুপুরের দিকে হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
৫০ বছরের বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতা পেশায় তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন নির্লোভ, সৎ ও কর্তব্যনিষ্ঠ সংবাদকর্মী। নিজের মেধা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা ও ব্যক্তিত্ব গুণে তিনি সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
কক্সবাজার জেলা শহরের বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় জন্ম নেওয়া হেলাল উদ্দিন চৌধুরী যখন প্রথম কাতারের তুখোড় একজন ছাত্রলীগ নেতা, তখন ১৯৭৩ সালে সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন। ওই সময় দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্র ‘গণকণ্ঠ’ পত্রিকার কক্সবাজার সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮০ সালে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর কক্সবাজার প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮১ সালে দৈনিক আজাদীর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পদোন্নতি পান এবং কক্সবাজার থেকে পেশাগত কারণে চট্টগ্রাম শহরে নিবাস গাড়েন। সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা পেশায় কর্মরত ছিলেন।
বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতার কর্মজীবনে তিনি দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার পদে প্রায় দুই দশক সময় অত্যন্ত সুনাম ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পরে জাতীয় দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ পদে যোগদান করেন। পরে দৈনিক যায়যায়দিেিনর চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ হিসেবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যায়যায়দিনেরই কর্মরত ছিলেন।
তিনি কক্সবাজার প্রেসক্লাবের ১২জন প্রতিষ্ঠাতার মধ্যে একজন এবং বয়সে তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর চট্টগ্রামে সম্মিলিত পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সচিব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক হাউজিং সোসাইটির আহবায়ক ও সভাপতি, কক্সবাজার পেসক্লাব কার্যনির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য, থ্যালাসেমিয়া সেবা কেন্দ্র চট্টগ্রামের সভাপতি পদসহ আরো নানা সংগঠন ও সংস্থার দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি মৃত্যুকালে স্ত্রী তাহেরা বেগম চৌধুরী, একমাত্র পুত্র সন্তান তাজনিম উদ্দিন চৌধুরী, নবতিপর মা, ভাইবোন, বিপুল সংখ্যক বন্ধুবান্ধব, শুভানুধ্যায়ী ও শুভাকাংখি রেখে গেছেন।
তাঁর একমাত্র পুত্র তাজনিম উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহকারি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। প্রয়াত জাকির হোসাইন চৌধুরী ও ফরিদা বেগম দম্পতির ১ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাঁর মরদেহ কিছুক্ষণের জন্য কক্সবাজার প্রেসক্লাবে নেওয়া হয়। সেখানে কক্সবাজারে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এসময় কক্সবাজার প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তাঁর মরদেহে পুষ্পমাল্য প্রদান করা হয়। উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এসএম আমিনুল হক চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের, স্থায়ী সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও মুহাম্মদ আলী জিন্নাত, সদস্য শফিউল্লাহ শফি, নুপা আলম, মোহাম্মদ জুনায়েদ ও আহসান সুমন, কক্সবাজার জেলা জাসদের সভাপতি ও হেলাল উদ্দিনের নিকটতম বন্ধু নইমুল হক চৌধুরী টুটুল, জাসদ নেতা রূপনাথ চৌধুরী, নাচ্চু প্রমুখ।
এদিকে এই প্রথিতযশা সাংবাদিকের প্রথম নামাজে জানাযা গতকাল রাত ১১টায় কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাযায় ইমামতি করেন তাঁর একমাত্র সন্তান অধ্যাপক তাজনিম উদ্দিন চৌধুরী। মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক সিরাজুল ইসলাম, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বদিউল আলম ও বর্তমান সভাপতি আবু তাহের।
হেলাল উদ্দিন চৌধুরী শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী আজ শনিবার জোহরের নামাজের পর চট্টগ্রাম মহানগরীর মিসকিন শাহ (রাঃ) মাজার সংলগ্ন মসজিদে তাঁর দ্বিতীয় নামাজে জানাযার পর মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রের কবরের পাশে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে ।
পাঠকের মতামত: