ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

একমাসে গ্রীডে যুক্ত হয়েছে ২৭ লাখ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ

বাতাসে পাখা ঘুরলেই উৎপাদন হচ্ছে বিদ্যুৎ

সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার :: কক্সবাজারের খুরুশকুলে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করেছে দেশের প্রথম ও বৃহত্তম বায়ু বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর মাধ্যমে এখন প্রতিদিনই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর গেলো একমাসে ২৭ লাখ কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয়েছে। আর প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেপ্টেম্বর বা নভেম্বরে শুরু হবে বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক উৎপাদন। এখান থেকে গ্রিডে যোগ হবে মোট ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
সরজমিনে দেখা যায়, একটি-দুটি নয়; এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেছে ১০টি টারবাইন। যা স্থাপন করা হয়েছে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে। বেসরকারি উদ্যোগে নির্মাণ করা হচ্ছে ৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার দেশের প্রথম ও বৃহত্তম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।
বাতাসের শক্তিতে ঘুরছে ব্লেড বা পাখা। একসঙ্গে ঘুরছে ৭টি টারবাইনের পাখা। আর এমন করেই বাতাসের শক্তি থেকেই উৎপাদন হচ্ছে বিদ্যুৎ। যা যুক্ত হয়েছে জাতীয় গ্রীডে। পরীক্ষামূলকভাবে বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে করে যার সুবিধা দেয়া হচ্ছে গ্রাহকদের মাঝে।

চীনের অর্থায়নে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড। আর ৯০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের সব যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে চীন থেকে।
ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মুকিত আলম খান বলেন, কক্সবাজারে স্থাপিত ৬০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি গেলো ২৫ মে জাতীয় গ্রীডের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। এরপর ২৬ মে থেকে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ প্রদান শুরু করেছে। এরমধ্যে গেলো একমাসে ২৭ লাখ কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয়েছে। আশা করছি, এই প্রকল্পের বাকি কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে।
পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ ক্ষেত্র সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় উপকূলবর্তী ৩টি ইউনিয়নে নির্মাণ করা হচ্ছে ২২টি টারবাইন। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে ১০টি। যার প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ৩ মেগাওয়াট। চীন থেকে আনা ১০০ টন ধারণক্ষমতার ক্রেনের মাধ্যমে যা স্থাপন করা হয়েছে ৯০ মিটার লম্বা টাওয়ারের ওপর। আর প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে অর্থনীতি ও পরিবেশের কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে না।
ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের পরিচালক সাজিদ রহমান বলেন, বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখলে দেখবেন একেকটা টাওয়ার থেকে ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। আর টাওয়ারের জন্যও কম জায়গা লাগে। এটার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে যখন বায়ু বিদ্যুৎ করি তখন আশপাশে মাছের চাষ, ধানের চাষসহ সবধরণের চাষ হচ্ছে। ফলে বায়ু বিদ্যুৎ অর্থনীতিতে বিরূপ কোন ধরণের প্রভাব ফেলছে না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের জাতীয় গ্রীডে একটি ক্লিন এনার্জি সরবরাহ করতে পারছি।
আর কক্সবাজার ৬০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল কাদের গণি বলেন, এই মুহুর্তে কক্সবাজার ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে প্রতিদিনই জাতীয় গ্রীডে ১৫ থেকে ২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলকভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। ১০টি টারবাইন হলেও এখন চালু রয়েছে ৭টি। বাকি ৩টির কিছু সংযোগের কাজ বাকি রয়েছে। তা দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হবে। তবে ৭টি টারবাইন থেকে দেখা গেছে বিকেলের দিকে বাতাস বেশি থাকাতে প্রতিটি থেকে ৩ মেগাওয়াট করে ২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। যা কক্সবাজার পাওয়ার স্টেশনে যুক্ত হচ্ছে।
ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল কাদের গণি বলেন, মোট ২২টি টারবাইনের মধ্যে ১০টি শেষ হয়েছে। বাকি ১২টি স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করি, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর বা নভেম্বরের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এই কাজ শেষ হলে কক্সবাজার বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে জাতীয় গ্রীডে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

পাঠকের মতামত: