ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

১৯ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম প্রকল্প

হাতি-মানুষ এখন মুখোমুখি

বান্দরবান প্রতিনিধি ::  পার্বত্য জেলা বান্দরবানে বন্য হাতির আক্রমণে একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। জমির ফসল ও জীবন বাঁচাতে রাতের বেলায় ভয়ে গাছের উপরে বানানো মাচাং ঘরে ঘুমাচ্ছেন অনেকেই। জেলায় বিগত উনিশ বছরেও বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম তৈরির প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্টদের দাবি, হাতি চলাচলের পথ এবং বিচরণের পাহাড়ি জায়গাগুলো মানুষ দখল করে নেয়ায় খাদ্যের খোঁজে বন্য হাতিরা হানা দিচ্ছে ফসলি জমিতে। এতে পার্বত্য বান্দরবান জেলার চারটি উপজেলার মানুষ এবং বন্য হাতিরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, জেলার লামা উপজেলায় সাঙ্গু ও মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় প্রায় সাড়ে ১২শ একর জায়গা জুড়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ২০০৪ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১৯ বছরেও নানা কারণে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। অন্যদিকে হাতি চলাচলের পথ এবং বিচরণের পাহাড়ের জায়গাগুলো দখল করে মানুষ গড়ে তুলছে রাস্তা, বাগান, খামারবাড়িসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। ফলে আবাসস্থল ও খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়ায় হাতিরা নেমে আসছে লোকালয়ে। খাদ্যের খোঁজে হানা দিচ্ছে মানুষের ফসলি জমিতে।

তথ্য মতে, বিগত ঊনিশ বছরে বান্দরবান জেলায় বন্যহাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন তিনশ’র অধিক মানুষ। যাদের মধ্যে শিশু এবং বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। এছাড়াও কমপক্ষে আরও সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বন্য হাতির আক্রমণে। যাদের মধ্যে অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করে অসহায় জীবন যাপন করছেন। লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম এবং সদর উপজেলায় বন্যহাতিরা শতশত একর জমির ফসল নষ্ট করছে প্রতিবছরই। অপরদিকে নানা প্রতিকূলতায় ১৪টি বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে জেলায়। যারমধ্যে ৭টি হাতিকে গুলি করে হত্যা করে মূল্যবান দাঁত চুরি করে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ চক্র।

ফাঁসিয়াখালীর স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ আলম ও জাকির হোসেন বলেন, বন্য হাতির আক্রমণ আগের চেয়ে বেড়েছে। সর্বশেষ বন্য হাতির আক্রমণে চলতি মাসের ১৩ তারিখ ফাঁসিয়াখালীর হারগাজা গ্রামে নূরুল আবছার এবং কুমারি এলাকায় আকতার হোসেন নামে দুজনের মৃত্যু হয়।

সম্প্রতি ছয় থেকে সাতটি বন্যহাতির পাল বিচরণ করতে দেখা গেছে এই অঞ্চলে। একেকটি পালে ৬ থেকে ১০/১২টি পর্যন্ত হাতি রয়েছে। তাদের ভয়ে জমির ফসল ও জীবন বাঁচাতে রাতের বেলায় গাছের উপরে বানানো মাচাং ঘরে ঘুমাচ্ছে মানুষ।

বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা হক মাহাবুব মোরশেদ বলেন, বন্য হাতির আক্রমণে ক্ষত্রিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে নিয়মিত। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বন্যহাতির কোনো ধরনের ক্ষতি ও তাদের না রাগাতে গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। হাতির চলাচলের পথ অবরুদ্ধ না করতে জনগণকে বোঝানো হচ্ছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সকল প্রাণীর বসবাস নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব। জনসংখ্যার বিস্তৃতিতে হাতির আবাসস্থলে মানুষ অবকাঠামো গড়ে তুলছে, ফলে বন্যহাতিরা লোকালয়ে নেমে আসে মাঝেমধ্যেই। তবে হাতিদের যাতে কেউ বিরক্ত না করে এবং তাদের চলাচলে যাতে বাধা না দেয় সেজন্য জনসচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। অভয়ারণ্য যতটুকু আছে, তারমধ্যেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের কাজ করা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: