এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়ায় অমানবিক নির্যাতনের পর মিফতাহ জান্নাত নামের ১০ বছরের এক শিশুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার ৬ দিন পর অবশেষে চকরিয়া থানায় বাড়ির গৃহকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। শিশুটির বাবা ছৈয়দ নুর বাদি হয়ে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ মে) রাতে মামলাটি রুজু করেছেন।
মামলায় চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের হাজিয়ান এলাকার মোহাম্মদ ইসহাক এর ছেলে হারুন ও তার স্ত্রী সুমা আক্তার ছাড়াও আরও দুইজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলা রেকর্ড করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী। তিনি বলেন, শিশু মিফতাহ জান্নাত এর বাবা বাদি হয়ে জমা দেওয়া এজাহারটি হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে। তদন্তের জন্য মামলাটি এসআই গোলাম ছরওয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মামলার আসামি গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিহত শিশু মিফতাহ জান্নাত মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার ছৈয়দ নুরের মেয়ে । বাবা পেশায় একজন দরিদ্র জেলে এবং মা গৃহিণী। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে পড়ে চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের হাজিয়ান গ্রামের কামাল হারুনের বাড়িতে শিশু মিফতাহ জান্নাতকে গৃহকর্মীর কাজ করতে দিয়েছিলো তার পরিবার।
নিহত শিশু মিফতার বাবা ছৈয়দ নুর বলেন, দেড় বছর আগে তার মেয়েকে গৃহকর্মীর কাজের জন্য নিয়ে যায় মহেশখালী পৌরসভার সিকদার পাড়া গ্রামের প্রভাবশালী রশিদ বহদ্দারের স্ত্রী হাছিনা আকতার। সেখান থেকে মিফতাহকে চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের হাজিয়ান এলাকায় তার মেয়ে (হাছিনা আক্তারের মেয়ে) সুমা আকতারের শ্বশুর বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজের জন্য পাঠিয়ে দেন।
মিফতার বাবা আরও জানান, তার মেয়েকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েচে। গত বুধবার (১০ মে) দুপুর ২টার দিকে রশিদ বহদ্দার ফোন দিয়ে আমাকে জানিয়েছেন মিফতাহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তার মেয়ের শ্বশুরবাড়ি চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের হাজিয়ান এলাকায় মারা গেছে।
নিহত শিশু মিফতাহ’র মামা রুস্তম আলী বলেন, ‘চকরিয়া থেকে ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আমাদের পাশের এলাকা হিন্দুপাড়া রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। তখন আমাদের সন্দেহ হয়।’
তখন অ্যাম্বুলেন্স চালক শাহাব উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে সে জানান, চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের হাজিয়ান এলাকার হারুন মরদেহ পরিবহনের কথা বলে গাড়িটি ভাড়া করে। তার বাড়ি থেকে বিকেল সাড়ে ৩টায় কাপড় মোড়ানো মরদেহ গাড়িতে তুলে হারুন, একজন মহিলা ও অপর একজন পুরুষসহ মহেশখালীতে আসে।
অ্যাম্বুলেন্স চালক আরও জানান, মহেশখালীর ‘গোরকঘাটা বরুনাঘাট এলাকায় গিয়ে গাড়ি থেকে তারা তিনজনই নেমে যায় এবং ইয়াসিন নামের অপর এক ব্যক্তি গাড়িতে উঠে। পুনরায় হিন্দুপাড়া এসে তিনিও কৌশলে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। এরপর খবর পেয়ে মহেশখালী থানা পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করেন।
পরে মহেশখালী থানা পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
নিহতের পরিবার সদস্যরা জানিয়েছেন, সুরতহাল প্রতিবেদন করার সময় শিশুটির পুরো শরীর ঝলসানো দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটির শরীরে গরম তেল কিংবা গরম পানি ঢালা হয়েছে। মাথার পিছনে কয়েক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। এছাড়াও হাতে পা-সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এটা হত্যাকাণ্ড বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানান, মরদেহের সার্বিক অবস্থা দেখে কয়েকদিন আগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কারণ মরদেহের শরীর ঠান্ডা ছিল এবং আঘাতগুলোও পুরনো মনে হচ্ছে। সম্ভবত শিশুটির মৃত্যুর পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে ও মরদেহ গোপন করার জন্য জড়িত ঘাতক চক্র ডিপ ফ্রিজে রেখেছিলেন।
পাঠকের মতামত: