ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষয়ক্ষতি ও জানমাল রক্ষায়

উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি

নিউজ ডেস্ক ::  বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষয়ক্ষতি ও জানমাল রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সংশিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

চকরিয়া : গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলা পরিষদের হলরুমে সকল দপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি শীর্ষক জরুরি সভা করা হয়। সভা শেষে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মো. রাহাত উজ–জামান। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই যাতে উপকূলে বসবাসকারী লোকজন ও গবাদী পশু নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে সেজন্য ৯৮টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার ও সাতটি মুজিব কিল্লাকে (গবাদী পশুর জন্য) প্রস্তুত রাখা হবে। ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগে ও পরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সিপিপির ১০ জন করে নারী ও পুরুষ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত ৭০টি দলের ১৪০০ নারী–পুরুষ সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে।

দুর্যোগ পরবর্তী পানিবাহিত রোগবালাই যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদানসহ যাবতীয় সেবাদানের জন্য প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে। দুটি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রাখা হবে। সুপেয় পানির জন্য ১০ হাজার বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ দেওয়া হবে। যেখানে যখনই প্রযোজ্য হবে, সেখানে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও একটি অ্যাম্বুলেন্সসহ একটি মেডিক্যাল টিম সর্বদা নিয়োজিত থাকবে। ইতোমধ্যে মাঠ থেকে ৯০ শতাংশ শস্য কাটা সম্পন্ন হয়েছে।

সমুদ্র উপকূলের একটি স্লুইস গেটও যাতে খোলা না থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, নারী–পুরুষ আনসার সদস্য, গ্রাম পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হবে। পরিস্থিতির সার্বিক তদারকির জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে উপজেলায়।

বাঁশখালী : উপজেলার উপকূলীয় ছনুয়া, খানখানাবাদ, গন্ডামারা, সরল, বাহারছড়া, কাথরিয়া, সাধনপুর, পুকুরিয়া, পুইছড়ি, শেখেরখীল ও শীলকুপ এলাকার স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার এবং মুজিব কিল্লাসহ ১১০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী। বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির গতকালের সভায় এ তথ্য জানানো হয়। এছাড়া সাগরে যে সব জেলেরা রয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়। অপরদিকে বাঁশখালীর ১০টি ইউনিয়নে ৭১টি ইউনিটে ১৪২০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে।

আনোয়ারা : ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় আনোয়ারা উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো খোলা থাকবে। জেলা প্রশাসন থেকে ৪০ হাজার নগদ টাকা ও ১০ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। সচেতনতার জন্য গতকাল বুধবার জুঁইদন্ডী এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব অঞ্চলে মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। প্রশাসন জানিয়েছে, মোচা মোকাবেলায় উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ৫৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে উপজেলা প্রশাসন।

সীতাকুণ্ড : সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সীতাকুণ্ডে প্রস্তুত করা হয়েছে ৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি–বেসরকারি ভবনগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য ১২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

টেকনাফ : টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের নিয়ে উদ্ধার সামগ্রী ব্যবহারের উপর ওরিয়েন্টেশন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ইউএনও মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওরিয়েন্টেশনে সরকারি–বেসরকারি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন। জার্মান রেড ক্রস, ডেনিশ রেডক্রস ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেডক্রসের (আইএফআইসি) আর্থিক সহায়তায় টেকনাফে পরিচালিত পাইলট প্রোগ্রাম্যাটিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের অংশ হিসেবে দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যবহারের জন্য উদ্ধার সামগ্রী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বরাবরে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার বিকালে দুর্যোগ প্রশমন নিয়ে প্রস্তুতি সভা করে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।

মহেশখালী : মহেশখালী প্রতিনিধি জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় গতকাল দুর্যোগ মোকাবেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইয়াসিন। তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলার যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং শুকনো খাবার মজুদ করা হয়েছে। উপজেলার ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনকে সাইক্লোন শেল্টারে হিসেবে ব্যবহারের জন্য খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সিসিডিবি এবং রেড ক্রিসেন্টের সাইক্লোন শেল্টারসহ সবমিলিয়ে দেড় শতাাধিক ভবন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্প কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় দুর্যোগে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

সন্দ্বীপ : সন্দ্বীপ প্রতিনিধি জানান, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় গতকাল বিকালে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা বলেন, উপজেলায় ১১২টি সাইক্লোন শেল্টারসহ মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজসহ মোট ১৬২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া উড়িরচরে তিনটি মুজিব কিল্লা ও মুছাপুর ইউনিয়নে একটি মুজিব কিল্লা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির রয়েছে ৩ হাজার ভলান্টিয়ার। এছাড়া প্রস্তুত রয়েছে যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্যবৃন্দ। এছাড়া পর্যাপ্ত শুকনো খাদ্যসামগ্রী ও সুপেয় পানির ব্যবস্থাও রয়েছে বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: