অনলাইন ডেস্ক :: মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা গরু-মহিষে সয়লাব হয়ে গেছে কক্সবাজারের চকরিয়া। অবৈধভাবে আসা এসব গরু-মহিষ রাখা হচ্ছে চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর, ফাঁসিয়াখালী ও ডুলাহাজারাসহ নানা স্থানে। সেখানে রীতিমত মিয়ানমারের পশুর হাট বসে গেছে। এর ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। অন্যদিকে দেশীয় গরুর খামারিরা পড়েছেন দারুণ বিপাকে।
প্রশাসনের সামনে পশুর এসব অবৈধ হাট বসলেও অদৃশ্য কারণে চুপ রয়েছে। তবে অবৈধ পশুর হাট বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে একটি সভাও করেছে। এই সভায় অবৈধ পশুর হাট এবং মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ আসা বন্ধ করতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অবৈধভাবে মিয়ানমার থেকে পশু আসা বন্ধ এবং চোরাচালান প্রতিরোধে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) রাহাত উজ্জামানের পরিচালনায় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম। এছাড়াও সভায় উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর কোরবানির ঈদের আগে থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার গরু-মহিষ দেশে প্রবেশ করে। এসব গবাদি পশু পার করার জন্য পথ হিসেবে আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়িকে বেছে নেয় চোরাকারবারিরা। এই দুই পাহাড়ি উপজেলার অন্তত অর্ধশতাধিক পথে মিয়ানমারের গবাদি পশু ঢুকেছে দেশে। তবে এসব গবাদি পশু পাচারের কাজে সরাসরি জড়িত রয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। রাজনৈতিকভাবে তারা একে-অপরের ‘চরম শত্রু’ হলেও ব্যবসার ক্ষেত্রে তারা একাট্টা। বেচা-বিক্রি থেকে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করার কাজও করছে বেশ কয়েকটি চোরাচালানি সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলীকদম-লামা এবং নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে অবৈধভাবে আসা গবাদি পশুর হাট বসেছে চকরিয়ার মানিকপুর বাজার, ফাঁসিয়াখালীর হাঁসের দীঘি ও ডুলাহাজারার রংমহল এলাকায়। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার গবাদি পশু দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি বিজিবি অভিযান চালিয়ে বান্দরবান জেলার লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং চকরিয়ার মানিকপুর থেকে শতাধিক গরু-মহিষ জব্দ করে। এছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ির নিয়ন্ত্রণাধীণ তীরডেপা বিজিবি ক্যাম্প মানিকপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৫টি গরু জব্দ করে। পরে জব্দকৃত গরু চকরিয়া থানায় হস্তান্তর করেছে।
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা এসব গবাদি পশুর কারণে দেশীয় খামারিরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আগামী কোরবানির ঈদের আগে যদি এসব গবাদি পশু আনা বন্ধ করা না হয়, তাহলে খামারি ও কৃষকরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
স্থানীয় এক খামারি জামাল উদ্দিন বলেন, বর্তমান বাজারে পশুখাদ্যের বেশ দাম। তারপরও বেশি দামে খাদ্য কিনে গবাদি পশু লালন-পালন করছি। কিন্তু মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে গবাদি পশু আসার কারণে বাজারে দাম পাচ্ছি না। লোকসান গুণতে হচ্ছে। তাছাড়াও মিয়ানমার থেকে যেসব গবাদি পশু দেশে আসছে, সেগুলো খুবই রোগাক্রান্ত।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু-মহিষ আসা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে সভাও হয়েছে। যেসব জায়গায় মিয়ানমারের পশুর হাট বসেছে, সেসব হাটে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পাঠকের মতামত: