ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

তিন বছর মেয়াদের কমিটি, সাড়ে আট বছর চলমান

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী মাঠে

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ সম্মেলন ও কাউন্সিল। ওই সম্মেলনে সাংসদ আলহাজ জাফর আলম সভাপতি ও গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেবার সভাপতি পদে বর্তমান চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ ফজলুল করিম সাঈদী প্রার্থী হলেও শেষমুর্হুতে জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সুপারিশক্রমে তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। তাতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন বর্তমান চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার-১) আসনের সাংসদ আলহাজ জাফর আলম।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে সম্মেলনে প্রার্থী হয়েছিলেন দুইজন। তাদের একজন ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, অন্যজন সাবেক ছাত্রনেতা জামাল উদ্দিন জয়নাল। উপস্থিত নেতৃবৃন্দ সমঝোতার চেষ্ঠা করে ব্যর্থ হলে এই পদে ভোটগ্রহণ করা হয়। এতে কাউন্সিলরদের ভোটে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। সাংগঠনিক নিয়মে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হলেও ২০১৩ সালের পর গেল সাড়ে আটবছর যাবত চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে আছেন জাফর আলম-গিয়াস চৌধুরী।

জানা গেছে, সর্বশেষ সম্মেলনে সাংসদ জাফর আলম সভাপতি ও গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও সাংগঠনিক নিয়মে তিনবছর মেয়াদের এই কমিটি বহাল রয়েছেন সাড়ে আটবছর যাবত। অবশ্য এরআগেও তাঁরা আগের কমিটিতে সভাপতি সম্পাদক এবং আহবায়ক যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গেল আটবছর ধরে দুইজন মিলে মিশে আওয়ামীলীগের উপজেলা কমিটির গুরুত্বপুর্ণ দুইটি পদবী আঁকড়ে রাখলেও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে শুরু হওয়া বিরোধ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তুঙ্গে উঠে। বিশেষ করে ফাসিয়াখালী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী আওয়ামীলীগের টিকেট বঞ্চিত হবার পেছনে কলকাড়ি নেমেছেন এমন প্রেক্ষাপটের জেরে সভাপতি সাংসদ জাফর আলমের সঙ্গে উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর মধ্যে বাড়তে থাকে দুরত্ব। তৈরী হয় দুইপক্ষের মধ্যে মনোমালিন্য-দ্বন্দ। পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ সমালোচনা।

এরই জেরে ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে আলাদা বলয় তৈরী করেছেন। আর সেটি দৃশ্যমান হয় সর্বশেষ ৭ র্মাচ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা ঘিরে। সেদিন সাংসদ জাফর আলম অনুসারীরা ৭ মার্চের সমাবেশ করেন চকরিয়া থানা রাস্তার মাথাস্থ সিস্টেম কমপ্লেক্স মাঠে, অন্যদিকে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা কর্মসুচি পালন করেন চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে।

জানা যায়, পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ, সমালোচনা ও ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে যখনই চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের মধ্যে যোজন যোজন দুরূত্ব দেখা দেয়, ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে (গত ৯ মার্চ) আওয়ামীলীগের তৃনমুল প্রতিনিধি সম্মেলন করেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ।

তৃনমুল সম্মেলনে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ১০টি ইউনিটের (উপজেলা ও পৌর শাখা) সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।

এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ঘোষনা অনুযায়ী আগামী ২ এপ্রিল চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

সম্মেলনের সাংগঠনিক কর্মসূচির বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করার কাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে কক্সবাজার জেলার সকল উপজেলায় তৃণমূলের বিরোধ নিষ্পত্তি করে দলকে শক্তিশালী করতেই সম্মেলন এবং কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘ সাড়ে আটবছর পর চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষনা হওয়ায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী নেতা ছাড়াও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বেশ উৎফুল্ল হয়েছেন। বিশেষ করে সভাপতি সম্পাদক প্রার্থী নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ প্রচারণাও শুরু হয়েছে। পদ প্রত্যাশী নেতা ছাড়াও তাদের অনুসারী নেতাকর্মী-সমর্থকরা ইতোমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নেতাকর্মী এবং শুভানুধ্যায়ী সবার দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশা করে ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রার্থীদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে নিজেই প্রার্থীতা ঘোষনা দিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন থেকে টানা চারবার আওয়ামীলীগের টিকেটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম।

সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতা ঘোষনা দেয়ার পর থেকে আজিমুল হক আজিম ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের অধীন ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়ও চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে তিনি তৃনমুল নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বেশ সাড়াও পাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক প্রচারণায় চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ঘিরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থীর ছড়াছড়ি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন সভাপতি পদে বর্তমান কমিটির সভাপতি সাংসদ আলহাজ জাফর আলম, বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ফজলুল করিম সাঈদী, জেলা আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক লায়ন কমরউদ্দিন আহমদ, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সাবেক আহবায়ক অধ্যক্ষ একেএম গিয়াস উদ্দিনের নাম।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, অপর যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা জামাল উদ্দিন জয়নাল, চকরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি রোস্তম শাহরিয়ার, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক আবু মুছা (দুবাই), বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা এসএম আলমগীর হোছাইন, চকরিয়া উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি তপন কান্তি দাশ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কাকারা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শওকত ওসমান। নেতাকর্মীদের ধারণা, সম্মেলনের তারিখ সন্নিকটে আসতে আসতে প্রার্থীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তবে সম্মেলন নিয়ে আশঙ্কার কথাও বলেছেন নেতাকর্মীরা। তাদের অভিমত আগামী ৩ এপ্রিল রোজা শুরু হবে। সেখানে আগেরদিন আদৌ চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বহুল প্রতিক্ষিত সম্মেলন হবে কী না সেটি এখন দেখার বিষয়।

সম্মেলন ও নিজের প্রার্থীতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আগামী ১৬ মার্চ উপজেলা আওয়ামীলীগের বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। সেইসভায় দলের পদ-পদবী প্রত্যাশী নেতৃবৃন্দ ছাড়াও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন, ওই সভায় একটি সিদ্বান্ত আসতে পারে, যার মাধ্যমে জানা যাবে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কে কে প্রার্থী হবেন। সেখানে আমি কোন পদে প্রার্থী হবো সেটিও পরিস্কার হবে।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, দীর্ঘদিন পর চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, বহুল প্রত্যাশিত সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করায় চকরিয়া উপজেলার ইউনিয়ন থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা খুশি। তাদের আশা, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে। একইসঙ্গে মূল্যায়ন করা হবে ত্যাগীদের।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাংসদ আলহাজ জাফর আলম বলেন, সম্মেলন এটি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। আমরাও চাই তৃনমুলের নেতাকর্মীদের উজ্জেবিত করার মধ্যদিয়ে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন সফলভাবে সমাপ্ত করতে। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীরা অবগত আছেন বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের নামে সরকার বিরোধী চক্রান্তে চকরিয়ার রাজপথে কোন নেতার কী ধরণের ভুমিকা ছিল। নেতাকর্মীদের বিপদে-আপদে কোন নেতা খোঁজ-খবর নিয়েছেন। কোন নেতা জনবান্ধব, কর্মীবান্ধব। আশাকরি সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা একটি শক্তিশালী সংগঠন চকরিয়া উপজেলায় দাঁড় করাতে সক্ষম হবো।

 

 

পাঠকের মতামত: