ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ডাক্তাররা রোগী দেখেন প্রাইভেট চেম্বারে

চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পেতে রোগীদের ভোগান্তি

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত বেশিরভাগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘনের মাধ্যমে অফিস টাইমেও প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে পুরোনা বেশ কয়েকজন চিকিৎসক সরকারের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না। দিনের বেশিরভাগ সময় রোগীরা হাসপাতালের সুচিকিৎসা না পাওয়ার কারণে ভিড় জমাচ্ছে চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে। হাসপাতালে লাগোয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যেন পরিণত হয়েছে প্রাইভেট ক্লিনিকে।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া মুল্যবান ঔষুধগুলো ভাগ্যে জুটেনা সাধারণ রোগীদের। সরকারিভাবে নির্ধারণ করো নিয়ম অনুসারে সকাল ৮ টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালে আগত রোগী দেখার নিয়ম থাকলেও কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মূল পিকআওয়ার টাইম ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। আর বাকি সময় প্রাইভেট ক্লিনিকে ব্যস্থ থাকেন। ফলে উল্লেখিত অফিস টাইমে চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা পেতে রোগী এবং স্বজনদের বাড়ে ভোগান্তি।

শুধুমাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় হাসপাতালে কাটিয়ে তারা ব্যক্তিগত চেম্বারে প্রাইভেট রোগী দেখার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটি হাসপাতালের অনিয়ম ও দূর্নীতির ব্যাপারে সরেজমিনে তদন্ত করে বহুবার প্রতিবেদন দিলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ কোনও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে ৫ লাখ জনগনের সরকারি একমাত্র সেবাপ্রতিষ্ঠান চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিনিয়ত ঘটছে রোগীদের হয়রানি আর দূর্ভোগ। ৫০ শষ্যা থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়নে ইতোমধ্যে একশ সয্যায় উন্নীত বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা মারাত্বক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন হাসপাতালে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগীরা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমান সরকার চিকিৎসাখাতে যে উন্নয়ন করেছেন তা হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসকের দায়িত্ব অবেহলার কারণে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

গত দুইদিন সরজমিন ঘুরে দেখা মেলে হাঁড়-জোড়া, বাত-ব্যাথা, মেরুদণ্ড, কোমর ব্যাথা অর্থোপেডিক্স সার্জারী ও বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুজন ত্রিপুরা। তিনি সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেয়া নিয়ম অনুসারে সকাল ৮ টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রোগী দেখছেন চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ওসান সিটি মার্কেটস্থ ডাঃ শম্ভু দে এর চেম্বারে।

এছাড়াও হাসপাতালে নিয়োজিত ডাক্তারদের মধ্যে বেশির ভাগই প্রাইভেট ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্ত। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে একাধারে কর্র্মরত থাকার সুবাদে হাসপাতালে বেশিরভাগ সময় দিতে অনীহা দেখাচ্ছেন। উল্টো তাঁরা অফিস চলাকালীন সময়ে ও প্রাইভেট চেম্বারে বসে রোগী দেখার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। আবার কয়েকজন ডাক্তার স্থানীয় ঔষুধ কোম্পানীর এমআ দের সাথে যোগসাজস থাকার ফলে অফিস চলাকালীন সময়েও বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগী দেখতে চলে যান। এই অবস্থায় দিনের বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে ডাক্তারের রুমের সামনে দরিদ্র রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। এ সব অভিযোগ হাসপাতালে আগত রোগীসহ চকরিয়ার সাধারণ জনসাধারণের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোববার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের দীর্ঘ লাইন কিন্তু দেখা নেই কোনও ডাক্তারের। যেখানে বসে ডাক্তার বা রোগীর সেবা দিবেন প্রায় ডক্তার কক্ষে তালা ঝুলানো, শুধু মাত্র কয়েকজন ডাক্তার বসে সব রোগীদের কিছু প্যারাসিট্যামল, নাপা, গ্যাস্টিকের ঔষুধ লিখে দিয়ে বিদায় করে দিচ্ছেন।

রোগীদের দীর্ঘ লাইন কেন অনেকের কাছেই জানতে চাওয়া হলে তালা লাগানো রুমের ডাক্তারা গেল কোথায়? জবাবে সবাই বলল-সকাল থেকে আমরা দাঁড়িয়ে আছি কোনও ডাক্তার এসে রোগী দেখেনি। শুধুমাত্র কয়েকটা রুমে ডাক্তার দিয়ে সব রোগের রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছকি হাসপাতালের অফিস সহকারী বলেন, এখন প্রতিদিনই এরকম হয় আমরা প্রতিবাদ করলে বদলী করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়, তাই আমরা দেখেও চুপ করে থাকি। সরকার নিযুক্ত এখানে তিনজন কনসালটেন্ট প্রতিদিন রোগী দেখার কথা, কিন্তু দু’একজন কনসালটেন্ট ছাড়া বাকিরা আসে সাপ্তাহে ১দিন, আবার কেউবা দেড় দিন।

অফিস টাইমে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (টিএইচ) ডাঃ শোভন দত্ত বলেন, আমি চলতি বছরের ১০ই ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেছি। বর্তমানে হাসপাতাল তিনটি বিভাগে পরিচালিত হয়ে থাকে- বহিঃবিভাগ, জরুরি বিভাগ, আবাসন বিভাগ।

তিনি বলেন, নিয়মনীতি অনুসারে যথাসময়ে প্রত্যেক চিকিৎসককে স্ব স্ব দ্বায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছি। কিন্তু আমি অফিসিয়াল কাজে কক্সবাজার থাকায় আপনার মাধ্যমে অবগত হয়েছি, অফিস চলাকালীন সময়ে চিকিৎসকরা বাইরের চেম্বারে বসে রোগী দেখছেন। এ বিষয়ে অফিসিয়ালি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অবহিত পূর্বক ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

পাঠকের মতামত: