ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বাল্যবিয়ে কমাতে প্রয়োজন কঠোর সামাজিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::  উখিয়ার পালংখালী এবং হ্নীলার স্থানীয় আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস (১৫ অক্টোবর) উদযাপন করেছে দেশের অন্যতম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা-কোস্ট ফাউন্ডেশন।

দিনটি উপলক্ষ্যে ১৮ ও ১৯ অক্টোবর পৃথক কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন একর্ড প্রকল্প ব্যবস্থাপক তাহরিমা আফরোজ টুম্পা।

মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) উখিয়ায় পালংখালীর থাইংখালী দাখিল মাদ্রাসার হল রুমে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান কামরুন্নেছা বেবি।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালন মানে নারীদের কাজে অনুপ্রেরণা যোগানো। কর্মস্পৃহা সৃষ্টি ও চেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।

প্রধান অতিথি বলেন, একজন মা-ই তার সন্তানদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। সন্তানের পড়ালেখা তদারকির পাশাপাশি বন্ধু নির্বাচনেও মা-দের খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

নারীদের আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হওয়ার জন্য আর্থিক কর্মকান্ডে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেন কামরুন্নেছা বেবি।

তিনি বলেন, সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নারী এবং নারীদেরকেই নিজেদের ভাগ্যপরিবর্তনের লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে আগে। সচেতন ও শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে নিজেবে গড়তে হবে। নিজের অধিকার সম্পর্কেও জানতে হবে নারীদের।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পালংখালীর প্যানেল চেয়ারম্যান মুজাফ্ফর আহমেদ গ্রামীণ নারী দিবস পালনের জন্য কোস্ট ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান। বাল্যবিবাহ রোধে নারীদের সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

মুজাফ্ফর আহমেদ বলেন, সন্তান পালনসহ পরিবারের উন্নয়নে নারীদের কর্ম ও সেবাকে পরিবার ও সমাজের চালিকাশক্তি। একজন নারীই তার সন্তানদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে জাতীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারেন।

পালংখালী ইউনিয়নের নারী নেত্রী আঞ্জুমান আরা বেগম পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকে অর্থনৈতিক কাজের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানের পরিবর্তন করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি নারীদের কার্যক্রমকে জাতীয় অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, নারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি কাজের সাথে জড়িত। এ কাজের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

এর আগের দিন (১৮ অক্টোবর) টেকনাফের হ্নীলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, নারী শিক্ষা ও নারী স্বনির্ভরতায় নারীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। আমাদের সবাইকে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক তাহরিমা আফরোজ টুম্পা স্বাগত বক্তব্যে নারী দিবস উদযাপনের প্রেক্ষাপট, বাল্যবিয়ের ভয়াবহ রূপ,কারণ,ক্ষতি এবং প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।

আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসের কর্মসূচিতে পালংখালী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল আমিন, থাইংখালী দাখিল মাদ্রাসার সুপার আমিনুল ইসলাম, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক থাইংখালী শাখার অপারেশনাল ম্যানেজারা হাসিনা আক্তার, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার রাহামা আক্তার এবং সমাজসেবক হারুনুর রশিদ বক্তব্য রাখেন।

উপকারভোগীর বক্তব্যে পালংখালীর মোস্তফা খাতুন বলেন, স্বামী এবং ভাইয়ের মৃত্যুর পরে তিনি ভাইয়ের পরিবারের হাল ধরেন। দিন মজুরের কাজ করে ভাইয়ের সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। কোস্ট ফাউন্ডেশন প্রদত্ত আর্থিক ও প্রশিক্ষণ সেবা গ্রহণ করেছেন। ছাগল পালন ও কৃষি কাজের মাধ্যমে সংসার চালাচ্ছেন।

হ্নীলার জেলে পাড়ার মুক্তা ধর কোস্ট ফাউন্ডেশনের দেয়া অর্থ দিয়ে ছাগল পালনের সফলতা বর্ননা করেন। নাফ নদীতে তার স্বামীর মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি পরিবারের অর্থনীতিতে যে ভূমিকা পালন করছেন তা নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ফসল উৎপাদন, সবজি চাষ ও হাস-মুরগী পালনের মাধ্যমে পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আগের চেয়ে তিনি অনেকটা স্বাবলম্বী।

কোস্ট একর্ড প্রকল্পের সাইফুল ইসলাম এবং রহিম উল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংস্থার অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, জার্মানভিত্তিক দাতা সংস্থা মাল্টিজার ইন্টারন্যাশনালের অর্থায়নে কোস্ট ফাউন্ডেশন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর হতে স্থানীয় জনগোষ্ঠির জন্য কোস্ট একর্ড নামক তিন বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আগমনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত উখিয়া উপজেলার পালংখালী এবং টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের স্থানীয় একহাজার পরিবারের স্থায়িত্বশীল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়নের লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

করোনা মহামারীতে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গিয়েছে বাল্যবিবাহ। দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। সম্প্রতি কোস্ট ফাউন্ডেশন কক্সবাজার অঞ্চলে এক গবেষনা চালায়। সেখানে দেখা গেছে, কক্সবাজারের বাল্যবিয়ের গড় হার ৫৩%, যেখানে সারা দেশে এই হার ৫১.৪% এবং উখিয়ায় বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি।

পাঠকের মতামত: