ঢাকা,রোববার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২৪ এর গণহত্যার বিচার আগে করতে হবে, তারপরে অন্যকাজ -কক্সবাজারে জামায়াত আমীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
২৪ এর গণহত্যার বিচার অবশ্যই আগে করতে হবে, তারপরে অন্যকাজ। তা না হলে শহীদের রক্তের সাথে বেইমানী করা হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
শনিবার দুপুরের কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত জামায়াতের এক বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রাজনীতির সাথে চাঁদাবাজি, দুর্বৃত্তের কোন সম্পর্ক নেই এবং এ ধরণের অপকর্ম থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, ‘আগে যেমন চাঁদাবাজি ছিল, এখনও আছে। এ চাঁদাবাজি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’
‘জামায়াত বাংলাদেশের সবচেয়ে মজলুম দল’ উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো নিবন্ধন ফিরে পাইনি। জামায়াত একটা মাত্র দল, যে দলের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছে। দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এই দল আল্লাহর আইন চায়। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে কোন অপকর্ম জামায়াত ইসলামীকে স্পর্শ করেনি। কিন্তু যে দলই অতীতে ক্ষমতায় এসেছে তারা দুর্নীতি, লুটপাট করেছে। জামায়াতের কারও বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ নেই।’
এসময় জামায়াত আমীর বলেন, ‘যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। কারো উস্কানিতে আমরা কারও ক্ষতি করতে দেবো না। পলাতক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজির এখন দেশের বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করছে। নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।’
দেশবাসীসহ দলীয় নেতাকর্মিদের এ বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান জামায়াতের আমীর।  একই সঙ্গে ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনে আগামী নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চান তিনি।
কক্সবাজার কি সৎ মায়ের সন্তান এমন প্রশ্ন করে জামায়াত আমীর বলেন, ‘পর্যটন রাজধানী হিসেবে কক্সবাজার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হলেও এখানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। কক্সবাজার জেলা ইসলামী ছাত্র শিবির আজ সেই দাবি তুলেছে।  আমি মনে করি, বৈষম্যের শিকার জেলাগুলোতে উন্নয়ন পৌঁছে দেয়া জামায়াতের মূল দায়িত্ব।’
জেলা জামায়াতের আমীর নুর মোহাম্মদ আনোয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও কক্সবাজার-০২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ শাহাজাহান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ আহসান উল্লাহ, চট্টগ্রাম  মহানগর  জামায়াতের  আমীর  শাহাজাহান  চৌধুরী, সাবেক জেলা আমীর মোস্তাফিজুর রহমান, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, জেলা নায়েবে আমীর অ্যাড. ফরিদ উদ্দিন ফারুকী, জেলা সহ-সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, শামশুল আলম বাহাদুর, কর্মপরিষদ সদস্য শফিকুল হক জিহাদি, শহর আমীর আবদুল্লাহ আল ফারুক, সাবেক মেয়র সরোয়ার কামাল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. সলিম উল্লাহ বাহাদুর, শহিদুল আলম বাহাদুর, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি পরিমল কান্তি শীল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কর্মী সম্মেলনকে ঘিরে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে সকাল থেকে সম্মেলনস্থলে জড়ো হতে থাকেন দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মি ও সমর্থক। সকাল ৯ টার মধ্যেই হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে  কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সম্মেলনস্থল। জনস্রোত মাঠ ছাড়িয়ে প্রধান সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। মানুষের চাপে এসময় প্রধান সড়কে যান চলাচল  বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।
এবারের কর্মী সম্মেলনে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশগ্রহন করেন। তবে নারীরা কলেজের মাঠের বিপরীতে অবস্থিত ইলিয়াস মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসে নেতৃবৃন্দের কথা শুনেন।
বিপুল লোকের সমাগমকে শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও নিরাপত্তার সাথে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সরকারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জামায়াতের নিজস্ব প্রায় এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত ছিলেন।
এর আগে, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক সাংগঠনিক সফরে কক্সবাজারে যান জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী। সে সময় সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট। এরপর ধীরে ধীরে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জামায়াতে ইসলামী।

পাঠকের মতামত: