ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

১৪ ট্রলারসহ ৫৭ মাঝিমাল্লা অপহরণ, কক্সবাজার-টেকনাফ রুটে জলদস্যুদের নিত্য উৎপাত

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :: কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরে ১৪টি মাছধরা ট্রলারসহ ৫৭ মাঝিমাল্লাকে অপহরণ করেছে জলদস্যুরা। গতকাল রোববার সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সময়ে এঘটনা ঘটে। কক্সবাজারের পাটুয়ারটেক থেকে টেকনাফের সেন্টমার্টিন পর্যন্ত অঞ্চলের উপকূলবর্তী গভীর বঙ্গোপসাগরে প্রায় ১শ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে চলে এই জলদস্যুতা। আগের দিন শনিবারও বঙ্গোপসাগরের একই অঞ্চলে প্রায় ৩০টি মাছধরা ট্রলার মাঝিমাল্লাসহ অপহরণের শিকার হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাগরে মাছধরা বন্ধ করে সকল ট্রলার কূলে ফিরে আসছে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আজ সোমবার সকালে ট্রলার মালিকদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি সূত্র জানিয়েছে, রোববার মুক্তিপণ আদায়ের জন্য জলদস্যুদের হাতে আটক ট্রলারগুলোর মধ্যে ৮টি কক্সবাজারের, ৪টি চট্টগ্রামের ও ২টি বরগুনার পাথরঘাটা এলাকার। এরমধ্যে কক্সবাজারের আবু সোলতান নাগু কোম্পানীর মালিকানাধীন এফবি ছেনুয়ারা ও এফবি ভাই ভাই নামের ২টি ফিশিং বোট ৪ জন করে মোট ৮ জন মাঝিমাল্লাসহ, নুনিয়াচঢ়ার মোজাম্মেল কোম্পানীর এফবি মায়ের দোয়া ৩ মাঝিমাল্লাসহ, একই এলাকার সোহেলের মালিকানাধীন বোট ৪ জন মাঝিমাল্লাসহ, নতুন বাহারছড়ার ওসমান গনি টুলুর মালিকানাধীন এফবি নিশান-১ ও ২ ফিশিং বোট দুটি ১৮ জন মাঝিমাল্লাসহ অপহরণ করা হয়েছে।

এছাড়া কক্সবাজার শহরের এন্ডারসন রোডের কাইয়ূম সওদাগরের মালিকানাধীন এফবি রিফাত ও এফবি রফিকুল হাসান নামের ২টি ফিশিং বোট ৩ জন করে ৬ জন মাঝিমাল্লাসহ অপহরণের শিকার হয়। একই সময়ে বরগুনা পাথরঘাটা এলাকার এফবি ইদ্রিস ও এফবি জলপুরী নামের দুটি ট্রলারও ৩ জন করে মাঝিমাল্লাসহ অপহরণ করা হয়।
রোববার একই এলাকায় এফবি কিংশ ফিশার-১ ও ২ নামের ২১০ অশ্বশক্তি সম্পন্ন দুটি ট্রলারসহ চট্টগ্রাম এলাকারও ৪টি মাছধরা ট্রলার মোট ১২জন মাঝিমাল্লাসহ অপহরণের শিকার হয়েছে। বর্তমানে জলদস্যুরা এ শক্তিশালী ট্রলার দুটি ব্যবহার করে সাগরে ফিশিং ট্রলারসহ মাঝিমাল্লাদের জিম্মি করছে বলে জানায় ট্রলার মালিক সমিতি সূত্র।
জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ চকরিয়া নিউজকে জানান, জেলেবেশী ডাকাতদল প্রথমে ট্রলারের কাছে আসে এবং পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রলারের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ডাকাতেরা ট্রলারসহ মাঝিমাল্লাদের জিম্মি করার পর কয়েকজন মাঝিমাল্লাকে রেখে বাকীদের অন্য ট্রলারে তুলে ছেড়ে দেয়। এরমধ্যে বেশ কিছু জেলে রাতে কূলে ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, অপহরণের শিকার ট্রলারসহ মাঝিমাল্লাদের মুক্তির বিনিময়ে ট্রলারপ্রতি ৪/৫ লাখ করে পণ দাবি করছে জলদস্যুরা। আগেরদিন শনিবার একইভাবে অপহরণের শিকার ৩০টি ট্রলার ২/৩ লাখ হারে মুক্তিপণ দিয়ে একদল জলদস্যুর কাছ থেকে মুক্ত করার পর বেশ কয়েকটি ট্রলার ফের আরেক দল জলদস্যুর কবলে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে টানা গত ২৫ দিন ধরে জলদস্যুদের এ তাণ্ডব চলছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো জানান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের এমন কোন মাছধরা ট্রলার নেই, যেটি এই সময়ে জলদস্যু আক্রান্ত হয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাগরে মাছধরা বন্ধ করে ট্রলারগুলোকে কূলে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং এবিষয়ে আলোচনার জন্য সোমবার সকাল ১১টায় সমিতির জরুরি বৈঠকও ডাকা হয়েছে বলে তিনি জানান।
অপহরণের শিকার ট্রলার মালিক ও জেলেরা জানান, বঙ্গোপসাগরের পাটুয়ারটেক থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখন জলদস্যুদের নিত্য উৎপাত চলছে। এই বিস্তীর্ণ এলাকা ৩টি জলদস্যু গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর একেকটি গ্রুপে ৭০ থেকে ১শ জন পর্যন্ত সদস্য রয়েছে। এ জলদস্যু গ্রুপের একটির সাথে অপর গ্রুপের সম্পর্কও রয়েছে বলেও ধারণা ট্রলার মালিকদের।
জেলেরা চকরিয়া নিউজকে আরো জানান, জলদস্যুদের তিনটি গ্রুপের সদস্যদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ। এই ৩ জলদস্যু বাহিনীর সদস্যরা মূলত চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়ার রাজাখালী, মহেশখালী শাপলাপুর, ধলঘাটা ও মাতারবাড়ি এলাকার এবং জলদস্যু গ্রুপের অধিকাংশই সদস্যই এ পেশায় নবীন বলেও জানান জেলেরা। ট্রলার মালিকরা সাগরে ডাকাতি রোধে কোস্টগার্ডের তৎপরতা বৃদ্ধি, সী-গার্ড গঠন, ড্রোন মোতায়েন এবং মেরিন র‌্যাব প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব দেন। ইয়াবা রোধে যেভাবে র‌্যাব সাগরে দায়িত্ব পালন করে সেভাবেই জরুরি ভিত্তিতে সাগরে র‌্যাবের তৎপরতা বৃদ্ধিরও দাবি তুলেন তারা।
এবিষয়ে কক্সবাজারস্থ নবগঠিত র‌্যাব-১৫ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, সাগরে ডাকাতির ঘটনা শুনেছি। সোনাদিয়া থেকে জলদস্যুদের আমরা নির্মূল করেছি। কিন্তু গভীর সাগরে গিয়ে জলদস্যু দমনের অনুমতি পাওয়া গেলে র‌্যাব তাই করবে।

পাঠকের মতামত: