জসিম মাহামুদ,টেকনাফ ::
এবার আত্মীয়দের ডাকে নিরাপদ আশ্রয় ও খাবারের আশ্বাস পেয়ে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসছেন অনেক রোহিঙ্গা। সেনারা অনেক গ্রাম অবরুদ্ধ করে রাখায় কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। ফলে তাদের মজুদ করা খাবার শেষ হয়ে যায়। তারা জানতে পারেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ ও খাবার দেয়া হচ্ছে। তাই খাবারের আশায় টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসছেন তারা।
গতকাল বুধবার সকালে সাবরাং নায়া পাড়া সীমান্ত দিয়ে শত শত রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছেন। এছাড়া টেকনাফের জাদিমুড়া, নাইট্যংপাড়া লম্বাবিল ও খারাংখালী পয়েন্ট দিয়েও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ মিয়ানমার বুচিডং (বুথেডং) টাউনশিপ এলাকার। শাহপরীর দ্বীপের ওপারে মিয়ানমারের ডংখালি নামক চর এলাকায় হাজারো রোহিঙ্গারা তাবু টানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এপারে আসা লোকজনের সেখানে অনেকের আত্মীস্বজন রয়েছে। এপার থেকে ডংখালিতে আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে মোবাইলের মাধ্যমে ত্রাণ ও খাবারের বিষয়ে আশ্বস্থ করে নিয়ে আসা হচ্ছে।
বুধবার বিকালে শাহপরীর দ্বীপ ভাঙ্গায় এমন একজনের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তার নাম বশির আহম্মদ (৬৫)। বাড়ি মিয়ানমার বুচিডং (বুথেডং) টাউনশিপ ঘোদাম পাড়া।
তিনি বলেন, গত ২০ দিন আগে তার চাচাতো ভাই আলম পরিবারকে নিয়ে শাহপরীর দ্বীপে অনুপ্রবেশ করে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, পর্যন্ত বাংলাদেশে যারা পালিয়ে এসেছে তাদের খাবারের কোন অভাব নেই। এই কথাটি আমার জেঠাত ভাই হামিদ, কাসেমকে শুনালে তারা বললো বাংলাদেশ যেভাবে হওক আমাদের নিয়ে যেতে বল। পরে দিন তার সাথে কথা বলে আমাদের তিন পবিারের ২৮ জন রবিবার সন্ধায় রওনা দিলাম। সারা রাত হেটে ও পৌছতে না পেরে পাহাড়ের গুহায় অবস্থান করি। পরের দিন অবশেষে ডংখালি চরে পৌছে। সেখানে এসে দেখি ছোট ছোট তাবুতে প্রায় ১০ হাজারে বেশি মানুষ বসবাস করছে।ও চরে একদিন থেকে আলমের সাথে যোগাযোগ করে পরের দিন এক লক্ষ ৫০ হাজার কিয়াট দিয়ে একটি ছোট মাছ ধরার নৌকা পাঠিয়ে আমাদের নিয়ে আসে। সেখানে আরো আমার পরিচিত লোকজন রয়েছে।
হারিয়া খালী সেনা ক্যাম্পে দেখা হয় বশির আহম্মদের সাথে, স্ত্রীসহ ৪ সন্তান নিয়ে এপারে পালিয়ে আসেন গত রাতে।
তিনি আরও বলেন, তার এক মাস আগে পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল তার ছোট ভাই নুর মোহাম্মদ। সে এপারে আসার পর থেকে মিয়ানমার পরিস্থিত জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতো। তখন তারা গ্রাম ফেলে ডংখালী চরের অবস্থান করছিল। সেখানে তাদের খাবারের খুব বেশি অভাব ছিল। তখন তার ছোট ভাই তাদেরকে চলে আসতে বলেন। কেননা বাংলাদেশে আসার পর থেকে খুব বেশি ভাল ছিল। এপারে কিছু কাজ করতে হয় না, প্রতি দিন চাল, ডাল, তেল ও মাঝে নগদ টাকাও পেয়ে থাকি। এখানে শুধু একটু কষ্ট হয় লাইনে দাড়িতে হয়। তার কথা শুনার পরে ভেবেছিলাম সেখানে কষ্ট করে থাকার চেয়ে নৌকা করে এপারে আমিও চলে আছি।
রাখাইনের মংডু হাসসুরাতার নাজমা খাতুন জানান, এক সপ্তাহ আগে রাতের অন্ধকারে গ্রামের কয়েকশ’ লোক একসঙ্গে অবর¤œদ্ধ রাখে, ফলে আমাদের খবারের খুব অভাব হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া আত্মীয়স্বজন ফোন করে বলেছিল সেখানে না খেয়ে মরে এপারে চলে আসতে। তাই রোহিঙ্গাদের একটি দলের সঙ্গে পালিয়ে হাঁটা শুরু করি। পাচঁ দিন হাটার পর সীমাšত্ম দিয়ে ঢুকে টেকনাফ লেদা ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নিই।
লম্বাবিল এলাকার মো. আলম পরিবারের ১০ সদস্য নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। নয়াপাড়া ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। তিনি জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ তাদের গ্রাম। বাড়িতে কোনো খাবার মজুদ ছিল না। খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটছিল। মাঝেমধ্যে তাদের ডেকে নিয়ে ত্রাণ দেয়া হয়। ত্রাণ দেয়ার দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে পরে আবার সে ত্রাণ কেড়ে নেয় সেনা ও তাদের সঙ্গে থাকা রাখাইনরা। শেষে ক্ষুধার জ্বালায় পালিয়ে বাংলাদেশের পথ ধরেন তারা। এখন এখানে এসে ভাল হয়েছে, কেননা জন প্রতি ত্রাণ ও খাবার পাচ্ছি। চিন্তা করছি ওপারে আমার আরও কয়েকজন আত্মীয়স্বজন রয়েছে। তাদেরও ফোনে মাধ্যমে বাংলাদেশে চলে আসতে বলেছি। এখানে যে ত্রাণ দিতেছে তা খাওযার পর বাকি গুলি বাহিরেও বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করে টাকা জমা করা সম্ভব।
মংডু বড়গজবিল এলাকার আজগর আলী বলেন, পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে পালিয়ে এসেছেন তিনি। তিন দিন আগে রাতের অন্ধকারে গ্রাম ছেড়েছিলেন তারা। তিন দিন হেঁটে রাখাইনের রাইম্ম্যাবিল পৌঁছেন। পথে খাবারের অভাবে খুব কষ্ট পেয়েছেন তারা। পথিমধ্যে জনশূন্য এমন গ্রাম পেয়েছেন। নৌকায় নাফ নদী পেরিয়ে নৌকায় পৌঁছেন টেকনাফের জহাদিমুড়া এলাকায়। এখানে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মাওলানা তাদের দেড় হাজার টাকা ও খাবার দেন। এপারে এসে বেশ ভালো হয়েছে, কেননা ত্রাণ, খাবার ও নগদ টাকাও পাওয়া যাচ্ছে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, এখন যেসব রোহিঙ্গা আসছেন তারা সবাই খবারের অভাবে চলে আসছেন। তাছাড়া এপার থাকা ওদের আত্মীয়স্বজন তাদেরকে ফোনের মাধ্যমে উৎসাহিত করছে। কেননা বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা এখন ভাল মতো ত্রাণ ও খাবার পাচ্ছে।
পাঠকের মতামত: