নিজস্ব প্রতিবেদক :: পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই টেকনাফের সেন্টমার্টিন জেটিতে টোল আদায়ের নামে শুরু হয়েছে লুটপাট। জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিলেও নির্ধারিত টোলের হারের ১৫ গুণ বেশী টোল আদায় করছে ইজরাদার কর্তৃপক্ষ।
এতে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা। এব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ ও দুদক চেয়ারম্যান বরাবরে আভিযোগ করেও কোন প্রতিকার হচ্ছে না বলে জানালেন সেন্টমার্টিনের এক রিসোর্ট পরিচালক।
টেকনাফ সেন্টমার্টিনের রূপসী বাংলা রিসোর্টের পরিচালক সোয়াইব শরীফ কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ ও দুদক চেয়ারম্যান বরাবরে আভিযোগে জানান, কক্সবাজার জেলা পরিষদ কর্তৃক সেন্টমার্টিন জেটির ইজরাদার মেসার্স জাহান এন্টারপ্রাইজ প্রতিনিয়ত যাত্রী-পর্যটক উঠা নামায় নির্ধারিত টোলের চেয়ে ১৫ গুণ পর্যন্ত বেশী নেওয়ার কারণে মৌসুমের শুরুতে পর্যটকরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। যার ফলে দেশী বিদেশী পর্যটকসহ স্থানীয় জনসাধারণের সাথে প্রতিদিন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে আসছে। বিভিন্ন মালামাল থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করায় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েই চলেছে।
জেলা পরিষদ থেকে টোল আদায়ের হার নির্ধারণ করে দিলেও কোন সাইন বোর্ড টাঙ্গানো হয়নি। এছাড়া পর্যটকদের টোল আদায়ের কোন টোকনও দেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগ করেও প্রতিকার না পাওয়ায় ইজরাদার আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যেকোন সময় বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চলতি সনের জন্য জেলা পরিষদ সেন্টমার্টিন জেটিতে টোল আদায়ের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে কত টাকা তা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
জেলা পরিষদের তালিকা অনুযায়ী জনপ্রতি টোলের হার ৪ টাকা। এখন আদায় করা হচ্ছে জনপ্রতি ৫০ টাকা। হাঁস ও মুরগী প্রতিটি ১ টাকা হার হলেও আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা করে। ২০ কেজির অধিক হলে ২টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে এতে আদায় করা হচ্ছে ৬০ টাকা করে। কাঁচা মরিচ প্রতি ৩০ কেজি ১৫ টাকা হলেও আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা করে। ছাগল ও ভেড়া প্রতিটি ৫ টাকা নির্ধারণ করলেও আদায় করা হচ্ছে ৭০/৮০ টাকা করে। যাত্রী ছাড়াও ৩৭ টি পণ্যের টোল নির্ধারণ করা হলেও প্রতিটিতে ১৫ গুণ বেশী টোল আদায় করা হচ্ছে রশিদ বিহীন।
স¤প্রতি ঢাকা থেকে এসে সেন্টমার্টিন ঘুরে আসা পর্যটক তানভীর আহমদ জানিয়েছেন, জেটিতে টোল আদায়ের নামে যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে তা নজিরবিহীন। শুধু তাদের কারণে অনেকেই সেন্টমার্টিন যেতে চাইবে না। পর্যটকদের হয়রানি করা হলে পর্যটক বিমুখ হয়ে পড়বে সেন্টমার্টিন। অনেক অনুরোধ করার পরও আমার একটি বড় ব্যাগ থেকে ৪০ টাকা টোল আদায় করেছে। টাকা দিতে না চাইলে দূর্ব্যবহার করায় টাকা দিতে বাধ্য হয় পর্যটকরা। এমন নৈরাজ্যকর অবস্থা দেশের কোন পর্যটন স্পটে আছে কিনা সন্দেহ।
কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন বলেন, অনেক কষ্ট করে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যায়। জেটিতেই যদি হয়রানির শিকার হয় তা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। এটি কক্সবাজারের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে দ্রæত হস্তক্ষেপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। এমনিতে দীর্ঘদিন পর্যটন বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই শিল্প। এখন যদি জেটিতেই টোল আদায়ের নামে হয়রানি করে তখন কক্সবাজারে পর্যটকই আসবে না। ইজরাদাররা যা করছে তা পর্যটন শিল্পের সাথে ষড়যন্ত্রের সামিল। তারা জেলা পরিষদের নির্ধারিত মতে টোল আদায় করতে দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানাচ্ছি।
পাঠকের মতামত: