ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

সিরাজুল মোস্তফা ও মুজিবের নেতৃত্বে চাঙ্গাভাব তৃণমুল আওয়ামী লীগে

12565636_643468185791686_8230915729861755309_n-300x169এমশাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥

কালে কালে বয়স বাড়লেও দীর্ঘ ১৩ বছর পর সম্মেলণ সম্পন্ন হওয়ায় এবার প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে কক্সবাজার জেলার তৃণমুল আওয়ামী লীগে। দীর্ঘ একযুগ পর গত রোববার ৩১ জানুয়ারী কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে সভাপতি পদে এড. সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক পদে মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যানকে ঘোষণা করায় চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে পুরো জেলার নেতা-কর্মীদের মাঝে।

সম্মেলণের দিন ক্ষণ ঘোষণার পর থেকে তৃণমুলের নেতাকর্মীরা আশা বুক বেঁেধ ছিলেন কারা পড়বেন বিজয়ের মালা। এনিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণও চলে। এর আগে তৃণমুল পর্যায়ে আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত এবং কাউনিসলর তালিকাও চুড়ান্ত করা হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে এরই মধ্যে নানামুখী তৎপরতা শুরু করে অনেকে। ফলে পুরো জেলায় আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। কাউন্সিল ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠে উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ। শুরু হয় লবিং গ্রুপিং। গুরুত্বপূর্ন দু’টি পদ পেতে অনেকেই মাঠে মেনে পড়েন।

দলীয় সূত্রমতে, সর্বশেষ ২০০৪ সালে জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়। ওই কাউন্সিলে সভাপতি হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক একেএম মোজাম্মেল হক ও সাধারণ সম্পাদক হক সালাহ উদ্দিন আহমেদ সিআইপি। ওই সম্মেলণ সম্পন্নের ৬ মাসের মাথায় মারা যান সভাপতি মোজাম্মেল হক । এর পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন দলের সহ-সভাপতির পদে থাকা এড.একে আহমদ হোসেন। বিভক্ত জেলা নেতৃবৃন্দকে এক কাতারে আনতে ও দলকে সুসংগঠিত করতে কেন্দ্র থেকে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের ঘোষনা দেয় হাইকমান্ড। এ ঘোষনার পরপরই আরো কয়েকবার সম্মেলণের দিন ক্ষণ ঠিক করা হলেও তা বার বার পিছিয়ে যান। সর্বশেষ দলীয় হাইকমান্ডের কড়া নির্দেশ পাওয়ার পর মাঠে নেমে পড়েন নেতারা।

৩ বছর পর পর কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও একাধারে সভাপতি ছিলেন একে আহমদ হোসেন ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত চলেছে জেলা আওয়ামী লীগের পথচলা। যে কারণে তৃণমূল থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে ধরে ফাটল। বিশ্বাস অবিশ্বাস ও একে অপরের প্রতি কাদা ছুড়াছুড়িতে দলের ইমেজ অনেকটা নষ্ট হয়েছিল। যা ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ শিবিরের একেবারে দুঃস্বপ্ন, অগ্রহনীয় এবং পক্ষপাতপুষ্ট।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীরা জয়ী হতে ভোটার ও কর্মীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরাঘুরি শুরু করেন। তারা জয়ী হওয়ার জন্য যার যার থেকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন।

তবে দলের কাউন্সিলরদের বরাবরই কথা ছিলো, যারা দলের জন্য ত্যাগী, দুঃসময়ের সাথী ও দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয়, তাদেরকেই নেতৃত্বে বেছে নেবেন তারা।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলীয় হাইকমান্ডই নেতা নির্বাচন করে দিয়েছেন ৩১ জানুয়ারি সম্মেলণে। এতে করে তৃণমুলের নেতাকর্মীরা খুশি হয়েছে। বর্তমান সভাপতি পদে এড.সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক পদে মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যানকে নির্বাচিত করেন। বিজয়ী হওয়ার পর থেকে পুরো কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় ও নেতৃত্বে দলের মধ্যে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। সম্মেলণের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই দলের মধ্যে চলে আসছিল চাঙ্গাভাব। সেই চাঙ্গাভাব অব্যাহত আছে। এমনটাই মনে করেন কর্মীরা।

আওয়ামী লীগ শিবিরের অনেকের মুখে শুনা যাচ্ছে বর্তমান সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান নৌকার হাল ভালভাবেই বাইছেন। আর কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে উৎসাহ উদ্দীপনা। এড.সিরাজুল মোস্তফা ও মুজিবুর রহমানের সমর্থিত নেতা ও কর্মীরাও নৌকা ও শেখ হানিসাকে শক্তিশালী করতে তাদের ভালবাসার টানে জোরে শোরে ছুটে আসছেন। কক্সবাজার সদর উপজেলা পর্যায়ের এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, সত্যি কথা বলতে কি এড.সিরাজুল মোস্তফা ও মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পুরো জেলায় আওয়ামী লীগের অবস্থান আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক ভাল হচ্ছে।

এদিকে, এই জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দলীয় হাইকমান্ডের আন্তরিকতায় এরই মধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন করা হয়েছে। গ্রুপিং-লবিংকে পাত্তা না দিয়ে ত্যাগি ও একনিষ্ট নেতাদের সমন্বয়ে এই সম্মেলন শেষ করায় দলীয় হাইকমান্ডকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে তৃণমুল নেতাকর্মীরা।

দলীয় সুত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এড.সিরাজুল মোস্তফা ও মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সকল গ্রুপের নেতৃবৃন্দ সকল কিছু ভুলে দলের স্বার্থে একসাথে কাজ করতে যাচ্ছেন।

তৃণমুলের অনেক নেতাকর্মী বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এড.সিরাজুল মোস্তফা ও মুজিবুর রহমানের বিকল্প এড.সিরাজুল মোস্তফা ও মুজিবুর রহমান।

তাদের মতে,বিশেষ করে তৃণমুলের নেতা-কর্মী ও জনসাধারণের মনে প্রাণে জায়গা করে নিতে সমর্থ হয়েছেন এড.সিরাজুল মোস্তফা ও মুজিবুর রহমান।

মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতা জানান, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বর্তমান সভাপতি এড.সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের মত কেহই জনগণের এত কাছে আসতে পারেননি। তারা স্বল্প সময়ের মধ্যেই দলীয় কোন্দল দুর করাসহ জেলাবাসির মন ইতোমধ্যে জয় করতে পেরেছেন।

নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান জানান, আমি দুই দুই বার কক্সবাজার পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। এবার দলীয় হাইকমান্ড আমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছেন বলে আমি ধন্য। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। জনগণের পাশাপাশি আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করাই আমার ধ্যান।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমার কক্সবাজার জেলায় আর কোনদিনও দলের মধ্যে গ্রুপিং লবিং থাকবে না। আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী এবং তৃণমুল কর্মীদের মূল্যায়ন করতেই খুব অল্প দিনের মধ্যেই জেলা আওয়ামী লীগে একটি সুন্দর, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য কমিটি উপহার দেয়া হবে।

নব নির্বাচিত সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, দলীয় হাইকমান্ড আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন বলে আমি ধন্য। র্নিাচিত হওয়ার পর থেকে পূর্ণ তৎপরতার সাথে নিরলসভাবে সাংগঠনিক কাজ করে যাচ্ছি। আর এ কাজে নেতৃত্ব ও সহযোগিতা করছেন সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর এত লোকের উপস্থিতিতে কখনোই তৃণমুল নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতিতে সম্মেলণ হয়নি। এবারের সম্মেলণ দেখে কেন্দ্র থেকে আসা দলীয় নেতারা ও জেলার সাধারণ মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

পাঠকের মতামত: