ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

সিনহা হত্যা মামলায় দুই বিচারকের সাক্ষ্য গ্রহণ

ইমাম খাইর, কক্সবাজার ::
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় এবার সাক্ষ্য দিয়েছেন কক্সবাজার আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ ও মোঃ দেলোয়ার হোসেন শামীম।

বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল তাদের এ সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দুই বিচারকের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।

জবানবন্দী গ্রহণের পাশাপাশি তাদের জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীগণ।

সিনহা হত্যা মামলার ১৫ জন আসামীর মধ্যে ১২ জনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন তামান্না ফারাহ ও মোঃ দেলোয়ার হোসেন শামীম।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার ষষ্ঠ দফায় তৃতীয় দিনের সাক্ষ্য দিয়েছেন দুই বিচারক।

বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহকে দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। পরে সাক্ষ্য দেন আরেক জন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. দেলোয়ার হোসেন শামীম।

পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য আগামী ১৫, ১৬ ও ১৭ অক্টোবর দিন ধার্য্য করেছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ মামলার ১৫ জন আসামিকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আদালতে নিয়ে আসা হয়।

গত মঙ্গলবার এই মামলায় ১৪ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত মোট ৫৯ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, আজ সিনহা হত্যা মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ ও দেলোয়ার হোসেন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা সিনহা হত্যা মামলার ১৫ জন আসামির মধ্যে ১২ জনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

২০২০ সালের গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনায় ৫ আগস্ট টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।

যার মামলা নম্বর : এসটি-৪৯৩/২০২১ ইং, জিআর মামলা নম্বর : ৭০৩/২০২০ ইং, টেকনাফ মডেল থানা মামলা নম্বর : ৯/২০২০ ইং।

র‍্যাব-১৫কে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) র‍্যাব-১৫ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ খায়রুল ইসলাম।

সিনহা হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১২ জন আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

৩ জন আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেননি। তারা হলো : টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও কনস্টেবল সাগর দেব। চার্জশীট জমার পর গত ২৪ জুন কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করে।

গত ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত এ মামলায় আরো মোট ৫৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন করা হয়। আগে আরো যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা হলেন-মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম সিফাত, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আমিন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও হাফেজ শহীদুল ইসলাম, আবদুল হামিদ, ফিরোজ মাহমুদ ও মোহাম্মদ শওকত আলী, হাফেজ জহিরুল ইসলাম, ডা. রনধীর দেবনাথ, সেনা সদস্য সার্জেন্ট আইয়ুব আলী, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মোঃ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী, মোক্তার আহমদ, ছেনোয়ারা বেগম, হামজালাল, আলী আকবর, ফরিদুল মোস্তফা খান, বেবী ইসলাম, সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মোঃ মুনতাসীর আরেফিন, সার্জেন্ট মোঃ মোক্তার হোসেন, কর্পোরাল নুর মোহাম্মদ, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সৈয়দ মঈন, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আবু জাফর এবং লেন্স কর্পোরাল মোঃ রুহুল আমিন, আহমদ কবির মনু, ধলা মিয়া, সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট মোঃ জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট আনিসুর রহমান, কনস্টেবল কামরুল হাসান, রামু সেনানিবাসের ১০, এমপি ইউনিটের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ইমরান হাসান, র‍্যাব-১৫ এর এএসআই নজরুল ইসলাম, এসআই সোহেল সিকদার, পুলিশের কনস্টেবল শুভ পাল, এসআই মোঃ আমিনুল ইসলাম ও একই থানার কনস্টেবল পলাশ ভট্টাচার্য, জব্দ তালিকার সাক্ষী কনস্টেবল উসালা মার্মা, সেনা সদস্য হীরা মিয়া, র‍্যাব-১৫ এর নৌবাহিনীর সদস্য আবু সালাম, কাউন্টার ম্যানেজার নবী হোসেন, আবুল কালাম ও শহীদ উদ্দিন, সিনহাকে খুনের আগে-পরে বিভিন্ন জনের মোবাইল ফোন রেকর্ডকারী গ্রামীণ ফোনের প্রতিনিধি মোঃ আহসানুল হক, রবি অপারেটরের প্রতিনিধি সৈকত আহমদ শিপলু, রাসায়নিক পরীক্ষক মিজানুর রহমান ও পিংকু পোদ্দার, কনস্টেবল সাখাওয়াত হোসেন, এসআই বাবুল মিয়া, এসআই রাশেদুল হাসান, এসআই হাশেম, এসআই মোহাম্মদ মুছা, এসআই আবদুল জলিল, এসআই আবদুল্লাহ আল হাসান, এএসআই মোঃ বাবুল মিয়া, এসআই নাজমুল হোসেন এবং এসআই সুমন কান্তি দে।

মামলার চার্জশীটের ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮১ নম্বর পর্যন্ত সাক্ষীকে সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য সমন দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) র‍্যাব-১৫ সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আমিনুল হক এবং দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) র‍্যাব-১৫ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ খায়রুল ইসলামকে আদালতে সাক্ষ্য দিতে এখনো সমন দেওয়া হয়নি।

গত ২৩ আগস্ট কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

পাঠকের মতামত: