ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সাবাস নির্বাচন কমিশন! অবাক জনগণ!

ইউপি নির্বাচন ২০১৬

m.r-mahmod,,::: এম.আর মাহমুদ ::::

বহু প্রত্যাশিত ইউপি নির্বাচন ইতিমধ্যে শেষ হতে যাচ্ছে। আগামী ৪ জুন’১৬ইং শনিবার ৬ষ্ঠ ধাপের নির্বাচনের মাধ্যমে সারাদেশের তৃণমূলের ইউপি নির্বাচন শেষ হবে। দলীয় প্রতীকে প্রথম ইউপি নির্বাচনে যা হয়েছে। তা ভোটারদের জন্য উচিত শিক্ষা বলাই যথার্থ। মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে অনেক অযোগ্য প্রার্থীকে দলীয় প্রতীক দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজের যোগ্যতা বলে বাজিমাত করতে দেখা গেছে। কিছু কিছু ইউনিয়নে ভোটারেরা পুরানো দাগি ও সন্ত্রাসীদের ভোট দিয়ে মনের ক্ষোভ মিটাতেও ভুল করেনি।

অযোগ্য প্রার্থীদের কাছে দলের প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে ২টি প্রধান রাজনৈতিক দল যা করেছে তা নিয়ে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাহীন ২ দলকে পরবর্তীতে অনেক খেসারত দিতে হবে বলে অভিজ্ঞজনদের অভিমত। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। বেশুমার মা-বোন ইজ্জত হারিয়েছে। দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন প্রথা চালু করতে গিয়ে সারাদেশে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। কোন কোন এলাকায় বেশক’জন প্রার্থীও নিহত হয়েছে। তারপরও বর্তমান সরকারের আমলে দেশবাসী নতুন কিচিমের একটি নির্বাচন দেখেছে। নির্বাচন কমিশনের কথাবার্তা শুনে অনেকে মন্তব্য করতে শোনা গেছে, দেশের মানুষ কি এক শৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে গেছে। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এ প্রবাদটির যথার্থতা প্রমাণে সক্ষম হয়েছে নির্বাচন কমিশন। আল্লাহই জানে কবে, কখন, কিভাবে জাতি এ ধরণের গায়েবী নির্বাচন থেকে পরিত্রাণ পায়। এক সময় দেশে এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষার নকল প্রথা ছিল। এখন কিন্তু নকল প্রথা অনেকটা বিলুপ্তির পথে। পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণে ছাত্র-ছ্ত্রাীরা এখন আর নকল মুখী নয়। কি জানি নির্বাচন প্রথার কোন পরিবর্তন এ সরকারের আমলে আসে কিনা! বর্তমান নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে আগামী ফেব্র“য়ারী’১৭ইং পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবে। তারপর উত্তরসুরী হিসেবে কারা নিয়োগ পায় তা সরকারের নীতি নির্ধারকরায় ভাল জানে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মতই তাদের উত্তরসুরী নিয়োগ পাবে না। কিন্তু না বললে হয় না, ‘মহাজ্ঞানী মহাজন, যে পথে করেছে গমন, সে পথ অনুসরণীয়’ প্রসঙ্গক্রমে একটি পুরানো গল্প অবতারণা না করলে হয় না। এক গোয়ালা রাজ বাড়িতে প্রতিদিনেই গাভীর খাঁটি দুধ সরবরাহ করত। একদিন হঠাৎ রাজার ধারণা জন্মে, ওই গোয়ালা দুধে কিছু পানি মিশাচ্ছে। তা রোধ করার জন্য রাজা উজির নাজিরদের নিয়ে বৈঠক বসে সিদ্ধান্ত নিলেন, গোয়ালার দুধ পর্যবেক্ষণের জন্য ২ জন পাহারাদার নিয়োগ দিলেন। তারপরও দুধের পরিবর্তন হচ্ছিল না। পরে বাধ্য হয়ে রাজা আরো ১ জন পাহারাদার নিয়োগ দিলেন। একদিন দেখলেন, রাজ বাড়িতে দেয়া দুধের গ্লাসে একটি পুঁটি মাছ। তখন বিরক্ত হয়ে রাজা গোয়ালাকে ডেকে বিষয়টি জানতে চাইলেন, দুধের সাথে পুঁটি মাছ কেন? অসহায় গোয়ালা রাজাকে বললেন, হুজুর পেটের দায়ে দুধে সামান্য পানি মিশাতাম। এখন ৩ জন পাহারাদার নিয়োগ দেয়ায় তাদেরকে কমিশন দিতে হচ্ছে। আরেকজন পাহারাদার বাড়ালে দুধের সাথে শুধু পুঁটি মাছ নয়, অন্য প্রজাতির আরো বড় মাছও পেতে পারেন। আগে পানি মিশাতাম এক কাপ, এখন ভাগ বেড়ে যাওয়ায় মিশাতে হচ্ছে এক কলসি। দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনের মত স্থানীয় সরকারের তৃণ মূলের নির্বাচন অব্যাহত থাকলে সংঘাত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। স্বাধীনতার পরে একটি স্লোগানই বেশি শোনা যেত। এখন সেই স্লোগানটি বাজারে প্রচলিত নেই। যা হচ্ছে আন্দোলন ধ্বংসের তান্ডব লীলা নয়, সৃষ্টির প্রসব বেদনা। হয়তো বর্তমান সরকার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে দলের ভক্ত অনুরক্তদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করার যে প্রয়াসটি চালু করতে চেয়েছে, তাতে দলের মধ্যে বিভাজন, সংঘাত ও হানাহানি বাড়ছে। এতে লাভের চাইতে ক্ষতির দিক বেশি বলে মনে করছে আওয়ামীলীগের মাঠ পর্যায়ের অনেক ত্যাগী নেতা। আগামী ৪ জুন’১৬ইং ৬ষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচন সারাদেশে শেষ হবে। অনেকে মন্তব্য করতে শোনা গেছে, শেষ ভাল যার, সব ভাল তার। গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নির্বাচনের উপর মানুষ অনেকটা আস্থাহীন। ইউপি নির্বাচনের পর বর্তমান নির্বাচনের অধীনে নির্বাচন কি জিনিস, ভোটারেরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।

পাঠকের মতামত: