কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
মিয়ানমার থেকে সাগরপথে আসছে লাখ লাখ পিস ইয়াবার চালান। মাছের ট্রলারে রাত ও দিনের বিভিন্ন সময় বঙ্গোপসাগর রুট হয়ে আসা এসব চালান আটক করতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে টেকনাফ উপকূলে বঙ্গোপসাগর হয়ে ইয়াবার চালান অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে। সাগরপথে যে পরিমাণ ইয়াবা দেশে ঢুকছে, এর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ কঠিন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন সূত্রমতে, দুই বাহিনীর পৃথক অভিযানে চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত সাগর উপকূল দিয়ে পাচার ও খালাস করার সময় ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৯৮৫ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। উদ্ধার ইয়াবার আনুমানিক মূল্য দেড়শ কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে বিজিবি জব্দ করেছে প্রায় ৩০ লাখ ৫৮ হাজার ৯৮৫ পিস এবং কোস্টগার্ড ২৪ লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবা। এ ছাড়া টেকনাফে সাগর উপকূলে র্যাবের হাতে একাধিকবার ইয়াবার বড় চালান আটকের ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে গতকাল ভোরে সেন্টমার্টিন উপকূলে পাচারের সময় কোস্টগার্ড অভিযান চালিয়ে পাঁচ লাখ পিস ইয়াবার বড় চালান আটক করেছে। কোস্টগার্ডের গোয়েন্দা শাখার অপারেশন পরিদফতরের সহকারী গোয়েন্দা পরিচালক লে. কমান্ডার বি এন আবদুল্লাহ আল মারুফ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। ইয়াবার পাচার ঠেকাতে এত দিন নাফ নদে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্তে কোনো ফায়দা আসেনি। দীর্ঘদিন ধরে নাফ নদে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও সীমান্তের ইয়াবা পাচারকারী ও কারবারিরা এখন কৌশল পাল্টে বঙ্গোপসাগর রুট ব্যবহার করছে। পাচারকারীদের কাছে সাগরপথে ইয়াবা পাচার অনেকটা নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। কারণ এ পথে ইয়াবার চালান ধরতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মপরিধি যেমন কম, তেমনি সাগরে শত শত মাছ ধরার ট্রলারের মধ্যে ইয়াবা বহনকারী ট্রলার শনাক্ত করাও অনেকটাই কঠিন। এদিকে কক্সবাজার থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্রসৈকত এলাকার সবকটি পয়েন্টে প্রশাসনের তল্লাশি চৌকি ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছে। এখানে নিয়মিত টহল থাকছে না। এ ছাড়া অপ্রতুল জনবলের কারণে এত দীর্ঘ সৈকতজুড়ে বিজিবি বা কোস্টগার্ডের পক্ষে কাজটি বেশ কষ্টসাধ্য। এসব সুযোগ নিয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন লাখ লাখ পিস ইয়াবা সাগরপথে বাংলাদেশে আনছে।
টেকনাফ উপকূলের একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর দিয়ে ইয়াবার চালান পাচার করা অনেকটাই সহজ। মিয়ানমার থেকে মাছ ধরার ট্রলারে ইয়াবার চালান বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি এসে বাংলাদেশি ট্রলারে হাতবদল হয়। এরপর ইয়াবা বহনকারী এ দেশের মাছ ধরার ট্রলারগুলো সুযোগ বুঝে কক্সবাজার থেকে শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে কূলে ভিড়ে নিরাপদে চালান খালাস করে। পরে এসব ইয়াবা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। সাগরপথে পাচার হয়ে আসা ইয়াবার বড় চালানগুলো যেসব পয়েন্ট দিয়ে খালাস হয় সেগুলো হচ্ছে— সেন্টমার্টিন, টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ, হারিয়াখালী, কাটাবনিয়া, কচুবনিয়া, খুরের মুখ, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়াপাড়া সৈকত, নোয়াখালীপাড়া, বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর, শীলখালী, মাথাভাঙ্গা, উখিয়ার ইনানী ও কক্সবাজার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোস্টগার্ড সেন্টমার্টিন স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ফয়সাল বিন রশিদ বলেন, মিয়ানমার থেকে পাচার হওয়া ইয়াবার চালানগুলো ধরতে কোস্টগার্ড সব সময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ইতিপূর্বে কোস্টগার্ডের অভিযানে কয়েকটি বড় চালান জব্দও করা হয়েছে। সাগরে পাচারকারীদের যারা জেলে সেজে মাছ ধরার বাহানা দিয়ে ইয়াবা পাচারে সম্পৃক্ত হচ্ছে, তাদের ধরতেও বাহিনীর পক্ষ থেকে তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, সাগরে নেমে ইয়াবা ধরা সম্ভব নয়। তবে কারা ইয়াবা পাচারকারী তাদের চিহ্নিত করা খুবই সহজ। ইয়াবার পেছনে না ছুটে পাচারকারীদের ধরে শাস্তির আওতায় আনা গেলে এই মাদকের মরণ গ্রাস থেকে জাতি কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে।
পাঠকের মতামত: