ঢাকা,মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

সংযোগে ৪ হাজার টাকা ঘুষ নেয় পল্লী বিদ্যুৎ

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
দুদকের গণশুনানীতে সরাসরি অভিযোগ করতে স্বতঃস্ফূর্থ উপস্থিতি ছিল ভুক্তভোগিদের। দুদক কমিশনারকে পেয়ে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোেেগর ফিরিস্তি তুলে ধরে তারা। এসময় সংশ্লিষ্ট অনেক সরকারী-বেসরকারী অফিসের কর্মকর্তারা বিব্রত অবস্থায় পড়ে যান।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গণশুনানী করে দুদক। সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এই শুনানী। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশানর (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে গণশুনানীতে অংশ নেন কক্সবাজার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আফসার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন।
গণশুনানীতে বিলকিস বানু নামে এক নারী পল্লীবিদ্যুতের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে অভিযোগ করেন। তার বাড়ি সদরের পিএমখালী উমখালী এলাকায়। তিনি বলেন, ‘মাসখানেক আগে তিনি নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু পল্লী বিদুৎ অফিসের হাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি তার কাছ থেকে ৪ হাজার ৭০০ টাকা আদায় করেন। কিন্তু ব্যাংকে জমা দেন মাত্র ৪’শ টাকা। এছাড়া তার কাছ থেকে মিটারের জন্যও টাকা নেওয়া হয়। এত টাকা ঘুষ দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত সংযোগ পাননি তিনি।’
একই অভিযোগ করেন মো. ইউনুছ নামে এক আরেক ভুক্তভোগি। তিনি বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের হাফিজুর রহমান আমার কাছ থেকে বিদ্যুতের খুঁটির কথা বলে ৪ হাজার হাতিয়ে নেন। কিন্তু  ওই টাকা কোথাও জমা করেনি। এখন পর্যন্ত সংযোগও দেয়নি।’
সদরের চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের প্রবাসী নুরুল আমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদেশে ঘাম ঝরানোর টাকায় গ্রামে একটি জমি কিনে বাড়ি করের্ছি। ওই বাড়িতে সংযোগের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে প্রায় এক বছর ধরে ধর্ণা দিচ্ছি। এক কর্মকর্তা আরেক কর্মকর্তাকে দেখিয়ে দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংযোগ মিলেনি। এই অফিসটাতে হয়রানির শেষ নেই।’
এই তিনজন ব্যক্তি অভিযোগ করার সময় শুনানীতে পল্লী পক্ষের উপস্থিত ছিলেন পল্লী বিদ্যুৎ কক্সবাজার কার্যালয়ের জেনারেল ম্যানেজার নুর মোহাম্মদ আজম মজুমদার। এসব অভিযোগের বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। দুদক কমিশনারের সামনে বিব্রত অবস্থায় পড়ে যান। তিনি বলেন, হাফিজুর রহমান অফিসের কেউ নয়। তিনি হলেন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সাব-ঠিকাদার। খুঁটি স্থাপনের জন্য গ্রাহককে কোন টাকা দিতে হয় না। এটা সরকারীভাবে বরাদ্দ আছে। কিন্তু ওই সাব-ঠিকাদার কেন টাকা আদায় করছে সেটি আমার জানা নেই। শিগগিরই সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজারকে উদ্দেশ্যে করে দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, নির্দিষ্ট যে অভিযোগগুলো উঠেছে সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। কোন অবস্থাতেই মানুষকে হয়রানি করা যাবে না। অন্যথায় দুদক ছাড়বে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্নীতি আর হয়রানিতে ডুবে আছে পল্লী বিদ্যুতের কক্সবাজার কার্যালয়। প্রতিটি নতুন সংযোগ বা মিটারের জন্য হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। মোটা অংকের টাকা দিতে না পারলে বছরের পর বছর হয়রানির মুখোমুখি হতে হয় সাধারণ মানুষকে।
দুদকের গণশুনানী নিয়ে চরম অসন্তোষ্ট পল্লী বিদ্যুতের কক্সবাজার কার্যালয়ের জেনারেল ম্যানেজার। বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এলও অফিস, ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রার এবং ডিসি অফিসে কোটি কোটি দুর্নীতি হচ্ছে এসব দেখেন না, লিখতে পারেন না। আমাদের মত চুনোপুটি নিয়ে পড়ে আছেন কেন? তারাতো জনগণকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। লোকজনও অহেতুক অভিযোগ করে বিব্রত করার চেষ্টা করে।

পাঠকের মতামত: