নিউজ ডেস্ক :
তারেক রহমানের পাসপোর্ট জমা দেওয়ার প্রমাণ হিসেবে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে চিঠি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দেখিয়েছেন, তাতে ১৩টি ‘ভুল’ ধরিয়ে এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছে বিএনপি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ‘প্রমাণ’ হাজিরের পর দিন মঙ্গলবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই চিঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “কী বিচিত্র এই সরকার কী দুর্বল তাদের অপকৌশল”
ফখরুল জানান, তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই প্রথম জানা গেল, খালেদা জিয়ার ছেলে কী প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বা চাইছেন। এতদিন তারা বলে আসছিল, তারেক চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত¦াবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তারের পর ২০০৮ সালে মুক্তি নিয়ে সপরিবারে লন্ডন যাওয়ার পর আর ফেরেননি তারেক রহমান। এর মধ্যে দুটি মামলায় বাংলাদেশের আদালতে তার দ- হয়, অন্যদিকে বিএনপির কমিটিতে জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি। দুর্নীতির মামলায় দ- নিয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তারেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। তার আড়াই মাসের মাথায় প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার লন্ডনে শেখ হাসিনার সফরের সময় এক অনুষ্ঠানে বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের পাসপোর্ট সমর্পণ করেছেন। তার বক্তব্য বিএনপি প্রত্যাখ্যান করার পর সোমবার শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি ও পাসপোর্টের কপি দেখিয়ে বলেন, তারেক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন। তার জবাব দিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে ফখরুল বলেন, “ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের চিঠিটা নিশ্চয়ই আপনারা সবাই দেখেছেন। এই চিঠিতে ১৩টি বেশ মেজর ভুল পাওয়া গেছে; ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের পক্ষে এই ধরনের ভুল করা খুব অস্বাভাবিক।”
কী কী ‘ভুল’ শনাক্ত করেছেন, তাও জানান বিএনপি মহাসচিব। “যেমন প্রথমেই ডিপার্টমেন্টের নাম লিখেছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট- হোম অফিস। এটির আসল নাম হচ্ছে ইমিগ্রেশন কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট। “এই যে ২৮ ঠিকানা, যেটা দেওয়া হয়েছে, তার পরে কমা নেই। তারপরে হানস¯্রাে মেডিসেক্স- ঠিকানা যেটা দেওয়া হয়েছে, এরপর ফুলস্টপ নেই। বাংলাদেশ অ্যাম্বেসি। দি ইজ নট বাংলাদেশ অ্যাম্বেসি, এটা হাইকমিশন অব বাংলাদেশ। এটা মেজর ভুল। কমনওয়েথভুক্ত রাষ্ট্রের অফিসকে সবসময় হাই কমিশন বলা হয়। “কুইন্স গেইট বানান ভুল। এরপর আছে আননেসেসারি বোল্ড করে টেলিফোন নাম্বার ও ফ্যাক্স নাম্বারগুলো। ব্রিটিশ চিঠির মধ্যে বিশেষ করে হোম ডিপার্টমেন্টের চিঠির মধ্যে এসব নাম্বার থাকে না। যে টাইপ ব্যবহার করা হয়েছে, এই টাইপ সাধারণত এই ডিপার্টমেন্টের চিঠিতে ইউজ করা হয় না। “এরপর নেক্সট পয়েন্ট যেটা ভেরি ইন্টারেস্টিং, ডিয়ার স্যারস। এটা অবশ্যই হবে ডিয়ার স্যার। “চিঠির উপরে বলছে, চারটা পাসপোর্টের কথা। তারেক রহমান, জায়েমা রহমান, জোবায়েদা রহমান ও মাইনুল ইসলাম। সেই জায়গায় লিখছে, প্লিজ ফাইন্ড এনক্লোজড আ পাসপোর্ট ফর ইউর রিটেনশন। কথাটা লক্ষ্য করবেন রিটেনশন বলা আছে।” “এরপরে ‘থ্যাংক ইউ‘র পর কোনো ফুলস্টপ নেই। ইউরোস পুরুতপুলি, পুরুতপুলির এফ টা বড় হাতের। সেটা কখনও ব্রিটিশরা লিখবে না এবং যিনি সই করেছেন, তার কোনো নাম নেই।”
এসব তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এই চিঠি নিয়ে যথেষ্ট রহস্য রয়েছে। অসংখ্য ভুলে ভরা রহস্যজনক এই চিঠি। এটা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ফেইসবুকে আছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আইনজীবী এটা সম্পর্কে ডিটেইলস জানতে চেয়েছেন। জানলে আমরা পরে আপনাদের জানাব।” বিএনপি বক্তব্যে সন্দেহ প্রকাশ করার পর জবাব হিসেবে চিঠিটি দেখিয়েছিলেন শাহরিয়ার, তিনি তার ফেইসবুক পাতায়ও তা তোলেন। লন্ডন সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ-িত তারেককে যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা করেন।
ফখরুল বলেন, “দেশের জনগণ ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করেছে যে, তাদের কষ্টার্জিত বিপলু পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লন্ডনে সফরকারী বিশাল বহরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা জনাব তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের তিনটি পাতা।” জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক তারেক নাগরিকত্ব ছাড়ছেন না জানিয়ে ফখরুল বলেন, “পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব এক বিষয় না। দেশের ১৬ কোটি মানুষের পাসপোর্ট নেই বলে কি এই মানুষরা বাংলাদেশের নাগরিক না? “তারেক রহমান সাহেবের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ভবিষ্যতে নিঃসন্দেহে তিনি সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।”
পাঠকের মতামত: