টেকনাফ প্রতিনিধি ::
শাহপরীরদ্বীপ করিডোর দিয়ে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি কমছে। দেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের পশু বিশেষ করে গরুর চাহিদা কম থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। টেকনাফ কাস্টম্স সূত্রে জানা যায়, গত জুন মাসে ১২ হাজার ৭৪০ টি গরু ও ২ হাজার ৩৭২ টি মহিষ আমদানি বাবদ ৭৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করে শুল্ক বিভাগ। কিন্তু তা কমে গেলো জুলাই মাসে। এ মাসে ৪ হাজার ৬০১টি গরু ও ১ হাজার ৫০৫ টি মহিষ আমদানি বাবদ ৩০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা আয় হয়। টেকনাফ স্থল বন্দর শুল্ক কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জুলাই মাসে বর্ষা মৌসুমের কারণে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি আগের মাসের চেয়ে একটু কম হয়েছে। না হয় আরো বেশি পরিমাণ রাজস্ব আদায় সম্ভব হতো।
এদিকে আর ৩ সপ্তাহ পর কোরবানী ঈদ হতে যাচ্ছে। এ সময়ে মিয়ানমার হতে প্রচুর গবাদিপশু টেকনাফে প্রবেশ করার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। গরু ব্যবসায়ীরা এ জন্য অবাধে ভারতীয় গরু আমদানি, টেকনাফের বাজারে পশুর মূল্য কম থাকায় লোকসানের ভয় ও প্রতিকূল আবহাওয়াকে রাজস্ব আয় কম হওয়ার কারণ বলে উল্লেখ করেন। শাহপরীরদ্বীপ করিডোরের পশু ব্যবসায়ী সাবরাং ইউপি সদস্য মোহাম্মদ শরীফ, মো: আলমগীর, শহিদুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের প্রচুর গরু–মহিষ জমা রয়েছে। টেকনাফ বাজারের কোরবানীর পশু বেচাবিক্রি এখনো জমে উঠেনি।
দেশের অভ্যন্তরেও ভারতীয় গরুতে সয়লাব হওয়ায় মিয়ানমারের পশুর চাহিদা তেমনটি নেই। ফলে টেকনাফে গরুর মূল্য নিম্নমুখী। এ অবস্থায় লোকসানের ভয় রয়েছে। ফলে মিয়ানমার হতে পশু আমদানি করে টাকাগুলো অলস করে রাখার মানে হয় না। এ দিকে গরু ব্যবসায়ী মো: ইসমাইল বলেন, মিয়ানমারের কয়েক হাজার গরু বিক্রির অপেক্ষায় খামারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক গরু–মহিষের খুরা রোগও দেখা দিয়েছে। পশু বিভাগের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শাহপরীর দ্বীপে না থাকায় চিকিৎসাও করানো যাচ্ছে না। পশু পরীক্ষার যন্ত্রপাতি থাকলেও কোন কর্মকর্তারও খোঁজ পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ ছাড়া সাগরের ভাঙনের ফলে শাহপরীর দ্বীপ টু টেকনাফ সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে ৬ বছর ধরে। এতে পশু পরিবহনেও নানান ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদেরকে।
এ অবস্থায় পশু আমাদানিতে উৎসাহ হারাতে বসেছে ব্যবসায়ীরা। তিনি আরো বলেন, ২০০৩ সাল হতে শাহপীরদ্বীপ করিডোর চালু করা হলেও এখনো অবকাঠামোগত কোন সুযোগ সুবিধা দিতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। এখানে নেই পশু রাখার স্থান, নেই ব্যাংক সুবিধা। ফলে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয় রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে। তবে বিজিবি’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে মিয়ানমার হতে শাহপরীরদ্বীপ জেটি হতে পশু খালাসে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ী মো: কাসেম।
এদিকে আসন্ন কোরবানীকে সামনে রেখে যাতে স্থানীয় বাজারে পশু সংকট সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক বসেছেন টেকনাফস্থ বিজিবি ২ ব্যাটলিয়ন অধিনায়ক লে.কর্নেল আছাদুদ জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বিঘ্নে মিয়ানমার হতে পশু আমদানি করতে পারে সে ব্যাপারে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঈদে পরিবহন ও কোরবানীর পশু হাটে যাতে নকল টাকার ব্যবহার, চাঁদাবাজিসহ সকল ধরনের অপতৎপরতা চালাতে না পারে সে জন্য একাধিক টিম গঠন করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি রনজিৎ কুমার বড়ুয়া বলেন, কোরবানের পশু পরিবহনের সাথে একটি চক্র ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে যায়। এ ধরনের তৎপরতাসহ বাজার মনিটরিং কার্যক্রম তদারকির জন্য ইতিমধ্যে ৫টি টিম গঠন করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: