ডেস্ক নিউজ ::
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট শরিকদের সর্বোচ্চ ৬০টি আসন ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ। জোটের শরিক দলগুলো ও তাদের প্রার্থীদের অবস্থা বিবেচনা করেই আসন ভাগাভাগি করবে দলটি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে অনেক হিসাব-নিকাশ মিলিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি জোটের প্রার্থীর ক্ষেত্রেও এ হিসাব মেলানো হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে অনেক আগে থেকেই দফায় দফায় জরিপ চালানো হয়েছে। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনেই জরিপ চালিয়ে দলীয় এমপি এবং প্রার্থীর পাশাপাশি জোটের শরিক দলগুলোর এমপি ও প্রার্থীদের অবস্থা সম্পর্কেও রিপোর্ট তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জরিপ রিপোর্টের ভিত্তিতেই দলের প্রার্থী চূড়ান্ত এবং শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করা হবে।
আওয়ামী লীগের ওই নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী নির্বাচনে জোটের জন্য সর্বোচ্চ ৬০টি আসন তারা ছাড়তে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিকে ৪০ থেকে ৪৫টি এবং ১৪ দল, বিকল্পধারাসহ অন্যান্য দুই-একটি দল মিলিয়ে ১৫টি আসন ছাড় দিতে পারে। অথবা জাতীয় পার্টির ৪২/৪৩ এবং ১৪ দলসহ অন্যান্যদের ১৭/১৮টি হতে পারে। তবে সব মিলিয়ে ৬০টির বেশি আসন ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও তারা জানান। যদিও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ৬৫টি আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু দলীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে ৬০টির কথাই ভাবা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য এবং দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় পার্টির বর্তমানে সংসদে ৩২টি আসন আছে। বেশি হলে সর্বোচ্চ আরও ১০টি দিয়ে মোট ৪২টি তাদের ছাড় দেওয়া হতে পারে।
জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে জাতীয় পার্টি ৭০টি আসন দাবি করেছে। তারা এ দাবি থেকে আরও সরে আসবে। জাতীয় পার্টির দাবি ৫০টির নিচে নেমে আসতে পারে। কারণ জাতীয় পার্টি এবার বিরোধী দলে যেতে চায় না। ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সরকার গঠনের দাবি তারা জানিয়েছে।
বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসায় নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এ কারণে আসন ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ অনেক হিসাব-নিকাশ করবে। শুধু আসন চাইলেই হবে না নিশ্চিত জিতে আসতে পারবে এরকম প্রার্থী যে সব আসনে আছে সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন। জাতীয় পার্টিও বিজয় নিশ্চিত করে ক্ষমতার অংশীদার হতে চায়। তাই আসন ভাগাভাগি নিয়ে জাতীয় পার্টি খুব বেশি দর কষাকষি করতে যাবে না বলে সূত্র জানায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, বিজয় অর্জন সহজ হবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই, আওয়ামী লীগ সেটা মনেও করছে না। এ কারণেই দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।
জাতীয় পার্টি ছাড়াও ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির ৬টি এবং জাসদের ৫টি, তরিকত ফেডারেশনের ২টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১টি আসনে নির্বাচিত এমপি রয়েছে সংসদে। জাসদ ভেঙে যাওয়ার পর দলটির এক অংশে ৩ জন এবং আরেক অংশে ২ জন রয়েছে। এ দলগুলোর বর্তমানে যে আসন রয়েছে তার চেয়ে বেশি ছাড়ার সম্ভাবনা কম।
গত ১১ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের জেতার মতো প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে। আমাদের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জিততে হবে। তাদের দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই। নেত্রী অনেকগুলো সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জরিপ চালিয়েছেন। এগুলো দেখেই যোগ্য প্রার্থী যারা জিততে পারবেন তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
বুধবার (১৪ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশিদের সঙ্গে দলের সংসদীয় বোর্ডের সাক্ষাৎকারের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, জোটের শরিক দলগুলো তাদের প্রত্যাশিত আসনের তালিকা ইতোমধ্যে আমাদের দিয়েছে। আমরা ৬০ থেকে ৬৫টি আসন শরিকদের ছেড়ে দিতে পারি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং দলের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, এখনই বলা যাচ্ছে না। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে। তবে জোট শরিকদের বাস্তবতার ভিত্তিতে সন্তোষজনক আসন ছাড় দেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: