মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার :: মারাত্মক শব্দদূষনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে কক্সবাজারের জনজীবন। সর্বত্র হাইড্রোলিক হর্ণ এবং মাইকের আওয়াজ এছাড়া রাস্তাতে গাড়ির আওয়াজতো আছেই সব মিলিয়ে শব্দ দূষণের নগরীতে পরিনত হয়েছে দেশের খ্যাতনামা পর্যটন নগরী। এতে সাধারণ মানুষের সার্বিক জীবন যাপন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তবে শব্দ ব্যবহারের কোন সুনির্দিস্ট নীতিমালা না থাকা এবং মানুষ সচেতন না হওয়ার কারনে শব্দ দূষন বেশি হচ্ছে এটা বন্ধ হওয়া দরকার বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা আফরোজা আক্তার বলেন, অনেক বিষয় নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা দেখা যায় কিন্তু শব্দ দূষনের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দেওয়ার মত কেউ নাই। রাস্তার বের হলে শব্দ দূষনের কারনে টিকা যায় না। বিশেষ করে গাড়ির হর্ণ এত বেশি যা বলার বাইরে। হাইড্রোলিক এসব হর্ণের কারনে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার অবস্থা। আর হর্ণ একটি দিয়ে থামে না দিতেই থামে, যতক্ষন সেই চালকের স্বাদ না মিটে ততক্ষন হর্ণ দিতে থাকে। গতকাল কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে আসার সময় ঝিলংজার খরুলিয়া এলাকার লৎফুন্নাহার চৌধুরী বলেন, আমি ছোট ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার সময় লিংক রোড়ে আসলে সেখানে বেশ কয়েকটি গাড়ীর উচ্চ শব্দে শিশু ভয়ে আতকে উঠে। পরে আমার শিশু ছেলেটি অনেক কান্নাকাটি করে, এভাবে প্রায় সময় রাস্তাতে গাড়ীর উচ্চ শব্দে অনেক সমস্যা হয়ে থাকে যেটা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর। আমার মতে হর্ণ কোথায় কিভাবে বাজাবে সেটার একটি প্রশিক্ষণ সব গাড়ী চালকদের দেওয়া উচিত।
টেকপাড়া এলাকার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, আমার মা অসুস্থ হয়ে কয়েক দিন থেকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছে,ডাক্তার বলেছে উনার বিশ্রাম বা ঘুমের খুব দরকার। সাথে প্রয়োজনীয় ঔষধ চলবে,কিন্তু রাস্তাতে প্রতি নিয়ত বিভিন্ন মাইকিং আর শব্দদূষনের কারনে বার বার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে। এমনকি গতকাল রাতের প্রায় ১ টা বাজে মাইকিং করছে শোক সংবাদের এতে মা সহ আমাদেরই ঘুম ভেঙ্গে গেছে। পরে অনেক চেস্টা করে ২/৩ ঘন্টা পর মায়ের ঘুম এসেছে। তিনি বলেন, আমি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা অন্যকিছুর জন্য বলছি না, মাঝে মধ্যে দেখা যায় ওয়াজ মাহফিলের মাইকগুলো দেওয়া হয়, হাসপাতাল সড়কে এমনকি প্রধান সড়কে। ঈদগাও মাঠে ওয়াজ মাহফিল হলে প্রধান সড়কে মাইক দেওয়ার আদৌ দরকার আছে কিনা সে বিষয়ে আলেম সাহেবদের দৃস্টি আকর্ষণ করছি।
কক্সবাজার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হোসাইনুল ইসলাম মাতবর বলেন, আমি কিছুদিন আগে প্রবিত্র ওমরা হজ্ব করতে সৌদি আরব গিয়েছিলাম। সেখানে কোথাও গাড়ীর উচ্চ হর্ণ বাজানোর শব্দ শুনিনাই। এমনকি সেখানে কোন গাড়ীতে হাইর্ডোলিক হর্ণও নাই। সেখানে কিন্তু লাখ লাখ হাজিদের পদচারনায় মুখরিত থাকে সমস্ত রাস্তাঘাট এবং গাড়ীও থাকে শত শত কিন্তু সব কিছু শৃংখলিত এবং নিয়ন্ত্রিত। কোথাও কোন সমস্যা নেই। আমি যতটুকু জানি মানুষের শারিরিক অসুস্থতার জন্য বহু কারন থাকে এর মধ্যে শব্ধদূষন একটি মারাত্বক কারন। আমাদের দেশে সব জায়গায় এতবেশি শব্দ দূর্ষন যা নিয়ন্ত্রন করা আসলেই জরুরী।
শহরের সীকুইন মার্কেটের ব্যবসায়ি স্বপন ভট্টাযার্চ্য চকরিয়া নিউজকে বলেন,আমি গত মাসে ভারত গিয়েছিলাম,অবশ্য এর আগেও বহুবার গিয়েছি সেখানে কোথাও গাড়ীতে উচ্চ শব্দ ব্যবহারের কোন নিয়ম নেই। এমনকি বিয়ে বা কোন সামাজিক অনুষ্টানেও শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে মানুষ খুব সাবধানতা অবলম্বন করে যাতে পাশের কোন প্রতিবেশির কোন অসুবিধা না হয়। আমি সেখানে দেখেছি রাজনৈতিক কর্মসূচী গুলোতেও শব্দদূষন কঠিন ভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয়। অথচ আমি বিমানবন্দরে বাংলাদেশে নামার পরে চারিদিকে মারাত্বক শব্দদূষনের ফলে আমার অসুস্থ হওয়ার মত অবস্থা হয়েছিল।
এ ব্যপারে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফরিদুল হক চকরিয়া নিউজকে বলেন, উচ্চ শব্দে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় হৃদরোগিরা। অনেক বয়স্ক মানুষ আছে যাদের হৃদরোগের সমস্য আছে, তারা যদি হঠাৎ উচ্চ বিকট শব্দ শুনে তাহলে তারা অজ্ঞান ও হতে পারে। শব্দদূষন কোন ভাবেই জনস্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর নয় । আমার মতে বড় গাড়ী গুলোতে হাইর্ডোলিক হর্ণ নিষিদ্ধ করা দরকার।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ নুরুল আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, উচ্চ শব্দের কারনে সব শিশুদের ক্ষতির পরিমান নির্নয় করা যাবে না। শব্দ দূষনের কারনে শিশুদের শারিরিক এবং মানসিক অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, আমরা নিজেরা দেখি গাড়ীর চালকরা অনেক সময় যেখানে প্রয়োজন নাই সেখানেও হর্ণ বাজাচ্ছে, এমনকি হর্ণ চেপে ধরে রাখে।এখনি উপযুক্ত সময় শব্দদূষন নিয়ে বন্ধে আইন করে তা বাস্তবায়ন করা।
পাঠকের মতামত: