হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :
চিংড়ী ও লবণ একটি অর্থকরী ফসল। এ শিল্পকে বাঁচাতে এবং নিজেকে সাবলম্বী করতে অদম্য এক যুবক আগাম লবণ মাঠে নেমেছেন বলে জানা গেছে। লবণ মাঠ তৈরীর পর মাঠে আগাম লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। লবণের দাম বাজারে স্থিতিশীল থাকায় চাষীরা উৎসাহ নিয়ে লবণ উৎপাদনে কোমর বেঁধে কাজ করছে।
জানা যায়, টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা, টেকনাফ পৌর এলাকা, টেকনাফ সদর, সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপসহ ৫ ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার ১০ একর জমির চেয়ে বেশী লবণ উৎপাদন হয়। নাফ নদীর উপকূলীয় এলাকায় লবণ ও চিংড়ি উৎপাদনের জন্য প্রচুর উপযোগী জমি রয়েছে। লবণ উৎপাদনের এখন ভরা মওসূম। তাই চাষীরা লবণের ন্যায্য দাম পেতে এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী জেলার অন্যান্য এলাকার চেয়ে টেকনাফে প্রতি কানিতে (৪০ শতকে ১ কানি) লবণ মওসূমে ৪০০ মন লবণ উৎপাদিত হয়। পানির ঘনত্ব ও মাঠির উর্ভরতার কারণে এখানে লবণ বেশী উৎপাদিত হয়।
টেকনাফ সীমান্তে যে কয়েকজন লবণ উৎপাদনকারী মালিক রয়েছেন তার মধ্যে আব্দুর রহমান অন্যতম। তিনি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ার হাজী ফজল আহমদের পুত্র। তাঁর প্রায় ৩০০ কানি জমিতে শতাধিক শ্রমিক লবণ উৎপাদনে রাত-দিন কাজ করছে। তিনি ৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে লবণ চাষ করে যাচ্ছেন। ২০১৫ ও ২০১৬ দুই বছরে আশাতীত লবণ উৎপাদন করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। লবণ উৎপাদন করে আবদুর রহমান এখন স্বাবলম্বী। তিনি ইয়াবা ব্যবসাকে মনে প্রাণে ঘৃণা করে এ পেশাকে সে ভাগ্য পরিবর্তনের একমাত্র নিরাপদ মনে করছেন। তিনি বলেন ‘লবণ শিল্পের উন্নয়নে সরকারী পৃষ্টাপোষকতা ও ঋণ নিতান্ত প্রয়োজন। মাঠে এখন লবণ উৎপাদন হচ্ছে। মূল্য ঠিক থাকায় চাষীরা খুশীতে আছেন। মৌলভীপাড়ার পূর্বে নাফ নদীর তীরে আমার ৩ শত কানি জমিতে লবণ উৎপাদন পুরোদমে চলছে। সুদিনে চলে লবণ উৎপাদন এবং বর্ষা মওসূমে চলে চিংড়ী চাষ। প্রায় ৩ শত কানি জমিতে এভাবে দুই মওসূমে লবণ ও চিংড়ী চাষ করে আমি আর্থিকভাবে সফলতা অর্জন করেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস দেশীয় শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করা সম্ভব’।
এক প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান বলেন ‘এ শিল্পকে বাঁচাতে এবং উৎপাদনের সুবিধার্থে মৌলভীপাড়ার পূর্ব সীমানা থেকে নাফনদীর বেড়ীবাঁধ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে দীর্ঘ প্রতিরক্ষা বাঁধ রাস্তা নির্মাণ করেছি। এতে এলাকায় প্রশংসিত হয়েছি। অদম্য সাহস নিয়ে আমি সুদীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ এ শিল্প বিপ্লবকে বাস্তবে পরিনত করতে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার দৃঢ় সংকল্প এ শিল্প উন্নয়নে ভবিষ্যতে একজন শিল্পপতি হওয়া। এ চিন্তাধারা নিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছার চেষ্টা করছি। আমার মতে ইয়াবার অর্থে বড় লোক হওয়া যায়। সম্মান ও শান্তি নেয়। বৈধ উপার্জনে মানসিক প্রশান্তি ও স্বাধীনতা আছে। তাই আমি লবণ ও চিংড়ী শিল্পকে একমাত্র নিরাপদ পেশা হিসাবে বেঁচে নিয়েছি। আমি এ প্রত্যাশা পূরণে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা করছি’।
মৌলভী পাড়া নাফনদীর তীরে লবণ মাঠ পরিদর্শন করে দেখা যায়, অসংখ্য চাষীরা লবণ উৎপাদনে নেমেছেন। মাঠের শ্রমিক পরিচালক মোঃ ইয়াছিন বলেন ‘আমি ৫ বছর যাবৎ আবদু রহমানের ৩ শত কানি লবণ ও চিংড়ী চাষ উৎপাদনে দেখা শুনা করে আসছি। গত বছর আবহাওয়া ভাল থাকায় সাফল্যের সাথে লবণ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে আবহাওয়া ভাল থাকলে এ বছর তার চেয়েও বেশী লবণ উৎপাদন হবার সম্ভবনা রয়েছে’। হেড মাঝি মোঃ সেলিম জানান, ১২০ জন লবণ চাষী নিয়ে গত নভেম্বর মাসে মাঠ তৈরির পর এখন লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। সম্পূর্ণ পলিথিনের মাধ্যমে সাদা স্বাস্থ্য সম্মত লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশ কুটির শিল্প (লবণ) টেকনাফ উপজেলা ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন ‘আবদুর রহমান একজন পেশাদার চাষী। তিনি লবণ ও চিংড়ী উৎপাদন বিপ্লবে নিজ সাফল্যের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন’।
পাঠকের মতামত: