নিউজ ডেস্ক :: রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ ও নাগরিকত্ব সনদ যারা দেবেন এবং সনদগুলো পেতে যারা সহযোগিতা করবেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জন্য চট্টগ্রামসহ দেশের ১২ সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দেশের সবক’টি পৌরসভার মেয়র ও পৌর সচিব এবং জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি কর্পোরেশন-১ শাখার উপসচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরী সিটি কর্পোরেশনগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনাটি বাস্তবায়নে সম্প্রতি দাপ্তরিক পত্র দিয়েছেন। এছাড়া ইউপি-১ শাখার উপসচিব মো. আবদুর রউফ মিয়া অন্য সংস্থাগুলোর কাছে অপর দাপ্তরিক পত্র দেন। মামলা দায়ের করে তা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতেও বলা হয়েছে ওইসব পত্রে।
আইন অনুযায়ী, কেবলমাত্র বাংলাদেশের নাগরিকরাই নাগরিকত্ব সনদ ও জন্মসনদ পাওয়ার যোগ্য। পাসপোর্ট করাসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রয়োজন হয় এ নাগরিকত্ব সনদ ও জন্মসনদ। পৌরসভা এলাকায় মেয়র এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে সনদগুলো দেওয়া হয়। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কাউন্সিলরগণ এ সনদ প্রদান করে। তবে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারাও এ দুটি সনদ সংগ্রহ করছে।
এক্ষেত্রে দুষ্কৃতকারী চক্রের যোগসাজশে সনদগুলো সংগ্রহ করা হয়। পৌর মেয়র বা ইউপি চেয়ারম্যানের গোচরে বা অগোচরে এ ঘটনা ঘটে। সংগৃহীত সনদ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় পাসপোর্ট করার জন্য। বিভিন্ন সময়ে পাসপোর্ট অফিসে এসে তারা ধরাও পড়েছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার নগরীর মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসে রোহিঙ্গা নারীসহ দুজন আটক হয়েছেন।
এ বিষয়ে গত বছর অনুষ্ঠিত মানব পাচাররোধ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয়, আন্তঃসংস্থা এবং সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত কমিটির ৯১তম সভায় জননিরাপত্তা বিভাগের তৎকালীন সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন বলেছিলেন, জন্মনিবন্ধন বা নাগরিক্ত সনদের ভিত্তিতে পাসপোর্ট তৈরি করে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছে এবং বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
এছাড়া ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বিদেশে বাংলাদেশিদের সুনাম যেমন রয়েছে তেমনি কিছুটা দুর্নামেরও ভাগিদার হচ্ছে বাংলাদেশ। আর এই দুর্নামের একটি বড় কারণ হচ্ছে রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে এ পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বিদেশে গেছে। সেখানে নানা অপরাধে জড়িয়ে তারা বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ভুয়া সনদ নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করার ঘটনা ঘটায় তা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয় সরকার। এক্ষেত্রে গত বছর অনুষ্ঠিত ‘মানব পাচাররোধ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয়’ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সনদ প্রদান না করার বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করা জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে পত্র দিতে হবে। কোনো চেয়ারম্যান ভুয়া নাগরিকত্ব এবং জন্মসনদ প্রদান করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ সিদ্ধান্তের আলোকেই মূলত বিভিন্ন সংস্থার কাছে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়।
সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে পাঠানো পত্রে বলা হয়, ‘নির্দেশনার পরও কোনো কোনো পৌরসভার মেয়র, পৌর সচিব, যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত না হয়ে জন্মসনদ এবং নাগরিকত্ব সনদ প্রদান করছেন, যা সরকারি আদেশ অমান্য করার শামিল এবং গুরুতর অপরাধ।’
এছাড়া সিটি কর্পোরেশন এলাকায়ও যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করে এবং সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত না হয়ে নাগরিকত্ব সনদ ও জন্মসনদ ইস্যু থেকে বিরত থাকার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ওই পত্রে বলা হয়েছে, সরকারি আদেশ অমান্য করায় ইতোমধ্যে দুজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও একজন ইউনিয়ন পরিষদ সচিবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে সেখানে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, হ্যাঁ, একটি চিঠি পেয়েছি। কোনো রোহিঙ্গা যাতে জন্মসনদ ও নাগরিকত্ব সনদ না পান সেজন্য আমরা আগে থেকেই সতর্ক ছিলাম এবং আছি। কাউন্সিলরগণ সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে যাতে কাউকে সনদ প্রদান না করেন সে নির্দেশনা দেওয়া আছে এবং তারা সে আলোকেই কাজ করছেন।
এ বিষয়ে চসিকের কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, কোনো শিশুর জন্মসনদ নিতে এলে আমরা টিকা কার্ড দেখি এবং ওই শিশুর বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখি। এরপরও নানাভাবে যাচাই-বাছাই করে থাকি। একইভাবে নাগরিকত্ব সনদের ক্ষেত্রেও মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে থাকি। তাছাড়া এখন সবকিছু অনলাইনে সার্ভারে থাকে। ফলে কোনো ধরনের অনিয়মের সুযোগ নেই। কেউ অগোচরে সনদ নিলেও অনলাইন সিস্টেমের কারণে ধরা পড়বেন।
পাঠকের মতামত: