ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গাদের কারণে ১৫১ কোটি টাকার বন উজাড়

অনলাইন ডেস্ক ::

মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে ১৫০ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ৬ টাকার বন উজাড় হয়েছে ইতোমধ্যে। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে বন বিভাগের এক হাজার ৬৪৫ দশমিক ২ একর বাগানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কক্সবাজার বনবিভাগের জমা দেওয়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে আসা শুরু করে রোহিঙ্গারা। দলে দলে আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। রোহিঙ্গা আসা এখনো থামেনি। এসব স্থানে অবস্থান নিয়ে তারা উজাড় করছে বনের বৃক্ষ। ঘর তৈরি থেকে শুরু করে রান্নাবান্নার কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে বনের কাঠ। এর মধ্যে রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনভূমিও আছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের বক্তব্য হচ্ছে, মানবিকতা বিবেচনায় রোহিঙ্গাদেরকে দেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বনভূমি উজাড় করার বিষয়টি কীভাবে রোধ করা যায়, তার উপায় হিসেবে আগামীতে তাদের নির্দিষ্ট ক্যাম্পের বাইরে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বনবিভাগের জমিতে আবাসস্থল না করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। তাছাড়া ওখানকার জীববৈচিত্র্য র ায়ও আমরা নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা কক্সবাজার ও টেকনাফের প্রায় ৭ হাজার একর ভূমিতে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। প্রতিদিন আরো রোহিঙ্গা আসছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আরো জায়গার ওপর আশ্রয় নিচ্ছে তারা। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো উদ্যোগী হওয়ার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার জেলার উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলার বনবিভাগের হোয়াইকং ও টেকনাফ রেঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়ত উজাড় করা হচ্ছে বন। এর মধ্যে উখিয়া রেঞ্জের বালুখালি ঢালা ও ময়নারঘোনা এলাকার সংরক্ষিত মোট ১৭৭ একর বনভূমির মধ্যে ৫৮ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে। এতে ১৫০ একর বাগানের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৭৯ হাজার ৫৫৫ টাকা। তাজনিমা খোলার সংরক্ষিত মোট ২৮৮ একর বনভূমির মধ্যে ১৬২ দশমিক ৫০ একর বাগানে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এতে প্রায় ১৪ কোটি ৫৫ লাখ ৭১ হাজার ১৪১ টাকার বন ক্ষতিগ্রস্ত করে।

মক্করারবিল, হাকিম পাড়া, জামতলী ও বাঘমারা অংশে সংরক্ষিত–রক্ষিত ৪৮২ একর বনভূমির মধ্যে ২০৬ একরে ৮০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়ে আছে। এতে প্রায় ২৩ কোটি ৪৮ লাখ ২৬ হাজার ৫১৬ টাকার বনের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। শফিউল্লাহ কাটা এলাকার সংরক্ষিত মোট ১৬৯ দশমিক ২০ একর বনভূমির মধ্যে ৯২ দশমিক ৫০ একরে ১৪ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এতে প্রায় ৯ কোটি ৬১ লাখ ৬৯ হাজার ২৯১ টাকার বন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বালুখালির সংরক্ষিত ৫৬৫ একর বনভূমির মধ্যে ৪৫০ একরে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়ে প্রায় ৪১ কোটি ৭৬ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৪ টাকার বন ক্ষতি করে। কুতুপালং অংশে সংরক্ষিত ৬৫৫ একর বনভূমির মধ্যে ৫৩৫ একরে ১ লাখ ৮৬ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে প্রায় ৪৩ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৫৫ টাকার বনের ক্ষতি সাধন করেছে।

অন্যদিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইকং রেঞ্জের কেরণতলি ও চাকমারকুল এলাকার সংরক্ষিত ৫০ একর বনভূমির মধ্যে ৪৯ দশমিক ২০ একরে ১৪ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে। এতে প্রায় ৪ কোটি ১৯ লাখ ৬৬ হাজার ৭০৪ টাকার বন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এদিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মোহাম্মদ জগলুল হোসেন জানান, শুধুমাত্র ৪ হাজার ৪০৭ একর বনভূমিতেই অবস্থান নিয়ে আছে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা।

পাঠকের মতামত: