রামু প্রতিনিধি :: রামুতে বসত বাড়িতে পুলিশের নজিরবিহীন ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় রামু থানার ২জন এসআই, ১ জন এএসআই, ২ জন কনস্টেবলসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে মামলা (ফৌজদারি দরখাস্ত) দায়ের হয়েছে। সোমবার (২৪ আগস্ট) রামু উপজেলার পশ্চিম চাকমারকুল এলাকার হাবিবুর রহমানের স্ত্রী সাবেক মহিলা মেম্বার আরেফা বেগম বাদী হয়ে মামলাটি দাখিল করেন।
কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ এবং সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ ইসমাইল ফৌজদারি দরখাস্তটির গ্রহনযোগ্যতা শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত দরখাস্তটি আমলে নিয়ে পুলিশ সুপার পিবিআই, কক্সবাজার’কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। বাদীর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মোস্তফা, এডভোকেট আমির হোসেন আদালতে ফৌজদারি দরখাস্তটির গ্রহনযোগ্যতা শুনানি করেন।
ফৌজদারি দরখাস্তে রামু থানার এসআই জয়নাল আবেদীন (৩৭), এসআই মংচাই মার্মা (৩৪), এএসআই ইকরাম (৩৫), কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম (৩৩), কনস্টেবল অর্নব বড়ুয়া (৩২) এবং রামু উপজেলার তেচ্ছিপুলের বাসিন্দা গোলাম আকবরের পুত্র চৌকিদার শামসুল আলম সহ আরো ৩/৪ জন অজ্ঞাতনামা লোককে আসামী করা হয়েছে। ফৌজদারি দরখাস্তে ৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
ফৌজদারি দরখাস্তে বলা হয়েছে, বাদী আরেফা বেগম এর কাছ থেকে দরখাস্তের ১ ও ২ নম্বর আসামি বার বার চাঁদা দাবি করতো, চাঁদা না দিলে বাদীর কক্সবাজার সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া ছাত্র আশিকুর রহমান রনি’কে ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়। বাদী চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় গত ৩০ জুলাই দিবাগত রাত পৌনে ২ টার দিকে বাদীর বাড়িতে গিয়ে মূল্যবান গৃহজ সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্স, আসবাবপত্র, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। যার মূল্য ৬ লক্ষ ২৩ হাজার ৯০০ টাকা। এর পর আসামীরা বাদীনির সন্তান আশিকুর রহমান রনি’কে ধরে নিয়ে যায়। বাদী নিরুপায় হয়ে আসামীদের ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এতে আসামীরা অসন্তুষ্ট হয়ে বাদীনির পুত্র আশিকুর রহমান রনি’কে ৯৫ টি ইয়াবা দিয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দিয়ে চালান দেয়। যার রামু থানার মামলা নম্বর ৫৫/২০২০, যার-জিআর মামলা নম্বর- ৩০৮/২০২০ ইংরেজি। তারিখ-৩০/০৭/২০২০ ইংরেজি। ধারা : ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন আইনের ৫(২) তৎসহ দন্ড বিধির ১৪৩, ৩২৩, ৩৫৪, ৩৮৫, ৩৮৬, ৩৮০, ৪২৭ ও ৩৪।
মামলার বাদী সাবেক ইউপি সদস্য আরেফা বেগম জানিয়েছেন, ওইদিন রাতে হঠাৎ ভাংচুরের শব্দ শুনে বাড়ির সদস্যরা দেখতে পান মুখে মাস্ক ও সাদা পোষাক পরিহিত একদল লোক বাড়ির গ্রিল ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে বেপরোয়াভাবে ভাংচুর চালাচ্ছে। তারা প্রথমে ডাকাত ভেবেছিলেন। পেছনে স্থানীয় পরিষদের চোকিদার শামসুকে দেখে বুঝতে পারেন ভাংচুরকারিরা পুলিশের সদস্য। এসময় হামলাকারি রামু থানার এসআই জয়নাল আবেদিন, এসআই মংছাই মার্মা ও এএসআই একরাম সহ পুলিশ সদস্যরা তার কাছ থেকে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ছেলেকে ইয়াবার মামলায় ফাঁসানোর হুমকী দেন। তিনি তার ছেলে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত নয় মর্মে জানিয়ে টাকা দিতে অপারগতা জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা ফের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট শুরু করে। ভাংচুর চলাকালে বাড়িতে বেড়াতে আসা তার মেয়ে ও ছোট শিশুরা (নাতি) আতংকিত হয়ে পড়ে। পুলিশ সদস্যরা তাদের সাথে অশ্লীল আচরণ করে পুরো বাড়ির সব মালামাল ভাংচুর করে। লুটপাটও করে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল।
তিনি আরো জানান, পুলিশ সদস্যরা দীর্ঘ আধঘন্টা ধরে দা, কুড়াল, হ্যামার সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে ভাংচুরের কারণে পুরো বাড়িটি একটি ধ্বঃস স্তুপে পরিনত হয়। ভাংচুরকৃত মালামালের মধ্যে রয়েছে-মোটর সাইকেল, ২টি টিভি, ফ্রিজ, সোফা সেট, ২টি বক্স খাট, পিলার ও টিনের প্রবেশ গেইট, সেলাই মেশিন, সোকেস, ফাইল কেবিনেট, ৬টি চেয়ার, মাছের একোরিয়াম, টেবিল, গ্যাসের চুলা, ২টি তৈরী চুলা, ২টি দেয়াল ঘড়ি, বেসিন, ওয়াশিং মেশিন, ২টি আলনা, ২টি জগ, ডিনার সেট, ১৬টি গ্লাস, ২ ডজন চায়ের কাপ, প্লেট রাখার রেক, রান্না ঘরের আলমিরা, ২টি ড্রেসিং টেবিল, ২টি পড়ার টেবিল, ১৫টি ভাতের প্লেট, পানির পাম্প, পানির টেপ, ৩টি ওয়াল সিনারী, রান্না ঘরের টিনের ছাউনী, ২ জোড়া দরজা, ১ জোড়া জানালা, ১৪টি রান্নার ডেকসি, ৪টি পানির কলসি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি প্রভৃতি। এছাড়া চলে যাওয়ার সময় পুলিশ সদস্যরা বিদেশ থেকে জামাতার পাঠানো ৩টি মোবাইল ফোন সেট, ২টি টর্চ লাইট সহ বেশ কিছু মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ভাংচুর ও লুটপাটকৃত মালামালের তালিকা এবং পুলিশী তান্ডবের স্থিরচিত্র ফৌজদারি দরখাস্তের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ৩১ জুলাই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে শত শত এলাকাবাসী। ক্ষুব্দ এলাকাবাসী অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য ৯৫ পিচ ইয়াবা দিয়ে বর্ণিত ফৌজদারি দরখাস্তের আসামীরা বাদীর ছেলে আশিকুর রহমান রনিকে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল ফৌজদারি মিচ মামলা মূলে গত ১৮ আগস্ট জামিন দেন।
পাঠকের মতামত: