বাংলাদেশে আসা এমন ক’জন শরণার্থী জানিয়েছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও তাদের দোষর বৌদ্ধরা কীভাবে তাদের ওপর আমানবিক, লোমহর্ষক নির্মম নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে।
তারা ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারা চোখের সামনে নিজেদের পরিবারের সদস্যদের খুন করতে এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিতে দেখেছেন।
পালিয়ে একজন লালু বেগম বলেছেন, “যদি মিয়ানমার সেনা ১০ বছরের বেশি বয়সী কোনো ছেলেকে পায়, তাহলে তাকে হত্যা করে ফেলে। পুরুষদেরকেও সেনা সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়।”
তিনি আরো বলেন, “যখন সেনাবাহিনী আসতো তখন আমরা আমাদের ঘর থেকে পালিয়ে যেতাম। আমি জানি না, আমার স্বামী বেঁচে আছে না মরে গেছে।”
জাতিঘত নিধন
লালু বেগম বর্তমান বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় কক্সবাজার জেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আছেন।
তিনি বলেছেন, “রাখাইনে তার গ্রামের বহু নারীকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ধর্ষণ করেছে।”
“যখনই সেনা সদস্যরা কোনো সুন্দরী রোহিঙ্গা নারীকে দেখতে পায়, তখনই তার কাছে পানি পান করার কথা বলে ঘরে ঢুকে পড়ে তাদের ধর্ষণ করে।”- বলেছেন লালু।
রাখাইনে আনুমানিক ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করে। সেখানে তারা রাষ্ট্রহীন আদিবাসী সংখ্যালঘু হিসেবে নিপীড়িত হচ্ছে। রোহিঙ্গরা বহু প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে আসলেও দেশটির সরকার তাদের নাগরিকতার স্বীকৃতি না দিয়ে তাদের অবৈধ বাঙালি অভিবাসী বলে অপবাদ দিচ্ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ কার্যালয়ের কর্মকর্তা জন ম্যাককিসিক বলেছেন, “রোহিঙ্গারা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত মানুষ।”
তিনি বলেছেন, “এটি প্রতীয়মান যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগণকে জাতিগতভাবে নিধন করছে।” মৃত্যুর রাস্তা
কুতুপালংয়ে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বলেছেন, তারা মধ্যরাতে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। এরপর সেনাবাহিনীর চোখ এড়িয়ে পায়ে হেটে গ্রামের পর অতিক্রম করে নাফ নদী পেড়িয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।
লালু বেগম বলেন, “বাংলাদেশে আসতে আমার চারদিন লেগেছে। যখন আমাদের গ্রামের পুড়িয়ে দেয়া হলো, তখন আমরা আরেকটি গ্রামে আশ্রয় নেই এবং ক্রমাগত নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকি। এভাবে এক পর্যায়ে আমরা নাফ নদীর তীরে পৌঁছে যাই।”
“বিপজ্জনক এই যাত্রায় অনেকেই তাদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে ফেলেছেন।”
লালু বেগমের বোন নাসিমা খাতুন বলেন, যখন আমরা যাত্রা শুরু করি তখন আমাদের সঙ্গে ছয়জন ছিল। এরপর আমরা পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়ে ফেলি।
নাসিমা বলেন, আমার স্বামী ও ছেলে নিহত হয়েছে। আরেক ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন বলছে, শরণার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া এসব খবর এবং রাখাইনে সহিংসতা ও হতাহতের দৃশ্য সম্বলিত যেসব ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে তার সত্যতা তারা স্বাধীনভাবে খতিয়ে দেখতে পারেনি।
জাতিসংঘের মতে, রাখাইনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাটি অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে, যেখানে সংবাদমাধ্যম এবং দাতা সংস্থাগুলোকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তা জন ম্যাককিসিক বলেন, আমরা মিয়ানমার সরকারকে বলেছি রোহিঙ্গাদের এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দিতে, তাহলে আমরা হিসাব করতে পারতাম যে সেখানে আসলে কতজন মানুষ মারা গেছে।
তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি শরণার্থীরা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে জঙ্গলে, প্রধান সড়কে, গ্রামে এবং অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে, বলেন ম্যাককিসিক।
পুশব্যাকে রোহিঙ্গা অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে সীমান্তে পৌঁছতে পারলেও তাদের দুর্দশার অবসান হচ্ছে না।
শরণার্থীদের ব্যাপক ঢল নামায় তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দিতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার থেকে আসা কয়েক হাজার রোহিঙ্গা এরই মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে চলে এসেছে। বাংলাদেশ সরকার বলছে, আরও বেশ কয়েক হাজার রোহিঙ্গা সীমান্তে জড়ো হয়েছে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার গত বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত মিয়নামারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সেনা অভিযানের ফলে রাখাইনের অবনতিশীল পরিস্থিতির ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে।
মিয়ানমার সরকার রাখাইনে মানবাধিকার হরণের খবর অস্বীকার করেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের দাবি, গত ৯ অক্টোবর নয়জন সীমান্ত রক্ষীকে হামলার ঘটনায় নিকাশ অভিযানের মাধ্যমে সহিংস হামলাকারীদেরই টার্গেট করা হয়েছে।
সরকারি হিসাবে, অভিযানকালে এ পর্যন্ত একশ’ জন রোহিঙ্গা নিহত এবং প্রায় ছয়শ’ জন গ্রেফতার হয়েছে।
জন ম্যাককিসিক বলেন, উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের ভেতরে রোহিঙ্গারা আসলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, যার ফলে তাদের অসুবিধা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জাতিকে সম্মিলিতভাবে শাস্তি দিচ্ছে।
গ্রাম ধ্বংস
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্যাটেলাইট চিত্র থেকে তারা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের এক হাজার ২৫০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার হিসাব বের করেছে।
তবে মিয়ানমার সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি গ্রামের হামলাকারীরা আগুন দিয়েছে।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডাম বলেছেন, স্যাটেলাইটের উদ্বেগজনক চিত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সরকার যে সংখ্যক রোহিঙ্গা গ্রাম এবং বাড়ি ধ্বংস হওয়ার কথা স্বীকার করেছে প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়েও অনেক বেশি।
তিনি বলেন, দৃশ্যত পাঁচটি রোহিঙ্গা গ্রামে আগুন দেয়া হয়েছ যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মিয়ানমার সরকারকে এই ঘটনার তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিষয়ে চুপ থাকায় নোবেল বিজয়ী এবং গণতন্ত্রপন্থী ব্যক্তিত্ব অংসান সুচির সরকারকে সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে।
জাতিসংঘ কর্মকর্তা জন ম্যাককিসিকের মতে, পরিস্থিতির উপর সুচির প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণহীনতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। কিন্তু তারা এখন এমনটি করছে না। এতে প্রতীয়মান হয় যে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের সেনাবাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ নাই।
সিএনএন অংসান সুচির মন্তব্য জানতে বেশ কয়েকবার তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করেও কোনও সাড়া পায়নি।
পুশব্যাক না করতে আকুতি
লালু বেগম বলেন, মিয়ানমার সরকারের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা যে গ্রামে বসবাস করতাম সেখানে আর কোনও রোহিঙ্গা মুসলমান অবশিষ্ট নাই। সবাই নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে।
নাসিমা খাতুনসহ আরও অনেক শরণার্থীর পক্ষে মিয়ানমার ফিরে যাওয়া কোনও সহজ উপায় নয়। অন্ততপক্ষে সহিংসতা বন্ধ না হলে তাদের সেখানে ফেরার সুযোগও নাই।
নাসিমা বলেন, আমরা সেখানে সব সহায়সম্বল ছেড়ে এসেছি। জীবন বাঁচাতে আমরা সব ফেলে এসেছি। এখন আমরা কিভাবে ফিরে যাব? তারা তো আমাদের মেরে ফেলবে।
- চকরিয়ায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণরর মামলার অন্যতম আসামি ফারুককে গ্রেফতার করেছে র্যাব
- চকরিয়ায় মৎস্য অধিদপ্তরের উদোগে নৌযান মালিক ও সারেং দের নিয়ে কর্মশালা
- খুটাখালীতে শতাধিক পরিবারে শীতবস্ত্র বিতরণ
- জমজম হাসপাতালে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ডাক্তারের বক্তব্য
- চকরিয়ায় রেল স্টেশন মাস্টারকে ছুরিকাঘাত করেছে দুবৃর্ত্তরা
- চকরিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দুই দোকান পুড়ে ছাই,
- চকরিয়ায় মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলার গাড়ি চলাচল বন্ধে হাইওয়ে পুলিশের ক্যাম্পেইন
- চকরিয়ায় সংঘবদ্ধ কিশোরী ধর্ষণকাণ্ডে ৭ জন গ্রেফতার, ৩ জন জেলহাজতে
- নাইক্ষ্যংছড়িতে হতদরিদ্রদের মাঝে বিজিবির শীতবস্ত্র বিতরণ
- সঙ্গী হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত চকরিয়ায়
- কক্সবাজার প্রেসক্লাবকে বৈষম্য মুক্ত করতেই হবে
- চকরিয়ায় আ. লীগ নেতার গোয়ালঘর থেকে চোরাই গরু উদ্ধার
- জমজম হাসপাতালে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ডাক্তারের বক্তব্য
- চকরিয়ায় সংঘবদ্ধ কিশোরী ধর্ষণকাণ্ডে ৭ জন গ্রেফতার, ৩ জন জেলহাজতে
- রামুতে বিদ্যুৎ অফিসের দুর্নীতিবাজ আবাসিক প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরীর শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
- চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারী পার্কে হাতি শাবকের ঠাঁই হলো
- খুটাখালীতে শতাধিক পরিবারে শীতবস্ত্র বিতরণ
- চকরিয়ায় রাতের আধারে গরীব মানুষের ঘরের দরজায় গিয়ে শীতের কম্বল দিয়েছেন ইউএনও
- চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে বার্ষিক পুনর্মিলনী ও অভিষেক
- চকরিয়ায় মাটির টপ সয়েল কেটে বিক্রি : অভিযানে স্কেভেটর ও তিনটি ডাম্পার গাড়ি জব্দ
- সঙ্গী হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত চকরিয়ায়
- ফুলছড়িতে ৪৬ টুকরো গর্জন কাঠ ভর্তিগাড়ী জব্দ আটক-১
পাঠকের মতামত: