ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

মুরাদপুর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

সীতাকুণ্ডের মুরাদপুরে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দর (ইন্টারমিডিয়েট পোর্ট) নির্মাণের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। নেদারল্যান্ডসের একটি বিশেষজ্ঞ দলের মাধ্যমে বন্দর তৈরির জন্য এরই মধ্যে সার্ভেও শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। ভূমি অধিগ্রহণের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে। মুরাদপুর বন্দর চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমার পাশাপাশি মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড অর্থনৈতিক জোন পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বড় ধরনের সুবিধা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ক্রমবর্ধমান শিল্পায়নের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর পণ্য আমদানি-রপ্তানির চাপ দিন দিন বাড়ছে। তার ওপর মিরসরাই-সীতাকুণ্ডে অর্থনৈতিক জোনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। তাতে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর নির্ভরতা আরো বাড়বে। এ

অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা প্রবল। শুধু তাই নয়, বন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানির প্রয়োজনে সারা দেশের বিপুলসংখ্যক যানবাহন চট্টগ্রাম নগরে প্রবেশ করায় মহানগরী ও আশপাশের এলাকায় এখনই সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে। ফলে সার্বিক বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমানো ও দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে আরেকটি বন্দর স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। এ কারণে কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অবস্থান বিবেচনায় সীতাকুণ্ডে একটি সমুদ্রবন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।

২০১৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পোর্ট (মাঝারি আকারের সমুদ্রবন্দর) স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে কর্তৃপক্ষ নেদারল্যান্ডসের একটি বিশেষজ্ঞ দলের সাহায্য নিলে তারা সার্ভে করে জানায় যে সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর সাগর উপকূলে নাব্যতা আশ্চর্যজনকভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়েও বেশি। এখানে বন্দরটি স্থাপনের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। এর পরই ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরেজমিনে বন্দরের জন্য নির্ধারিত স্থান মুরাদপুর সাগরপার পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান বিএসপিএনডিপিএসসি রিয়ার অ্যাডমিরাল খালেদ ইকবাল।

পরিদর্শনের পর বন্দর কর্তৃপক্ষ ইন্টারমিডিয়েট পোর্ট নির্মাণের জন্য ওই এলাকায় ১২৯৯ দশমিক ৪৮ একর খাসজমি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বন্দোবস্ত দিতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে। সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘মুরাদপুরে ১২৯৯ দশমিক ৪৮ একর ভূমি বন্দোবস্ত দিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নির্দেশনা আসার পর আমরা সরেজমিনে তদন্ত করেছি এবং কোন জায়গা কী অবস্থায় আছে তা নির্ধারণ করেছি। শেষে মুরাদপুরের ভাটেরখীল, সৈয়দপুর ও বাকখালীর যে যে জায়গা ইন্টারমিডিয়েট পোর্ট নির্মাণের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া যেতে পারে তা উল্লেখ করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মুরাদপুরে বন্দর নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলায় একসময়ের অবহেলিত উপকূলীয় ওই এলাকায় জায়গা-জমির কদর বাড়ছে। মুরাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদ হোসেন নিজামী বাবু বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি যে এখানে আটটি জেটি নির্মাণ করা হবে। সয়েল টেস্টও হয়ে গেছে। এই উপকূল থেকে মহাসড়ক পর্যন্ত এলাকায় প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে। ফলে এখন এলাকার জায়গাজমির গুরুত্বও বাড়ছে। বন্দরটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে। পাশাপাশি সীতাকুণ্ড-মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চল পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বাড়তি সুবিধা পাবে।’ তিনি বলেন, এখানে বন্দর নির্মাণের জন্য আমি অনাপত্তি পত্র দিয়েছি। এ ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ দিদারুল আলম ও সাবেক ইউএনও নাজমুল ইসলাম ভূইয়াও প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।’

জানতে চাইলে দিদারুল আলম এমপি বলেন, বন্দরের সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে সার্ভে করিয়েছে। তারা এই বন্দরের নাব্যতা, আয়তন, জাহাজ ধারণ ক্ষমতা, পণ্য আমদানি-রপ্তানিগত সুযোগ-সুবিধার বিষয়েও কাজ করছে। তাদের কাজ সম্পন্ন হলে এটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। এমপি দিদারুল আলম আরো বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের আয়তন আড়াই হাজার একর। সীতাকুণ্ডে যে বন্দরটি করা হচ্ছে তার আয়তন এক হাজার ২০০ একরের মতো। বন্দরটি চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে এর ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। এ কারণে বন্দর স্থাপনের জন্য আমরা সবাই সার্বিক সহযোগিতা করছি।’

চট্টগ্রাম বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও মুরাদপুর বন্দর প্রকল্প পরিচালক রাফিউল আলম বলেন, ‘মুরাদপুরে বন্দরের সম্ভাবনা আছে বলেই আমরা চেষ্টা করছি। ভূমি বরাদ্দ পাওয়ার পর অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে এটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন হলেই শুরু হবে নির্মাণকাজ।’

পাঠকের মতামত: