ঢাকা,বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

মায়ের বিয়ের দেড়বছর আগে ছেলের জন্ম দেখিয়ে বিয়ে! চকরিয়ায় বাল্যবিয়ে ফারুক কাজীর বিরুদ্ধে মামলা

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::   কক্সবাজারের চকরিয়ায় টাকার বিনিময়ে মায়ের বিয়ের দেড়বছর আগে ছেলের জন্ম দেখিয়ে এক কিশোরকে জোরপুর্বক অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরী মেয়ের সঙ্গে বিয়ে পড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজি ওমর ফারুক জালিয়াতির মাধ্যমে ওই কিশোরকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছেন এমন অভিযোগ তুলে বুধবার চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা রুজু করেছেন আবুল কালাম নামের এক অভিভাবক। বাদি আবুল কালামের বাড়ি চকরিয়া পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্যারচর বাজারপাড়া গ্রামে।

মামলায় কাজি ওমর ফারুক ছাড়াও আরো চারজনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য অভিযুক্তরা হলেন চকরিয়া পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের জালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত মোজার আহমদের ছেলে নুরুল হোছন, তাঁর স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম, ছেলে আনোয়ার হোছন ও মোহাম্মদ আলীর ছেলে আবদুল মোনাফ। বাদির মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক তদন্তপুর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদিপক্ষের আইনজীবি মো.শহিদুল্লাহ চৌধুরী।

মামলার আর্জিতে বাদি আবুল কালাম বলেন, তিনি ১৯৯৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর স্ত্রী মর্জিনা আক্তারকে বিয়ে করেন। ২০০০ সালের ১১ মার্চ তাদের সংসারে জন্ম নেয় প্রথম ছেলে সন্তান সাজ্জাদ হোসেন। ২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে কৃতকার্য হয়ে চকরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেণীতে ভর্তি হন সাজ্জাদ। তাঁর বর্তমান বয়স ১৯বছর ছয়মাস।

বাদি আবুল কালাম অভিযোগ তুলেছেন, আসামিপক্ষের লোকজনের বাড়ি আমার গ্রামের পাশে। সেই সুবাদে প্রেমের সর্ম্পকের ভিত্তিহীন ঘটনা সাজিয়ে এক নম্বর আসামি নুরুল ইসলাম বিনা খরচে তাঁর অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সঙ্গে আমার কিশোর ছেলে সাজ্জাদ হোসেনকে বিয়ে দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।

এরই জেরধরে সর্বশেষ চলতিবছরের ৪ এপ্রিল মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অভিযুক্ত কাজী ওমর ফারুকের যোগসাজসে নিকাহ রেজিস্ট্রার সম্পাদনের মাধ্যমে অভিযুক্ত আসামিরা আমাদের পরিবারের অগোচরে আমার কিশোর ছেলে সাজ্জাদ হোসেনকে আটকিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায়ের পর জোরপুর্বক এক নম্বর আসামি নুরুল ইসলামের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন।

বাদি আবুল কালাম মামলার আর্জিতে দাবি করেন, ঘটনাটি জেরে তিনি বিয়ের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে যান কাজী ওমর ফারুকের কাছে। কিন্তু অভিযুক্ত কাজী আজ দেবো, কাল দেবো বলে তাকে প্রায় পাঁচমাস তাঁর অফিসে ধর্না দিতে বাধ্য করেছেন। পরবর্তীতে কাজী অফিস থেকে কাগজপত্র উত্তোলন করে দেখতে পান বিয়েতে ছেলের নামে দাখিল করা জন্মনিবন্ধন সনদে বড়ধরণের জালিয়াতির ঘটনা।

সাজ্জাদ হোসেন নামে দুইটি জন্ম নিবন্ধন সনদ চকরিয়া পৌরসভার জন্মনিবন্ধন শাখা থেকে ইস্যু করা হয়েছে। তদমধ্যে ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট ইস্যু করা আসল জন্ম নিবন্ধন সনদটি পৌরসভার অনলাইনে সংযুক্ত থাকলেও আসামিপক্ষের তৈরীকৃত ২০১৬ সালের ১৫ জুন তারিখে ইস্যু করা জন্মনিবন্ধন সনদটি নিয়ে পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

আদালতে দাখিল করা জন্মনিবন্ধন সনদে দেখা গেছে, বাদি আবুল কালাম ১৯৯৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর স্ত্রী মর্জিনা আক্তারকে বিয়ে করেছেন। ২০০০ সালের ১১ মার্চ তাদের সংসারে জন্ম নেয় প্রথম সন্তান সাজ্জাদ হোসেন। কিন্তু কাজী ওমর ফারুকের যোগসাজসে আসামিপক্ষের লোকজন বিয়ের সময় কিশোর সাজ্জাদ হোসেনকে প্রাপ্ত বয়স্ক দেখিয়ে দাখিল করা জন্মনিবন্ধন সনদে দেখা গেছে, মাতা মর্জিনা বেগমের বিয়ের অন্তত দেড়বছর আগে ছেলে সাজ্জাদ হোসেনের জন্ম হয়েছে। জালিয়াতির জন্ম সনদে কিশোর সাজ্জাদের জন্ম সাল দেখানো হয়েছে ১৯৯৮ সালের পহেলা মার্চ। অথচ তাঁর মায়ের বিয়ে হয়েছে ১৯৯৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর।

বাদিপক্ষের আইনজীবি চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের এপিপি মো.শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাদি আবুল কালামের দাখিল করা জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী তাঁর ছেলে সাজ্জাদ হোসেনের জন্ম ২০০০ সালের ১১ মার্চ। বাদি তাঁর স্ত্রী মর্জিনা আক্তারকে বিয়ে করেছেন ১৯৯৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ।

কিন্তু আসামিপক্ষের লোকজন বিয়েতে সাজ্জাদ হোসেনের যে জন্মনিবন্ধন সনদটি ব্যবহার করেছেন সেখানে তাঁর জন্ম সাল লেখা আছে ১৯৯৮ সালের পহেলা মার্চ। সেই হিসেবে মাতা মর্জিনা আক্তারকে বাবা আবুল কালাম বিয়ের অন্তত দেড়বছর আগে ছেলে সাজ্জাদ হোসেনের জন্ম হয়েছে।

তিনি বলেন, বাদির আর্জি মতে, জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতিতে আসামিপক্ষের লোকজনকে অভিযুক্ত কাজী ওমর ফারুক সহযোগিতা দিয়েছেন। কিন্তু যাছাই-বাছাই না করে

অপ্রাপ্ত কিশোর-কিশোরীকে বিয়ের পিঁিড়তে বসিয়ে অপরাধ করেছেন। আশাকরি আদালত বাদিপক্ষের অভিযোগটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনীভাবে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নেবেন। ##

পাঠকের মতামত: