ছালাম কাকলী (মহেশখালী) মাতারবাড়ী প্রতিনিধি :: মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিপুল ভোটে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ’র নি:শর্ত্বে মুক্তির দাবীতে আজ মঙ্গলবার বিকাল ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নাগরিক কমিটির উদ্যোগে দীর্ঘ মানবন্ধন করেছে। এ মানবন্ধনে হাজার হাজার নারী-পুরুষের সমাগম ঘটেছে। মানবন্ধনটি রাজঘাট থেকে পুরান বাজার পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে নিরবের সাথে নারী-পুরুষরা দাড়িয়ে থাকায় মানবন্ধন চলাকালে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
মানবন্ধনে অংশে নেয়া বক্তরা বলেন, চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ’র চির শত্রুররা চেয়ারম্যানের অতি কাছের লোক মাতারবাড়ী হংস মিয়াজি পাড়ার ফরিদুল আলমের পুত্র বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জিয়াবুলকে গত ১৫ আগষ্ট বিকালে প্রকাশ্যে কুঁপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় কতিপয় স্বার্থন্বেষী মহলের ইশারায় নিহতের স্ত্রী নয়ন মুক্তা বাদী হয়ে ১৮ আগষ্ট চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহকে প্রধান আসামী করে ২০ জনের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। উক্ত ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে চেয়ারম্যান সম্প্রতি নিন্ম আদালতে হাজির হয়ে জাবিনের প্রার্থনা করলে আদালত তার জাবিন না মন্জুর করে জেলে প্রেরণ করেন। তিনি জেলে যাওয়ার পর থেকে কিছু স্বার্থন্বেষীমহল এলাকায় একের পর এক আইনশৃখংলার বিঘœ ঘটাচ্ছে।
এতে সাধারণ জনগনের প্রাণ যায় যায় অবস্থা হয়েছে। এছাড়া ২টি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকরা তাদের টাকা উত্তোলন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করতে পারচ্ছে না। বক্তরা আরো বলেন, চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তারা স্বকৌশলে স্থানীয়দের চাকুরীচুৎ করে বহিরাগতদের নিয়োগ দিচ্ছেন। প্রকল্পের জন্য নির্মিত বিভিন্ন অবকাঠামো স্থানীয় ঠিকাদারদের না দিয়ে তাও বহিরাগতদের কাজ দিচ্ছে। অপরদিকে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে হারিয়ে দেয়ার জন্য জামায়াতের কিছু এজেন্ডা মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহকে জিয়াবুল হত্যা মামলায় আসামী করেছে। উক্ত হত্যা মামলা থেকে অচিরে চেয়ারম্যানের মুক্তি দাবী জানিয়েছেন। মানবন্ধনে অংশে নেয়া নারী-পুরুষ তথা মাতারবাড়ী বাসীকে প্যানেল চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের মাধ্যমে সালাম জানিেেছন এবং দোয়া করতে বলেছেন। চেয়ারম্যানের বিভিন্ন গুনাবলী তুলে ধরতে গিয়ে অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
বক্তরা নিজেরাই কাঁদলেন’ উপস্থিত নারী-পুরুষরাও কাঁদলেন। অনুষ্ঠিত মানবন্ধনে মাতারবাড়ী মজিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, সাবেক ইউপি সদস্য ও প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব বশির আহামদ, বিশিষ্ট চিংড়ি ও লবণ ব্যবসায়ী আওয়ামীলীগ নেতা কাউছার সিকদার, সাবেক যুবলীগ নেতা ও বিশিষ্ট ঠিকাদার আবদুচ ছাত্তার, ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও কৃতি ফুটবলার মুজিবুর রহমান, ছাত্রলীগ নেতা আল মুজিব উদ্দিন রিপন, ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্যা ছকুনতাজ, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সচিবও অত্র অঞ্চলের সন্তান মোহাম্মদ রশিদ, ছাত্র নেতা তারেকসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
এদিকে চেয়ারম্যানের মুক্তির দাবিতে মাতারবাড়ী কৃষকলীগের সভাপতি ও বিশিষ্ট ঠিকাদার আবু ছালেহ এবং ডা: শাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রায় ২ হাজার নারী-পুরুষ ব্যানারও পোষ্টার নিয়ে দীর্ঘ পথ হেটেঁ মগডেইল থেকে এসে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে মানব বন্ধনের অংশ নেন। সাবেক ইউপি সদস্য আলহাজ্ব বশির, প্যানেল চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ও আব্দু রউফ মেম্বারের নেতৃত্বে বিশাল একটি মিছিল এসে নতুন বাজারে গণ জমায়েত হয়। অন্যদিকে রিয়াজ উদ্দিন মেম্বারের নেতৃত্বে রাজঘাট থেকে বিশাল একটি মিছিল এসে আইডিয়াল স্কুলের সামনে গণ জমায়েত হয়। তা ছাড়া বিশিষ্ট ঠিকাদার আব্দু ছাত্তার, শানিক ও টিপু সার্বক্ষনিক মানব বন্ধনটি তদারকি কাজে লিপ্ত ছিলেন। মানবন্ধনে বক্তারা নি¤েœয় বক্তব্য মুহু মুহু তুলে ধরেন।
মইন্যার ঘোনা নিয়ে এ হত্যা কান্ড ঃ
মাতারবাড়ী মগডেইল বাজারের পূর্ব পাশে ২৩০ কানি জমি নিয়ে মইন্যার ঘোনা নামক একটি ঘোনা রয়েছে। ঐ ঘোনায় প্রায় ৩০ কানি জমি মাইজ পাড়ার বাসিন্দা মোস্তাক, শামসুল আলম, মাস্টার নুরুল ইসলাম ও বকসুসহ তাদের আত্মীয়- স্বজনদের। উক্ত ঘোনাটিসহ পার্শ্ববর্তী সূসন্না ঘোনার জমিনের মালিকদের হালসনের টাকা দিয়ে চিংড়ী প্রকল্প করে আসছিল হংসমিয়াজীর পাড়ার মরহুম ফরিদুল আলমের পুত্র চিংড়ী ও লবণ ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতা জিয়াবুল হক। এরই মধ্যে ৩ বছর পূর্বে শামসুল আলম গং এর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে, জিয়াবুলের কাছ থেকে মাস্টার নুরুল ইসলাম ও মোস্তাক হালসনের লাগিয়তের টাকা নিলেও শামসুল আলম ও তার ভাই বকসু ইজারাদার জিয়াবুলের কাছ থেকে হালসনের টাকা নিচ্ছে না। ফলে এ নিয়ে বিরোধের সুচনা ঘটে। সর্ব শেষ গত ২ বছর পূর্বে ঘোনার ইজারাদার জিয়াবুলের সাথে শামসুল আলম ও বকসু মধ্যে বাঁক বিতন্ডতা ঘটার কারণে উভয়ের মধ্যে ২টি গ্রুপ সৃষ্টি হয়। কিন্তু ২ বছর পূর্বে ঐ বিরোধপূর্ণ ঘোনায় লবন মাঠের পলথিন পাহারা দিচ্ছিল মাইজ পাড়ার শামসুল আলমের ভাইপোত ওয়াজ উদ্দিন, পার্শ্ববর্তী আত্মীয় আবু ছৈয়দের পুত্র মো: নাছির উদ্দিন ও সিরাজের পুত্র মোনাফ। ঐ দিন রাতে তৎকালীন মাতারবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের আইসি শাওন দাশের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ ঐ ৩জন কে রহস্য জনক ভাবে একটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। পুলিশ কে সহযোগীতা করেছিল বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ, হামেদ হোছাইন খোকা ও রিয়াজ উদ্দিন মেম্বার। গ্রেপ্তারের ঐ রাতে ক্রসফায়ের ঘটনাও ঘটে। এ সময় নাছির ও ওয়াজ উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়। দীর্ঘ দিন জেলে থাকার পর তারা জামিনে এসে বিভিন্ন ভাবে হাঁকা-বাঁকা করতে থাকে। এ ঘটনা নিরসনের জন্য শামসুল আলম তার স্ব-পক্ষের কাজগ পত্র নিয়ে মহেশখালী ও কুতুবদিয়া (কক্সবাজার-২) আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিকের স্বরাপন্ন হয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক নিরসনের জন্য ফোন করে জেলা পরিষদের সদস্য মাস্টার রুহুল আমিনের কাছে প্রেরণ করেন। মাস্টার রুহুল আমিন এ বিচার সম্পূর্ণ করার জন্য কয়েক দফা বৈঠকেও বসে। এরই ফাঁকে ২ পক্ষের মধ্যে টান-টান উত্তেজনা দেখা দিলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ ঘটনার ২ সপ্তাহ পূর্বে মাতারবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের আইসি এস.এম আমিনুর রহমান কে ইউনিয়ন পরিষদের ডেকে নিয়ে ২ পক্ষ কে শান্ত রাখার জন্য অনুরোধ করেন। চেয়ারম্যানের এ কথা শুনে মাতারবাড়ী পুলিশ দিন ও রাতে ঐ এলাকায় টহল জোরদার করেন। এরই ফাঁকে গত ১৫ আগষ্ট উশৃঙ্খল এক দল যুবক প্রকাশ্যে বাংলা বাজারস্থ ফরুক আহমদের বাড়ীর আঙ্গিনায় তাকে কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা দিন-দুপুরের কুপিয়ে হত্যা করে। তাকে হত্যা করার পর থেকে মাতারবাড়ীতে চলছে থমথমে ভাব।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদে রেজুলেশন
যারা জিয়াবুল কে হত্যা করেছে তারা বিভিন্ন ডাকাতি, চুরিসহ সমাজের বিভিন্ন অপরাধ কর্মে জড়িত থাকার দায়ে গত ১ বছর পূর্বে চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ নেতৃত্বে একটি রেজুলেশন করেছিল। রেজুলেশন করার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মহেশখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে রেজুলেশনের কপি প্রেরণ করেছিল। ঐ আসামীদের সাথে জিয়াবুল হত্যার ঘটনায় উক্ত চেয়ারম্যান কে আসামী করায় জন মনে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
চেয়ারম্যান কে আসামী করার কারণ?
মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের বিচার কার্য বেশী ভাগই নিহত যুবলীগ নেতা জিয়াবুলের ছোট ভাই ছরওয়ার মেম্বার কে দায়িত্ব অর্পন করতো। কারণ ছরওয়ার মেম্বার চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহর বিশস্থ একজন ইউপি সদস্য ও কাছে লোক ছিলেন। এ ছাড়া নিহত জিয়াবুলের পরিবার গেল নির্বাচনের সময় চেয়ারম্যান কে সার্বিক সহযোগীতা করেছিল। এ কারণে উক্ত পরিবার ছিল চেয়ারম্যানের কাছের লোক। অথচ যারা জিয়াবুল কে হত্যা করেছিল তারাই চেরম্যানের চির শত্রুু। কিন্তু ছরওয়ার মেম্বারের এলাকা মাইজ পাড়ার দানু নামের এক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে উত্তম-মধ্যম দিয়ে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা কে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান ও মেম্বার ছরওয়ারের মধ্যে বাঁক বিতন্ডতার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের মধ্যে দু’দফা ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকলেও এলাকা বাসীর হস্তক্ষেপে নিরসন হয়ে যায়। তবে ছরওয়ার মেম্বার রাগ- অভিমান করে ইউনিয়ন পরিষদ বর্জন করে। তা আদৌ বিদ্যমান। এলাকা বাসী ও সুশীল সমাজ মনে করেন চেয়ারম্যান কে এ ঘটনার জের ধরে চেয়ারম্যান কে আসামী করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: