নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে পাম্প (সেলো) মেশিন বসিয়ে দিব্যি চলছে বালু লুটের মহোৎসব। স্থানীয় প্রশাসনের ধারাবাহিক ভাবে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানোর পরও দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে এসব বালু লুটের প্রতিযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। ফলে বালু উত্তোলনের কারনে নদীর তীর সংলগ্ন এলাকার বিপুল পরিমাণ জনবসতি, আবাদি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে।এ অবস্থার ফলে চরম পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পরিবেশবাদী ও সচেতন মহল।
অভিযোগ উঠেছে,উপজেলার মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনে জড়িতরা ক্ষেত্র-বিশেষে ক্ষমতাসীনদের নাম ভাঙ্গিয়ে দিব্যি চালাচ্ছে রমরমা ব্যবসা। বর্তমানে নদীর তীর এলাকায় বালু খেকোদের কেউ কেউ মেশিন বসিয়ে আবার কেউ সরকারি খাস কিংবা ব্যক্তি মালিকনাধীন জমি দখল করে অব্যাহত রেখেছে বালু লুটের মহোৎসব।এ অবস্থার কারনে বালু উত্তোলন এলাকায় নদীর বাঁক পরিবর্তন হয়ে ভাঙ্গন সৃষ্টি হচ্ছে।এতে নদী গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলী জমি, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্টান, শিক্ষা ও ধর্মীয় উপসানালয়। ইতোমধ্যে নদীতে সহায় সম্পদ হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে পাহাড়ে কিংবা অন্যস্থানে।বালু উত্তোলন বন্ধ করার কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে নদীর তীর এলাকার মানুষের মাঝে নতুন করে বেড়েছে আতঙ্ক ।
জানা গেছে, মাতামুহুরী নদীর উজানে চকরিয়া উপজেলার বুমবিলছড়ি থেকে শুরু হয়ে নীচের পয়েন্টে সাহারবিল-রামপুর,বিএমচর,কোনাখালী এলাকায় নদীর বিভিন্ন স্থানে মেশিন বসিয়ে একাধিক চক্র বালু উত্তোলন কাজে জড়িত রয়েছে। এসব বালু প্রতিদিন শত শত ডাম্পার,মিনি ট্রাক যোগে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে।বিশেষ করে সাহারবিল ইউনিয়নের মাইজঘোনা,রামপুর, কাকারা-সুরাজপুর,পৌরসভার মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা সেতুর নীচে, তরছঘাট,পশ্চিম দিগরপানখালী, ফকিরাখীল,উত্তর ঘুনিয়া, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল,খিলছাদক,বরইতলীর পহরচাঁদাসহ একাধিক পয়েন্ট থেকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে বালু লুটচক্ররা অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন অব্যহত রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, নদী থেকে উত্তোলনকৃত বালু নিয়ে ডাম্পার,মিনিট্রাক গাড়ি গুলো গন্তব্যে যাওয়া-আসা করতে গিয়ে এলাকার বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।এতে সড়ক গুলো চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণ। অপরদিকে বালু বোঝাই গাড়ির বেপরোয়া চলাচল করার সময় নানা ধরণের হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।
এ নিয়ে চকরিয়া উপজেলা পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি প্রবীণ সিনিয়র সাংবাদিক এম.আর মাহমুদ বলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অধীনে চকরিয়া উপজেলায় অন্তত ১৩টি বৈধ বালু মহাল রয়েছে। এসব বালু মহাল প্রতিবছর সরকারিভাবে ইজারা দেয়া হয়। কিন্তু গেল কয়েকবছর ধরে মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে সরকারি ইজারা নেয়া বালু মহাল গুলোতে বেচাবিক্রি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি বলেন, মাতামুহুরী নদীর নাব্যতা সংকট নিরশনকল্পে অবশ্য বালু উত্তোলন করা যায়। তা করতে হবে নদীর মাঝ পয়েন্ট থেকে।তবে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনে জড়িতরা তা না করে বালু উত্তোলন করছেন নদীর তীর এলাকা থেকে।এরই ফলে নদীর তীর এলাকার মানুষ গুলি হারাচ্ছে তাদের বাপ-দাদার বসতভিটাসহ মূল্যবান সম্পদ।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে এক মাস পূর্বেই মাইকিংয়ের মাধ্যমে জানানো হয়।তা ছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করে বেশ কয়েকটা সেলো মেশিন ও পাইপ জব্ধ করা হয়েছে।বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে তিনি জানান।
পাঠকের মতামত: