এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ১৪ মার্চ ॥
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী পৌর সভায় মেয়র পদে হেভিওয়েট দুই আওয়ামী লীগ নেতা মর্যাদার লড়াইয়ে অবর্তীন হয়েছে। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তিন জন প্রার্থী থাকলেও এখানে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দুই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে। একজন হচ্ছে বর্তমান মেয়র আ’লীগ নেতা মকসুদ মিয়া ও অপর জন হচ্ছে সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার আজম। অবশ্য বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিস্কারও করা হয়েছে সরওয়ার আজমকে।
আগামী ২০ মার্চ দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী পৌরসভার ভোট গ্রহণ। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা ক্ষিণ বলেই জানিয়েছেন ভোটাররা।
কক্সবাজার নির্বাচন অফিস সূত্রে জানাগেছে, মহেশখালী পৌরসভার ভোটার সংখ্যা ১৭ হাজার ৯৪৫ জন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান মেয়র মকসুদ মিয়া, আওয়ামী লীগ ঘরানার বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মুহি উদ্দিন বাশি। কাউন্সিলার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৫ জন। আগামী ২০ মার্চ এই পৌরসভার ভোট গ্রহণ হবে।
মহেশখালী পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ও ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, বর্তমান মেয়ার ও সরকার দলের মনোনীত প্রার্থী মকসুদ মিয়া ও সাবেক মেয়র বিদ্রোহী প্রার্থী সরওয়ার আজম দুই জনই হেভিওয়েট প্রার্থী। গেল মেয়র নির্বাচনে সরওয়ার আজম আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিলেন মকসুদ মিয়া। তাকে আ’লীগ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। তার পরেও মকসুদ মিয়া মেয়র পদে নির্বাচিত হন। এবার হয়েছে ঠিক তার উল্টো। মকসুদ মিয়াকে সরকার নৌকা প্রতীক দিয়ে সমর্থ দিলে সরওয়ার আজম বিদ্রোহ করেই প্রার্থী হন। এরা দু’জন নির্বাচনে সক্রিয় থাকলেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বাশির কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। এখানে মকসুদ মিয়ার নৌকা ও সরওয়ার আজমের নারিকেল গাছের মধ্যে সরাসরি লড়াই হবে এমনটাই মনে করছেন সচেতন ভোটাররা।
সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র বর্তমান ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার প্রার্থী মহেশখালীর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রবীণ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক পূর্ণ চন্দ্র দে বলেন, মহেশখালী পৌরসভায় সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নৌকা প্রতীকের বিজয়ের আশা কম।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ছিলাম এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক। মেয়র নির্বাচনে কিছু আওয়ামী লীগ নেতা সুবিধা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে একটি রাজাকার পরিবারে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। যাকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী করা হয়েছে বর্তমান মেয়র (মকসুদ মিয়া) তার বাপ-চাচারা ছিল স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার। তৎকালীন পাকিস্তানী সেনাদের সাথে তাদের (মকসুদ মিয়ার পিতা মুহাম্মদ ও চাচা মৌলবী জাকরিয়া) আত্ম তৃপ্তির পোঁচ দেয়া ছবি এবং অপকর্মের সকল ডকুমেন্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁেছনি বলেই রাজাকার পরিবারের একজন সস্তানকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে।
এই সংখ্যালঘু নেতা আরো বলেন, ওই রাজাকাররা এখন থেকে ৪৫ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাঁেক হত্যার হুমকি দিয়েছিল। সেই হুমকি নাকি এখনো আসছে বলে তিনি জানান।
বিষয়টি এখন প্রধানমন্ত্রীর নজরে গেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগ নেতারা এখন কোনঠাঁসা। তারা কেউ এখন আর মকসুদ মিয়ার সাথে নেই।
তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন আওয়ামী লীগের প্রতীক ‘নৌকা’ রাজাকার পরিবারের সস্তানকে দিয়ে ‘নৌকা’র অবমাননা করা হয়েছে। শেষ মূহুর্তে মহেশখালী পৌর নির্বাচনে সরকারের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন তিনি।
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেন নির্বাচন করছেন এব্যাপারে জানতে চাইলে সরওয়ার আজম বলেন, মনোনয়ন আমারই পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমার উপর অবিচার করা হয়েছে। জনগন আমার পক্ষে রয়েছে। ইনশে আল্লাহ নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন পরিকল্পনাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাব।
মকসুদ মিয়ার তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ঠিক নয় বলে জানিয়ে বলেন, তিনি পৌসভায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। প্রতিপক্ষের কাছে তা অসহ্য। আবারো নির্বাচিত হলে তিনি মহেশখালী জেটি ঘাটের সম্প্রসারণ ও সংস্কার করবেন। মহেশখালী-চৌফলদন্ডী ফেরি চালু করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে নেবেন বলে আশার কথা জানান মকসুদ মিয়া।
মহেশখালী পৌরসভায় বিএনপির দুরাবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর ছিদ্দিক মনোনীত প্রার্থী ‘দুবর্ল নয়’ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘প্রার্থী নয়, ধানের শীষ প্রতীক দেখেই ভোট দেবেন সাধারণ মানুষ।’
——-
পাঠকের মতামত: