ছালাম কাকলী, মহেশখালী ::: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বেড়ে গেছে মহেশখালী-কুতুবদিয়া (কক্সবাজার-২) আসনের সম্ভাব্য সংসদ প্রার্থীদের দৌড়ঝাপ । বসে নেই কর্মী ও শুভাকাঙ্খিরাও । সম্ভাব্য সংসদ প্রার্থীরা এখন মাঠে ময়দানে গিয়ে ভোটার ও কর্মীদের খোঁজ খবর নিচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্ব-স্ব কর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি দলীয় অভ্যান্তরীণ কোন্দলও সমাধান করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মাঠ পর্যায়ে জরীপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মাঠ পর্যায়ে এখন কর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে বর্তমান আ’লীগ দলীয় সাংসদ আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক, ডক্টর আনছারুল করিম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা উসমান গণি উসমান , কক্সবাজার জেলা আ’লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, বি.এন.পি থেকে পর পর ২বার নির্বাচিত সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ ও জাতীয় পার্টি থেকে আলহাজ্ব মুহিব উল্লাহ। সাফ কথা মাঠ পর্যায়ের জরীপে দেখা গেছে বি.এন.পি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে আলমগীর ফরিদকে প্রার্থী দিলে সাংসদ নির্বাচিত হবে বলে লোকের মুখে মুখে। অপরদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্র নেতা উসমান গণি উসমানকে আ’লীগ নেতৃত্বাধীন জোট থেকে প্রার্থী দিলে ভাল অবস্থানে থাকবে বলে ভোটারদের ধারণা। কারণ তরুণ যুবকরা বেশির ভাগই এ নেতার সাথে বিভিন্ন মিটিং, সমাবেশ ও ইফতার মাহফিলে যোগদান করতে দেখা গেছে।
কক্সবাজারের ভৌগলিক মানচিত্র থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলাকে নিয়ে কক্সবাজার-২ আসন। এ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আলহাজ্ব আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ পর পর ২বার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে এ ২উপজেলার রাস্তাঘাটে আমুল পরিবর্তন এনেছিল। পরবর্তী নির্বাচনে ৪ দলীয় ঐক্যজোট থেকে জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আজাদ পাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে সাংসদ নির্বাচিত হয়। হামিদুর রহমান আজাদ সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর জামায়েতের নেতাকর্মীদের সাজাতে শুরু করে। পাশাপাশি বি.এন.পি কর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দন্ধ সৃষ্টির লক্ষ্যে কিছু কিছু কর্মীকে উক্ত সাংসদ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করায় সাবেক সাংসদ আলমগীর ফরিদের অতি আপন কর্মীদের বিভাজন করে ফেলে। যার ফলে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় বি.এন.পির মধ্যে গ্রুপিং হয়ে পড়েছে। তবুও সাবেক সংসদ আলহাজ্ব আলমগীর ফরিদের নেতৃত্বে বি.এন.পির নেতা কর্মীরা দেশনেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিভিন্ন বাণী নিয়ে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে চষে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে গত ৩ বছর ধরে সাবেক সংসদ আলহাজ্ব হামিদুর রহমান আযাদ গা ঢাকা দেয়ায় বি.এন.পির নেতৃত্বাধীন জোটের হাল ধরার মত কেউ না থাকায় এখন একমাত্রই আলহাজ্ব আলমগীর ফরিদের উপরই কর্মীরা ভর্ষা রেখে বিভিন্ন দলীয় প্রোগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে । সাফ কথা এ আসনে আলমগীর ফরিদের বিকল্প নেই বি.এন.পির নেতৃত্বাধীন জোটে। অন্যদিকে আ’লীগ দলীয় বতর্মান সাংসদ আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক বিভিন্ন মিটিং, সমাবেশ ও দলীয় কর্মীদের নিয়ে মাঠে ময়দানে থাকলেও বেশির ভাগই কর্মী তার আচরণে নাখোশ। কারণ টুঙ্গীপাড়া নামে খ্যাত কয়লা বিদ্যুতের জন্য মাতারবাড়ী থেকে অধি:গ্রহণ করা ২টি প্রকল্পের জায়গার কিছু কিছু মালিকদের বিরুদ্ধে পর পর ৪টি মামলা হয়েছে। এ মামলায় বেশি ভাগই আসামী হয়েছে আ’লীগের নেতাকর্মী। এমনকি মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ছমি উদ্দীন , উপজেলা আ’লীগ নেতা জেলা পরিষদের সদস্য মাষ্টার রুহুল আমিন, আ’লীগ নেতা জমির উদ্দীন সহ বিভিন্ন আ’লীগ কর্মিরা। এসব নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে চার্জসীটও হয়ে গেছে। এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য বর্তমান সাংসদ কোন উদ্যোগ না নেয়ায় এ ইউনিয়নের লোকজন বর্তমান সাংসদের উপর ক্ষুদ্ধ। এছাড়া মাতারবাড়ী থেকে জাইকা কর্তৃক জমি অধিগ্রহণ করার পর থেকে টিয়াকাটি নামক স্থানে বিশাল ভাঙ্গনটি খোলা রাখায় দীর্ঘ ২বছর ধরে মাতারবাড়ী বাসী বর্ষা মৌসুমে অবর্ণীয় দুর্ভোগে ছিল । যে দুর্ভোগের শেষ ছিল না। বর্ষা মৌসুমের আগে পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না করে জাইকা কর্তৃক বাঁধ দেয়ায় বৃষ্টির পানি এখন বের হতে পারছেনা। ফলে বর্ষা মৌসুমে পুরো মাতারবাড়ী এখন ডুবে আছে। পবিত্র রমজান মাসে এক ঘরের লোক অন্য ঘরে যাতায়াত করতে পারছেনা। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরাও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারছেনা। গেল বর্ষা মৌসুমে বর্তমান সাংসদ আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিকের আপনজন কুদ্দুস নামের এক ঠিকাদারকে দিয়ে ২৫ লাখ টাকার ব্যয়ে মাতারবাড়ী সড়কের ভাঙ্গন স্থানটি নির্মাণ করায় বর্তমান বর্ষা মৌসুমের শুরুতে কুহুলিয়া নদীর পানির ধাক্কায় নি¤œ মানের ঐ কাকজ ভেঙ্গে খান্ খান্ হয়ে গেছে। যার ফলে উক্ত সড়কটি নদীর লেভেল পয়েন্টে চলে যাওয়ায় বর্তমানে সেখানকার লোকজনকে নৌকাযোগে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অপরদিকে ধলঘাটায় প্রায় গেল শুষ্ক মৌসুমে ৭০ কোটি টাকার বাঁধও ব্লক নির্মাণের কাজ হয়েছিল। কিন্তু এসব কাজ বেস্তে গেছে। কারণ সুতরিয়া বাজারের পশ্চিমে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ কি.মি বেঁড়িবাধ নির্মাণের কাজ পেয়েছিল বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিকের অতি আপনজন এক ঠিকাদার । উক্ত ঠিকাদার ঐ কাজ না করায় বর্তমানে উক্ত ভাঙ্গন দিয়ে সাগরে জোয়ারে পানি ঢুকে পড়ছে ধলঘাটার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে। অন্যদিকে মহেশখালী উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে থেকে শাপলাপুর সাইটমারা মহিসুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা ভবণের জলছাদ নির্মাণের জন্য দেড় লাখ বরাদ্দ দেয়া হয়। উক্ত কাজটি পায় বর্তমান সাংসদের আপনজন এক লোক। উক্ত লোক ঐ জলছাদ অতি নি¤œ মানের করায় স্থানীয় লোকজন ঐ কাজ বন্ধ কয়ে দিয়েছে। এইভাবে বিভিন্ন কাজ সাংসদের আপনজন লোক দিয়ে করার কারণে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় এখন চলছে সমালোচনার ঝড়। বর্তমানে আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন প্রকৃত কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে পড়ে থাকা আ’লীগ কর্মীদের নিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচন ও দলকে গোছানোর জন্য খন্ড খন্ড মিটিং করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা উসমান গণি উসমান। এ নেতা গ্রামে-গঞ্জে গেলে তরুণ যুবকরা দলমত নির্বিশেষে উক্ত নেতার বিভিন্ন বাণী শুনতে অধিক আগ্রহ করে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। সাফ কথা মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় আ’লীগ সমর্থিত তরুণ যুবকদের মাঝে চলছে উক্ত নেতাকে নিয়ে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা। বি.এন.পি সমর্থিত জোটের সাথে আগামী সংসদ নির্বাচন করতে গেলে আ’লীগ থেকে উসমান গণির বিকল্প নেই । অপরদিকে কক্সবাজার জেলা আ’লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফার স্বভাবচরিত্র শান্তশিষ্টমানের একজন বড় মাপের লোক হলেও লোকজনের সাথে না মেশার কারণে তার নামটি মাঠ পর্যায়ে তেমন শুনা যাচ্ছে না। অন্যদিকে পরিবেশ বিজ্ঞানী ডক্টর আনছারুল করিম একজন বড় মাপের লোক হলেও গ্রাম-গঞ্জের লোকজন এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের সাথে যোগাযোগ না করায় আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বললে সাধারণ লোকজন তেলেবেগুনে ধিক্কা জানায়। সাফ (মুর্দ্দা) কথা মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, বি.এন.পির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে আলমগীর ফরিদ ও আ’লীগের নেতৃত্বাধীন জোট থেকে উসমান গণি উসমানকে প্রার্থী দিলে ২জনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাঠকের মতামত: