ঢাকা,বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

মহেশখালীর সংরক্ষিত বনে তেলের ডিপো করতে চায় “ইস্টার্ন রিফাইনারি”

আবদুর রাজ্জাক,মহেশখালী-ুুুুু

কক্সবাজার জেলার একমাত্র চারদিকে সাগর বেষ্টিত পাহাড় সমৃদ্ধ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ মহেশখালী দ্বীপের সংরক্ষিত বনের ১’শত ৯১ একর জমিতে অপরিশোধিত তেলের ডিপো (ট্যাংক ফার্ম) ও পাইপ লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান “ইস্টার্ন রিফাইনারি”। এ জন্য তারা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছে বনের ১’শত ৯১ একর জমি ইজারা চেয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বিদেশ থেকে সাগর পথে আমদানিকৃত অপরিশোধিত ক্রুড অয়েল খালাস করে সংরক্ষণের জন্য মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়ায় তেলের ডিপো (ট্যাংক ফার্ম) নিমার্ণ করে তা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে আনোয়ারায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এজন্যে তেলের ডিপো স্থাপনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ১’শত ৯১ একর বনভূমি ইজারা দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর কাছে একটি পত্র দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, আমদানি করা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও ডিজেল গভীর সমুদ্রবন্দরে অবস্থানরত জাহাজ থেকে চট্টগ্রামে অবস্থিত ইস্টার্ন রিফাইনারিতে নেওয়ার জন্য ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ওই প্রকল্পের জন্য মহেশখালীর ১’শত ৯১ একর ভূমির দরকার হবে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে জমি ইজারা পাওয়া গেলে যে কোন মুহুর্তে কাজ আরম্ভ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অপরদিকে সংরক্ষিত বনভূমি ইজারা দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে বন বিভাগ। বন বিভাগ বলছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে সংরক্ষিত বনের প্রায় ২৫ হাজার গাছ কাটা পড়বে। এতে দ্বীপটির ভূমিক্ষয়, মাটি ও পানিদূষণ এবং তেল নিঃসরণসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বন ও বন্য প্রাণীকুল। বন বিভাগের পক্ষ থেকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো এক চিঠিতেও এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।

জানা যায়, গত বছরের ১১ অক্টোবর বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়, ১৯৯৪ সালের বন নীতি অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনভূমি সরকার প্রধানের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ইজারা না দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এ ছাড়া কোনো বনভূমি ইজারা না দিতে উচ্চ আদালতেরও নির্দেশনা রয়েছে বলে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়।

মহেশখালীর সংরক্ষিত বনে তেলের ডিপো স্থাপন করা হলে বন ও পরিবেশের ক্ষতি হবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রফেসর আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনচারুল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, এ প্রকল্প সরকারের একটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জ্বালানি তেলের ঘাটতি কাটিয়ে পুরো দেশ উপকৃত হবে। মহেশখালী দ্বীপের রিজার্ভ ফরেস্টে যে বাগান রয়েছে তা প্রাকৃতিক বাগান নয়। সেটি বন বিভাগের সৃজিত বাগান। তেলের ডিপো স্থাপন করা হলে বাগানের যে পরিমাণ বাগান ক্ষতি হবে তা অতি নগণ্য। বন বিভাগ ইচ্ছা করলে অন্য জায়গায় সে পরিমাণ নতুন ভাবে বাগান সৃজিত করতে পারে। বনবিভাগের বিরোধিতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,বন বিভাগের বাধা দেওয়া গতানুগতিক। তিনি আরো বলেন, ভুমিদস্যুরা মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিমে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনির ৪ হাজার একর ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে তাতে ২০/২৫ টি চিংড়ি ঘের নির্মাণ করা হলে তাতে তো বন বিভাগ কার্যকরী ভাবে কোন বাধা দেয়নি বা তাদের উচ্ছেদ করেনি। এটিও তো একটি পরিবেশের ক্ষতির কারণ।

এ বিষয়ে মহেশখালীর রেঞ্জ অফিসার আনিসুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেলের ডিপো স্থাপনের জন্য ১৯১ একর জমি ইজারা চাওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এ পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের কাছে অফিসিয়ালি কোন চিঠিপত্র আসেনি।

পাঠকের মতামত: