মহেশখালী সংবাদদাতা :: মহেশখালীতে ছাত্রলীগের সঙ্গে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার মাতারবাড়ির প্রবেশমুখ দক্ষিণ রাজঘাট ব্রিজ এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে দুইপক্ষের অন্তত ১৬ নেতাকর্মী আহত হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি সিএনজি গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই দিন উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী সভার আয়োজন করে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ। এই সভায় অংশগ্রহণ করতে বিকালে উপজেলা ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মীর মাতারবাড়ি আগমনকে ঘিরে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাতারবাড়ি ব্রিজে গিয়ে আগে থেকে অবস্থান নেয়।
অপরদিকে একইদিন ছিল মাতারবাড়ির বাসিন্দা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রিয়াদ মোহাম্মদ আরাফাত হোছাইনসহ অন্যন্যা নেতাকর্মী কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ায় এলাকায় সংবর্ধনা দেয়। একই দিন দুই পক্ষের দুইটি প্রোগ্রাম নিয়ে আগেবাগে চলছিল টানটান উত্তোজনা।
উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ মাতারবাড়ি প্রবেশকালে ছাত্রদল, যুবদল,সেচ্ছাসেবকদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক চৌধুরী, কালারমারছড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক এখলাছুর রহমানসহ শত শত নেতাকর্মী স্লোগানে স্লোগানে মাতারবাড়ি রাজঘাট ব্রিজ অতিক্রমে মাতারবাড়ি ঢুকতে চাইলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি ও ছাত্রদলের মিছিলকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দুইপক্ষের মাঝে বাকবিতন্ডা হয়। পরে দুইপক্ষের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় সংঘর্ষ, ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া। একপক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে উভয় দলের আহত অন্তত ১৬ জন নেতাকর্মীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আহতরা হলেন- মাতারবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নিশাত রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক লাশেক মির্জা, মাতারবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়ান মো. আরাফাত, ২ নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি আলমাসসহ অন্তত ১০জন নেতাকর্মী। অপরপক্ষ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে আহতরা হলেন- উপজেলার বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক চৌধুরী, কালারমারছড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক এখলাছুর রহমান, ছাত্রদল নেতা আরমান, উপজেলা যুবদলের সদস্য মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক সালাহ উদ্দিনসহ ৬ জন নেতাকর্মী।
সংঘর্ষ চলাকালে ৫টি সিএনজিসহ বেশকয়েকটি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের কারণে রাজঘাট-নতুন বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠি চালিয়ে দুপক্ষকেই ছাত্রভঙ্গ করে দেন।
উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক রিয়াদ মোহাম্মদ আরাফাত জানান, পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা মিলে বিএনপিসহ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। হামলায় আমাদের বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিকসহ ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
মাতারবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়া জানান, আমরা যখন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাদের বরণ করতে রাজঘাট ব্রিজে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করি হঠাৎ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিকসহ এক দল ক্যাডার গাড়ি ভর্তি লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, এতে ৩ জন গুরুতরসহ ১৬ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক জসিম বিজয় বলেন, বিএনপি, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা রাজঘাট ব্রিজ এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। তারা এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে গাড়ি ভাংচুর করতে থাকেন। এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি অনুষ্ঠান পালন করতে অনুরোধ জানান । এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ বিষয়ে মাতারবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের এস আই ইমরান জানিয়েছেন, সংঘর্ষের তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দু পক্ষের লোকজনকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ।
পাঠকের মতামত: