সমকাল : খসে পড়তে পারেন জাতীয় পার্টির (জাপা) নয়জন এমপি। কারণ এলাকায় ভালো অবস্থান নেই তাদের। আসন্ন নির্বাচনে তাদের জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের মনোনয়নে দরকষাকষির চেয়ে বরং রংপুর বিভাগে আসন বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টাই ভালো বলে মনে করছে জাপা। এই নয় এমপির পরিবর্তে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার জন্যও মহাজোটের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চান জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
দলীয় সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের কাছে ৭৬ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন চেয়েছে জাপা। জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ৪২টি আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়ার। তবে ৩০-৩৫টির বেশি আসন পাবে না- এমন আভাস পেয়েছে জাপা। আওয়ামী লীগও বলছে, ৭০টির বেশি আসন ১৪ দল ও মহাজোটের শরিকদের ছাড়া হবে না।
তবে জাপার মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সমকালকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহানুভব মানুষ। জাপা আশাবাদী, প্রত্যাশিত সংখ্যক আসনই পাবে।’ বর্তমান এমপিদের মধ্যে কে বাদ পড়বেন, কে যুক্ত হবেন- সেসব এখনও নিশ্চিত নয় বলে দাবি করে তিনি বলেন, এসব নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২১টিসহ মোট ৩৪টি আসনে জিতেছিল জাপা। পরে আরেকটি আসনে উপনির্বাচনে জয়ী হয়। পিরোজপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র এমপি ডা. রুস্তম আলী ফরাজী জাপায় যোগ দেওয়ার পর এরশাদের দলের এমপি সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬।
জাপা সূত্র জানিয়েছে, দুর্বল আসনের এমপিরা মহাজোটের মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন। তারা হলেন- মোহাম্মদ ইলিয়াস (কক্সবাজার-১), মোহাম্মদ নোমান (লক্ষ্মীপুর-২), নুরুল ইসলাম মিলন (কুমিল্লা-৮), মোহাম্মদ আমির হোসেন (কুমিল্লা-২), আবদুল মুনিম চৌধুরী (হবিগঞ্জ-১), ইয়াহিয়া চৌধুরী (সিলেট-২), সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি (ময়মনসিংহ-৫), এমএ হান্নান (ময়মনসিংহ-৭) এবং মামুনুর রশিদ (জামালপুর-৪)। তবে জাপার নেতাদের কেউ এ বিষয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
জাপায় আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত কয়েকজন নেতা দলটির প্রার্থী তালিকা সমন্বয় করছেন। তাদের একজন সমকালকে জানিয়েছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগ এমন কিছু আসন ছেড়েছে, যেখানে জাপার ভোট নেই, সংগঠনও নেই। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এসব আসনের বর্তমান এমপি এ নির্বাচনে জিততে পারবেন না।
বাকি ২৭ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও মহাজোটের মনোনয়ন চায় জাপা। মনোনয়ন চায় নতুন আরও ১৫টি আসনে। এ আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে- রংপুর-২, রংপুর-৪, রংপুর-৫, গাইবান্ধা-২, গাইবান্ধা-৩, গাইবান্ধা-৪, লালমনিরহাট-১, লালমনিরহাট-২, লালমনিরহাট-৩, নীলফামারী-১, নীলফামারী-৩, বরিশাল-৩, ঢাকা-১৭, নারায়ণগঞ্জ-১, মৌলভীবাজার-২ এবং ফেনী-৩।
লালমনিরহাট-১ আসনে মেজর (অব.) খালেদ আকতার, লালমনিরহাট-৩ জিএম কাদের, গাইবান্ধা-৩ ব্যারিস্টার দিলারা চৌধুরী এবং ফেনী-৩ আসনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর মহাজোটের মনোনয়ন নিশ্চিত বলে জানিয়েছে জাপার সূত্র।
এ ছাড়া ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী দিলে জাপার দুই এমপি ঢাকা-৪ আসনের সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং ঢাকা-৬ আসনের কাজী ফিরোজ রশীদের মধ্যে যে কোনো একজন মহাজোটের মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন। ঢাকা-৪ আসনে জাপার নিজস্ব ভোট রয়েছে। কাজী ফিরোজ রশীদ জাতীয়ভাবে পরিচিত নেতা হলেও তার ঢাকা-৬ আসনে জাপার অবস্থান খুব দুর্বল।
এরশাদ নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচন করলে মহাজোটের মনোনয়ন হারাতে পারেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত জাপার এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। এ আসনেও জাপার অবস্থান দুর্বল। জাপার বর্তমান এমপি সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেতে পারেন। জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের সমকালকে বলেছেন, কে বাদ পড়বেন, কে মনোনয়ন পাবেন- নির্ধারণের এখতিয়ার এরশাদের। জয়ী হতে পারবে এমন আসনগুলোতেই নির্বাচন করবে জাপা। মনোনয়নও দেওয়া হবে জয়ী হতে পারবেন এমন প্রার্থীদেরই।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কক্সবাজার-১ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন জাপার মোহাম্মদ ইলিয়াস। ১৯৯০ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর ১৯৯৬ সালের জুন ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে জাপা ভোট পেয়েছিল এক হাজার ৮৩ ও এক হাজার ৩৯। দলীয় এমপি থাকার পরও কক্সবাজার-১ এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনের একটিতেও জিততে পারেনি জাপা। এ আসনে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চারটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়ী হয় বিএনপি।
একই অবস্থা লক্ষ্মীপুর-২ আসনে। এ আসনে নব্বই-পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে দেড় হাজারের বেশি ভোট পায়নি জাপার লাঙ্গল। কুমিল্লা-২ ও কুমিল্লা-৮ আসনে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় জাপা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছিল কুমিল্লা-৮ আসনে। বিএনপি ভোটে অংশ না নেওয়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি জাপাকে ছেড়ে দেয়। ২০০১ সালে এ আসনে দুই হাজারেরও কম ভোট পেয়েছিল লাঙ্গল।
ময়মনসিংহ-৭ আসনে জাপার নির্বাচনী ইতিহাস তেমন খারাপ না হলেও এ আসনের বর্তমান এমপি এমএ হান্নান একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারাগারে। তার মনোনয়ন না পাওয়া নিশ্চিত। ময়মনসিংহ-৫ আসনে জাপার অবস্থান দুর্বল। একই অবস্থা জামালপুর-৪ আসনেও।
পাঠকের মতামত: