কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে চলছে ‘কলাগাছ প্রতিবাদ’। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকারি দলের মনোনয়ন না পাওয়া নেতাদের সমর্থকরা ওই অভিনব প্রতিবাদ করছেন।
তাঁরা রাস্তায় নেমে আসেন কলাগাছ হাতে। বিক্ষোভ শেষে গাছগুলো রোপণ করে দেন রাস্তার ধারে। এ সময় তাঁরা ইয়াবা ও মানবপাচারকারীসহ জঙ্গিসম্পৃক্ত ব্যক্তি এবং ‘যুদ্ধাপরাধী পরিবারের’ সন্তানদের দেওয়া মনোনয়ন বাতিল করার দাবিও জানান।
জানা গেছে, আগামী ২২ মার্চ প্রথম দফায় কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার ১৯ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০ মার্চ হবে কক্সবাজারের চকরিয়া ও মহেশখালী পৌরসভার নির্বাচন। ইতোমধ্যে ১৯ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী মনোনয়ন শেষ হয়েছে। তবে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হতে যতসব ছোটাছুটি চোখে পড়ছে। বিএনপির সমর্থকরা রয়েছেন একদম চুপচাপ!
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার ছয় ইউনিয়নের মধ্যে তিন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়ন এবং মহেশখালী পৌরসভা ও চকরিয়া পৌরসভার মনোনয়ন নিয়েও।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি নুর হোসেনের সমর্থকরা গতকাল শনিবারও ‘কলাগাছ প্রতিবাদ’ করেছেন। তাঁরা এই ইউনিয়নে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর পরিবর্তন চান।
সাবরাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদ হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পরিবারের অনেক ত্যাগ রয়েছে। অথচ আমার ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগ সভাপতি নুর হোসেনকে ইয়াবা সম্পৃক্ততার মিথ্যা অভিযোগে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। কিন্তু বাহারছড়া ইউনিয়নে সরকারি তালিকাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারীকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলের পক্ষে বর্তমানে সাবরাং ইউনিয়নে সোনা আলী নামের যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাঁর সাথে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই।’
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে সাবেক দলীয় সংসদ সদস্য ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর ছেলে মাহবুব মোরশেদকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর সমর্থকরা ক্ষুব্ধ। তাঁরা গত দুদিন ধরে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের হ্নীলা বাসস্টেশনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন।
একই রকম ঘটনা ঘটেছে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নেও। বাহারছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাহার অভিযোগ করেন, ‘স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মৌলভি আজিজ উদ্দিন একজন তালিকাভুক্ত ইয়াবা ও মানবপাচারকারী। জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর পরও তাঁকে কেন চেয়ারম্যান পদে সরকারি দলের মনোনয়ন দেওয়া হল তা বলা মুশকিল!’
এদিকে চকরিয়া পৌরসভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর চৌধুরীকে মেয়র পদে দল মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ মনোনয়ন প্রত্যাশী শ্রমিক রাজনীতিক ফজলুল করিম সাঈদী। তিনি চকরিয়া পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। গত নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়ে পাঁচ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। সাঈদী মনোনয়ন না পাওয়ায় আওয়ামী লীগের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন। তাঁর সমর্থকরা কলাগাছ নিয়ে নেমে আসেন রাস্তায়। এখন চকরিয়া পৌর এলাকার রাস্তাঘাটে অনেক কলাগাছ প্রতিবাদের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
মহেশখালী পৌরসভায় মেয়র পদে সরকারি দলের মনোনয়ন পেয়েছেন ‘যুদ্ধাপরাধী পরিবারের’ সন্তান এবং যুদ্ধাপরাধী তালিকার ২২ নম্বর ব্যক্তি মরহুম হাসেম সিকদার ওরফে বড় মোহাম্মদের সন্তান মকসুদ মিয়া। তাঁর মনোনয়নে নির্যাতিত সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী লীগের একাংশ ক্ষুব্ধ। এছাড়া মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে জেলার প্রথম শহীদ পরিবারের সন্তান তারেক বিন শরীফকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে দেওয়া হয়েছে শহীদ পরিবারের সন্তান ওসমান চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামি সেলিম চৌধুরীকে। এতে আওয়ামী লীগের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়ে ‘কলাগাছ প্রতিবাদ’ চালিয়ে যাচ্ছেন।
কক্সবাজারে ‘কলাগাছ প্রতিবাদ’ প্রসঙ্গে স্থানীয় সিটি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আকতার চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০০১ সালে ঈদগাঁও থেকে এ রকম প্রতিবাদ শুরু হয়। কক্সবাজার সদর-রামু আসনে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. খালেকুজ্জামানের আকস্মিক মৃত্যু হয়। উপ-নির্বাচনে স্থানীয় তত্কালীন যুবদল নেতা লুত্ফুর রহমান কাজলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। সেই মনোনয়নের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে মরহুম খালেকুজ্জামানের ছোট ভাই মনোনয়নবঞ্চিত ইঞ্জিনিয়ার মো. সহিদুজ্জামানের ক্ষুব্ধ সমর্থকরা হাজার হাজার কলাগাছ হাতে বিক্ষোভ করেন। সেই কলাগাছ এখন প্রতিবাদের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
পাঠকের মতামত: