নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া ::
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০২১ কে সামনে রেখে মগনামায় লেগেছে নির্বাচনী হাওয়া। পেকুয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এক ডজনের অধিক নেতা। বর্তমান চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম তাঁর উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতবারের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টির ইউনুস চৌধুরীর পক্ষের প্রচারণাও লক্ষণীয়। অন্যান্য আগ্রহী প্রার্থীদের ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো ইউনিয়ন। অনেকে ব্যস্ত সময় পার করছে নিজের দলের মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে।
এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ার মতো। নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকাটাও বেশ লম্বা। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খাইরুল এনাম। সেবার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিমের কাছে হেরে যান তিনি।
আসন্ন ইউপি নির্বাচনেও তিনি নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানান। তাছাড়া উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি মোজাম্মেল হোছাইন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল, ইউনিয়ন আ.লীগের সহসভাপতি নাজেম উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা উপজেলা সভাপতি মো. নুরুল আমিন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মমতাজুল ইসলাম, সহসভাপতি খোরশেদুল আলম ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুলতান মো. রিপনসহ মোট সাতজন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী মোজাম্মেল হোছাইন চকরিয়া নিউজকে বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর মগনামার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে আছি। ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলাম।
পরের নির্বাচনে মগনামার মানুষের সমর্থন থাকার পরেও দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। আশা করবো দল এবার আমার বিষয়টি বিবেচনা করবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এ নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর আদলে অংশগ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক ফয়সল চৌধুরী।
তিনি বলেন, ”১৮ বছর ধরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে আছি। গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। আমরা জয়ও পেয়েছিলাম। গতবারের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী এবার দলের মনোনয়ন কিংবা সমর্থন পেতে আগ্রহী নয়। তাই আশাকরি আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন আমি পাবো বলে আশা করি।” ফয়সল চৌধুরী ছাড়া এ ইউনিয়নে মাঠে রয়েছেন যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম।
ইউনিয়ন যুবদল সভাপতির দায়িত্বে থাকা তৌহিদুল চকরিয়া নিউজকে বলেন, মগনামার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে দীর্ঘদিন কাজ করতেছি। সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট বোঝার চেষ্টা করেছি। মগনামার মানুষ আমাকে চাই। আসন্ন নির্বাচনের জন্য আমি প্রস্তুত। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবারের নির্বাচনে এই ইউনিয়নে প্রার্থী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। জাতীয় পার্টির পেকুয়া উপজেলা শাখার সভাপতি এম দিদারুল করিম বলেন, ‘গত ইউপি নির্বাচনে মগনামায় আমাদের প্রার্থী ছিলো ইউনুস চৌধুরী।
গত পাঁচ বছর সাংগঠনিকভাবে তিনি নিস্ক্রিয় ছিলেন। তাই পার্টির হাইকমান্ডের নেতারা এ ইউনিয়নে লাঙ্গল মার্কা অন্য কাউকে দেওয়ার আভাস দিয়েছেন।’ জাতীয় পার্টির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, মগনামা ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. আলমগীর এবারের নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করতে পারে। ২০১১ সালের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী জামাত নেতা শহীদুল মোস্তফাও এবারের নির্বাচনে অংশ নিবে বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। মগনামার বাসিন্দারা মনে করেন আসন্ন নির্বাচনে মগনামাবাসী এমন একজনকে বেচে নিবেন যার কাছে এলাকার নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
হামিদুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা চকরিয়া নিউজকে বলেন, হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি হচ্ছে আমাদের মগনামায়। যার কারনে সারাদেশ এই মগনামাকে চিনে। যা আমাদের জন্য গৌরবের। কিন্তু গত ৩-৪ বছর ধরে এই এলাকাটি একটি আতঙ্কের নাম। তাই আমরা চাইবো নিরাপদ মগনামা গড়তে পারে এমন একজন নেতৃত্বে আসুক।
এদিকে এলাকায় সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা উপজেলা শাখার সভাপতি মো. নুরুল আমিন ‘সবার জন্য নিরাপদ মগনামা’র ডাক দিয়েছেন। তিনি চকরিয়া নিউজকে বলেন শান্তি, সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করতে হবে। আর এজন্য তৈরি করতে হবে সুন্দর মানসিকতা। আশাকরি আগামী নির্বাচনে নির্বাচনে ভালো কিছু হবে।
মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম চকরিয়া নিউজকে বলেন, আমি যখন দায়িত্ব নিচ্ছিলাম তখন মগনামার অবকাঠামো ছিলো খুবই নাজুক। গত পাঁচ বছর চেষ্টা করেছি সমৃদ্ধ মগনামা গড়ার। উন্নয়নের পথে যা যা করার তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি। তিনি আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচনে মগনামাবাসীর খেদমতের জন্য আমার চেয়ে যোগ্য কেউ যদি প্রার্থী হয় তাহলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবো। তাঁর বিজয়ের জন্য সহযোগিতা করবো।
পাঠকের মতামত: